প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

অগ্রহায়ণ-পৌষের কৃষি

 

নবান্নের ম ম গন্ধ ও পিঠা-পায়েসের সমারোহে অগ্রহায়ণের আগমন। এ সময় কৃষকের কাজের অন্ত নেই। নতুন ধান ঘরে

তোলা, বোরোর জন্য বীজতলা ও জমি তৈরি, সবজি ক্ষেতের পরিচর্যাসহ নানা কাজে নিয়োজিত থাকতে হয় তাকে। পৌষ মাস থেকে বোরো লাগানো শুরু করা যায়।  এ দুই মাস কৃষককে খুবই ব্যস্ত থাকতে হয়

 

অগ্রহায়ণ

অগ্রহায়ণ মাসে আমন কাটার পাশাপাশি রবিশস্যের পরিচর্যাও করতে হয় কৃষককে। বোরোর জন্য বীজতলা ও জমি তৈরি, গমবীজ বপন এ মাসে কৃষকের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

আমন

আমন ধান কাটার ভরা মৌসুম। আমন কেটে স্তূপ করে না রেখে মাড়াই করে ফেলতে হবে। গরু দিয়ে মাড়াই না করে কাঠ বা ড্রামের ওপর ধানের আঁটি পিটিয়ে মাড়াই করা ভালো। ইদানীং প্যাডেন থ্রেসার দিয়ে মাড়াই কাজ অনেক জায়গায়ই দেখা যায়। যন্ত্রটির দাম কম, সহজে বহনযোগ্য ও কার্যক্ষমতাও ভালো। মাড়াই করা ধান ভালো করে শুকিয়ে পরিষ্কার করে গোলাজাত করতে হবে। বীজধানের ক্ষেত্রে ফুল আসার সময় এবং ধান কাটার আগে যে জাতের ধান লাগানো হয়েছে, তা থেকে ভিন্ন জাতের বিজাত তথা খাটো, লম্বা, আগে-পরে ফুল আসা ও রোগাক্রান্ত গাছ তুলে ফেলতে হবে। বীজের ক্ষেত্রে মাড়াই ঝাড়াই শুকানো সব কাজ আলাদাভাবে করতে হবে। বীজধান দাঁত দিয়ে কামড় দিলে কট শব্দ হয় এমনভাবে শুকিয়ে বায়ুবদ্ধ পাত্রে সংরক্ষণ করতে হবে।

বোরো

বোরো ধানের বীজতলা তৈরির উপযুক্ত সময় এখন। বীজতলা সাধারণত কম উর্বর জমিতে করা হয়ে থাকে এটা কখনও করা যাবে না। বরং উর্বর একটু উঁচু জমিতে প্রয়োজনমতো জৈবসার দিয়ে বীজতলা তৈরি করতে হবে। শীতে চারার বাড়ন্ত কমে গেলে ভোরে ভূগর্ভস্থ পানি দিয়ে প্লাবন সেচ দিলে চারার বৃদ্ধি ভালো হয়। জমিতে উর্বরতা ও চারার বাড়ন্ত অবস্থা অনুযায়ী সার ব্যবহার করতে হবে।

গম

এ মাসের প্রথম ১৫ দিনের মধ্যে গমবীজ বপন করতে পারলে ভালো হয়। এরপর প্রতিদিন বিলম্বের গমের ফলন হেক্টরে প্রতি পাঁচ কেজি কমে যেতে পারে। গম চাষের জন্য জমি উত্তমরূপে চাষ করে একরপ্রতি ৭০ কেজি ইউরিয়া, ৭০ কেজি টিএসপি ও ৫০ কেজি এমওপি সার নিয়মমাফিক প্রয়োগ করা যেতে পারে। ছত্রাকনাশক দিয়ে বীজ শোধন করে নিলে বীজ ও চারাগাছ রোগ-বালাইয়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা পায়। সেচসহ হেক্টরপ্রতি ১২০ কেজি এবং সেচ ছাড়া ১০০ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়।

আলু

এ মাসের প্রথম পক্ষের মধ্যে আলু লাগানো শেষ করতে হবে। উত্তমরূপে জমি প্রস্তুত করে সারি করে আলু লাগাতে হবে। প্রতি একর জমিতে ৬০০ কেজি বীজের প্রয়োজন হবে। প্রতি একরে ১২০ কেজি ইউরিয়া, ১২০ কেজি টিএসপি, ১৪০ কেজি এমওপি এবং ২৪০ কেজি খৈল সার দিতে হবে।

শীতকালীন সবজি

ইতোমধ্যে লাগানো ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, বেগুন, মুলা, লেটুস, শালগম, গাজর  গাছের আলাদাভাবে যতœ নিতে হবে। এসব সবজির বীজ ও চারা লাগানো এ মাসেও অব্যাহত থাকবে।

ডাল ও তেলবীজ

ইতোমধ্যে স্বল্পকালীন সরিষায় ফুল ধরা শুরু হয়েছে। সরিষা ক্ষেতে মৌবং ব্যবহার করলে ফলন বৃদ্ধি পাবে। মসুর, ছোলা, খেসারি, মটর ফসল মাঠে বাড়ন্ত অবস্থায় থাকে। এসব ফসলে খুব একটা পোকামাকড় আক্রমণ করে না। রোগবালাই দেখা দিলে প্রয়োজনীয় ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে। সয়াবিন ও বাদামের বীজ বপন এ সময় শুরু করতে হবে।

পৌষ

এ মাস থেকে বোরো ধান লাগানো শুরু হয়। চারা ওঠানোর ক্ষেত্রে লক্ষ রাখতে হবে যাতে শেকড় ছিঁড়ে না যায়। দু’একটি সুস্থ-সবল চারা লাইনে লাগাতে হবে। সব চারা না বাঁচলে শূন্যস্থান পূরণ করতে হবে। জমির উর্বরতার ওপর ভিত্তি করে পরিমাণমতো সার সুপারিশমাফিক প্রয়োগ করতে হবে।

গম

গমের বাড়ন্ত অবস্থায় ফুল আসার আগে একবার হালকা সেচ দিলে ফলন অনেক বেড়ে যায়। সাধারণত গমক্ষেতে পোকামাকড়ের আক্রমণ হয় না।

অন্যান্য ফসল

এ সময় বৃষ্টি হয় না বলে সবজি ও মশলা ফসলে প্রয়োজনীয় সেচ দিতে হবে। এ মাসেই পটোলের লতা লাগানো যেতে পারে।