প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

অনলাইন ব্যাংকিংয়ে সরকারি ব্যাংকগুলো পিছিয়ে কেন?

বাংলাদেশ এখন তথ্যপ্রযুক্তিতে এগিয়ে; এটি অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ব্যক্তি থেকে শুরু করে দেশের সব ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে। এত আধুনিকতার ছোঁয়া থাকলেও সরকারি ব্যাংকে অনলাইন ব্যাংকিং থেকে শুরু করে বিভিন্ন দফতরে প্রযুক্তির ছোঁয়া নেই। ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপ দেওয়ার জন্য এত কর্মসূচি নেওয়া হলেও কেন পিছিয়ে সরকারি দফতরগুলো? কেনই বা অনলাইন ব্যাংকিং সেক্টরে বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ে পিছিয়ে সরকারি ব্যাংকগুলো?

সম্প্রতি এক গবেষণায় উঠে এসেছে অনলাইন ব্যাংকিংয়ে সরকারি ব্যাংকগুলোর ব্যর্থতা। অনলাইন ব্যাংকিং লাভজনক হলেও সরকারি ব্যাংকের তুলনায় এগিয়ে রয়েছে বেসরকারি ব্যাংকগুলো। যার ব্যবধান আকাশ-পাতাল। বাংলাদেশ তথ্যপ্রযুক্তিতে এগিয়ে থাকা সত্ত্বেও অনেক খাত এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে। সেটি সরকারি দফতরগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায়। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক একটি ঐতিহ্যবাহী ও পুরোনো ব্যাংক। এ ব্যাংকের অগণিত গ্রাহক রয়েছেন গ্রাম-গঞ্জে। কিন্তু ব্যাংকটিতে অনলাইনভিত্তিক সেবা না থাকায় বেসরকারি ব্যাংকের এজেন্ট হয়ে কাজ করছে। তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ কর্মীর পেছনে এক টাকা ব্যয় করলে ব্যাংকের আয় বাড়ে ২৫ টাকা। এছাড়া অনলাইন ব্যাংকিংয়ের ফলে ‘কস্ট অব ফান্ড’ ছয় টাকা থেকে কমে দুই টাকা হয়েছে। কিন্তু অনলাইন ব্যাংকিংয়ে সরকারি ব্যাংকগুলোর অবস্থা হতাশাজনক। বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকের ব্যাপক উন্নতি হলেও পিছিয়ে রয়েছে সরকারিগুলো। অনলাইন ব্যাংকিংয়ে বেসরকারি ব্যাংকের এজেন্ট হয়ে সরকারি ব্যাংককে কাজ করতে দেখা যাচ্ছে। এটি হতাশাজনক।

সম্প্র্রতি প্রকাশিত বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) ‘ব্যাংকের ব্যবসা ও মুনাফা বৃদ্ধিতে আইসিটির প্রভাব’ শীর্ষক গবেষণাপত্রে বলা হয়, ‘প্রথাগত ব্যাংকিং মাধ্যমে এখন বছরে গড়ে ১৭০ কোটি বার লেনদেন হচ্ছে। আর আইসিটির কারণে অনলাইনে ২০০ কোটি বারের বেশি লেনদেন হচ্ছে। প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে ব্যাংক খাতের একজন কর্মী এখন বছরে গড়ে ১০ হাজার লেনদেন সম্পন্ন করছেন। ২০০০ সালের আগ পর্যন্ত ব্যাংকের একজন কর্মীর গড় লেনদেনের পরিমাণ ছিল পাঁচ হাজারের কম। অর্থাৎ প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে গত দেড় দশকে ব্যাংককর্মীদের কর্মদক্ষতা দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে।’ (সূত্র: দৈনিক আমাদের সময়, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৬)

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘১৯৯০ সালের পর থেকে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে ধীরে ধীরে আইসিটির ব্যবহার শুরু হয়। সে সময় ব্যাংকের একজন কর্মী গড়ে ৪১ কোটি টাকা লেনদেন করতেন। সেটি ২০১৫ সালে প্রায় চারগুণ বেড়ে ১৬০ কোটি টাকা হয়েছে। অর্থাৎ লেনদেন সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে একজন কর্মীর আর্থিক লেনদেনের দক্ষতাও এ সময় প্রায় চারগুণ বেড়েছে।’ কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যাংকের মুনাফাও বেড়েছে বলে গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। ১৯৯০ সালে বেসরকারি ও বিদেশি খাতের ব্যাংকগুলো মুনাফা করলেও সরকারি ব্যাংকের লোকসানের কারণে সামগ্রিক ব্যাংক খাত লোকসানের মধ্যে ছিল। সে অবস্থা থেকে ২০০০ সালে ব্যাংকিং খাতের গড় মুনাফা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৫৫ কোটি টাকা। এ মুনাফা ২০১৫ সালে সাড়ে আট হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। (সূত্র : দৈনিক যুগান্তর, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৬)

প্রশ্ন হচ্ছে, সরকারি ব্যাংকগুলো নিয়ে কেন এত হতাশা? আর কেনই বা বেসরকারি ব্যাংকের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সরকারি ব্যাংকগুলো সেবা দিতে পারছে না? এ থেকে উত্তরণের উপায় কী? ঢেলে সাজাতে হবে সরকারি অনলাইন ব্যাংকিং সেক্টর। সরকারের উচ্চপর্যায়ের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা

একটু মানসিকতার পরিবর্তন করলেই এ সমস্যা কেটে  যেতে পারে। তারা বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মতো নিজেদের প্রতিষ্ঠান মনে করে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করলে এ সমস্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব। খেয়াল রাখতে হবে, সরকারি ব্যাংক কর্মকর্তাদের আইসিটি

বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং নতুন করে

নিয়োগের ক্ষেত্রেও আইসিটিতে দক্ষ কর্মীদের অগ্রাধিকার দেওয়া দরকার।

যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ প্রযুক্তিতে এগিয়ে। ফলে ব্যাংকিং খাতে নতুন অনেক সেবা এসেছে, তাই কর্মদক্ষতাও বেড়েছে। সে অনুযায়ী সরকারি ব্যাংক অনেকটা পিছিয়ে। এ অবস্থায় প্রযুক্তি ব্যবহারে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালায় পরিবর্তন আনতে হবে। তা না হলে অনলাইন ব্যাংকিং সেক্টরে সরকারি ব্যাংক পিছিয়েই থাকবে।

 

শফিকুল ইসলাম খোকন

সাংবাদিক ও গবেষক

msi.khokonpÑgmail.com