ইসমাইল আলী ও মাসুম বিল্লাহ: বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি থেকে বছরে গড়ে ৯ লাখ টন কয়লা উত্তোলন করা হয়। এটি আরও ছয় লাখ টন বৃদ্ধির জন্য উত্তর ও দক্ষিণ দিকে সম্প্রসারণ করা সম্ভব কি না, এতে কয়লা উত্তোলন কতটা বাড়বে, খনির আয়ুষ্কাল কেমন হবে প্রভৃতি বিষয় নিরূপণে সম্ভাব্যতা যাচাই শুরু হয়েছে গত অর্থবছর। তবে প্রকল্পটির অগ্রগতি হয়েছে মাত্র পাঁচ শতাংশ। এরই মধ্যে প্রায় ৭৯ শতাংশ বিল তুলে নিয়েছে দেশি-বিদেশি যৌথ উদ্যোগের ঠিকাদার।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীন বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। প্রকল্পটি পরিদর্শনশেষে সম্প্রতি তা চূড়ান্ত করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি উত্তর ও দক্ষিণ দিকে সম্প্রসারণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয় ২০১৫ সালের এপ্রিলে। এজন্য ‘ফিজিবিলিটি স্টাডি ফর এক্সটেনশন অব এক্সিস্টিং আন্ডারগ্রাউন্ড মাইনিং অপারেশন অব বড় পুকুরিয়া কোল মাইন টুওয়ার্ডস দ্য সাউদার্ন অ্যান্ড নর্দার্ন সাইড অব দ্য বেসিন উইদাউট ইন্টারাপশন অব দ্য প্রেজেন্ট প্রোডাকশন’ শীর্ষক প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৫ কোটি ৩১ লাখ টাকা। ২০১৭ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ করার কথা ছিল।
প্রকল্পটির জন্য পরামর্শক নিয়োগে দরপত্র আহ্বান করা হলে প্রাক্কলিত হারের চেয়ে অনেক বেশি দর জমা পড়ে। এতে দরপত্র বাতিল করে প্রকল্পটি সংশোধন করা হয়। তখন প্রকল্পটির ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৭৭ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। গত বছর জানুয়ারি মাসে এটি অনুমোদন করা হয়। সে সময় প্রকল্পের মেয়াদও এক বছর বাড়ানো হয়।
আমেরিকান জন টি. বয়েড কোম্পানি ও দেশীয় মজুমদার এন্টারপ্রাইজ যৌথভাবে ৬৮ কোটি ৩১ লাখ টাকায় কাজটি পায়। গত বছর ২ মার্চ শুরু সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ ১৮ মাসের মধ্যে শেষ করার কথা রয়েছে। এ যাচাইয়ের মধ্যে রয়েছেÑটপোগ্রাফিক সার্ভে, ৩-ডি সাইসমিক সার্ভে, ১৫টি বোরহোল ড্রিলিং, ইআইএ, ইএমপি, আরএপি, হাইড্রোজিওলজিক্যাল স্টাডি, জিওলজিক্যাল ও জিওফিজিক্যাল লগিং প্রভৃতি।
প্রকল্পটি গত ১১ নভেম্বর পরিদর্শন করে আইএমইডি প্রতিনিধিদল। এতে দেখা যায়, টপোগ্রাফিক সার্ভে সম্পন্ন হয়েছে। তবে সাড়ে চার কিলোমিটারের মধ্যে মাত্র তিন কিলোমিটার এলাকায় ৩-ডি সাইসমিক সার্ভে চলছে। আর বোরহোল ড্রিলিং সম্পন্ন হয়েছে মাত্র তিনটি। অন্যান্য কাজের অগ্রগতিও অনেক কম। এছাড়া বিভিন্ন কাজের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিও এখনও সংস্থান সম্পন্ন হয়নি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পটির বাস্তব অগ্রগতি মাত্র চার দশমিক ৯০ শতাংশ। তবে আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৭৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ। অর্থাৎ প্রকল্পটির বাস্তব অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়। জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ার আশঙ্কাও করা হয়েছে।
জানতে চাইলে আইএমইডির প্রতিবেদনের সঙ্গে একমত হননি বড়পুকুরিয়া সম্প্রসারণ সম্ভাব্যতা যাচাই প্রকল্পের পরিচালক এবিএম কামরুজ্জামান। তিনি শেয়ার বিজকে বলেন, আইএমইডির প্রতিবেদনটি দেখেছি, সেটা সেপ্টেম্বরের তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি করা। এরই মধ্যে চার মাস পেরিয়ে গেছে। এখন প্রকল্পটির বাস্তব কাজের অগ্রগতি বেশ ভালো। আইএমইডিকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানানোও হয়েছে।
এদিকে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে নিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। নির্ধারিত এলাকার বাইরে গিয়ে বোরহোল খনন করায় প্রকল্পের কাজ গত নভেম্বরে বন্ধ করে দেয় স্থানীয় জনগণ। তাদের মতে, ৩-ডি সাইসমিক সার্ভে পরিচালনার আগে সার্ভে এলাকার জনগণের সঙ্গে আলোচনা করে বর্তমান বাজারমূল্যের চেয়ে তিনগুণেরও বেশি শস্য ক্ষতিপূরণবাবদ এক হাজার চার কৃষককে মোট ১৩ লাখ ৫৫ হাজার টাকা প্রদান করা হয়। কিন্তু খনি এলাকার অনেক বাইরে অবস্থিত উত্তর ও দক্ষিণ দিকের কাজিপাড়া, চৌহাটি, হামিদপুর, মোবারকপুর, বৈগ্রাম, কাশিয়াডাঙ্গা, পাতিগ্রাম, পাঁচঘরিয়া, কালুপাড়া ও রসুলপুর গ্রামের শস্যও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এজন্য ওইসব গ্রামের জনগণকে কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি।
প্রকল্প পরিচালক এবিএম কামরুজ্জামান এ বিষয়ে বলেন, বড়পুকুরিয়া মূল কোল বেসিনের উত্তরাংশে দেড় বর্গকিলোমিটার ও দক্ষিণাংশে তিন বর্গকিলোমিটার সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এজন্য সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে। সে অনুপাতে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। তবে খনির উত্তর ও দক্ষিণ দিকের ১০টি গ্রামের কোনো স্থাপনার ক্ষতি না হলেও সেসব গ্রামের লোকজন ঘরবাড়ি ফাটলের জন্য কয়লাখনিকে দায়ী করে ক্ষতিপূরণ দাবি করছে। ক্ষতিপূরণ প্রদান করা না হলে ফিজিবিলিটি স্টাডির কোনো কার্যক্রম তারা পরিচালনা করতে দেবে না বলে হুমকি দেয়।