শেয়ার বিজ ডেস্ক : ভারতের মুম্বাইয়ের পালি হিলের বিলাসবহুল আবাসন থেকে দিল্লির রিলায়েন্স সেন্টার পর্যন্ত বিস্তৃত দেশের অন্তত আটটি শহরে অনিল আম্বানির রিলায়েন্স গ্রুপের প্রায় ৩ হাজার ৮৪ কোটি রুপির সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। প্রিভেনশন অব মানি লন্ডারিং অ্যাক্টের অধীনে গত ৩১ অক্টোবর এই বাজেয়াপ্তের নির্দেশ জারি করা হয়।
দেশব্যাপী এই প্রিভেনশন অব মানি লন্ডারিং অ্যাক্টের (পিএমএলএ) অধীনে নেয়া পদক্ষেপের উদ্দেশ্য, সংস্থাটির অভিযোগ অনুযায়ী, জনগণের অর্থ বেআইনিভাবে ঘুরপথে সরিয়ে ফেলা ও লেনদেনের অনিয়মের সঙ্গে জড়িত সম্পত্তি উদ্ধার করা।
বাজেয়াপ্ত সম্পত্তিগুলো দিল্লি, নয়ডা, গাজিয়াবাদ, মুম্বাই, পুণে, থানে, হায়দরাবাদ, চেন্নাই ও অন্ধ্রপ্রদেশের পূর্ব গোদাবরীতে বিস্তৃত। এর মধ্যে রয়েছে আবাসিক ইউনিট, অফিস প্রাঙ্গণ এবং জমির প্লট।
রিলায়েন্স হোম ফাইন্যান্স লিমিটেড (আরএইচএফএল) ও রিলায়েন্স কমার্শিয়াল ফাইন্যান্স লিমিটেড (আরসিএফএল)-এর সংগৃহীত জনগণের অর্থ বেআইনিভাবে অন্যত্র সরিয়ে ফেলার অভিযোগে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ২০১৭ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে ইয়েস ব্যাংক আরএইচএফএল-এ ২ হাজার ৯৬৫ কোটি এবং আরসিএফএল-এ ২ হাজার ৪৫ কোটি রুপি বিনিয়োগ করেছিল। তবে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর নাগাদ এই বিনিয়োগগুলো খেলাপি হিসেবে পরিণত হয়।
তদন্তে উঠে এসেছে, রিলায়েন্স নিপ্পন মিউচুয়াল ফান্ডের মাধ্যমে সরাসরি অনিল আম্বানির আর্থিক সংস্থাগুলোতে বিনিয়োগ করা আইনগতভাবে সম্ভব ছিল না। সেবির বিধি অনুযায়ী, স্বার্থসংঘাত এড়িয়ে সরাসরি বিনিয়োগ করা যেত না। অভিযোগ, সাধারণ মানুষের মিউচুয়াল ফান্ড থেকে সংগৃহীত অর্থ ঘুরপথে ইয়েস ব্যাংকের মাধ্যমে আরএইচএফএল ও আরসিএফএল-এ প্রবাহিত করা হয়েছিল, যা শেষ পর্যন্ত অনিল আম্বানির কোম্পানিগুলোর কাছে যায়।
তদন্তে দেখা গেছে ঋণ বিতরণে গুরুতর অনিয়ম হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে আবেদন, মঞ্জুরি ও বিতরণ একই দিনে সম্পন্ন হয়েছে। কিছু ঋণ আবেদন জমা হওয়ার আগেই আগেই বিতরণ করা হয়েছে। নিরাপত্তা সংক্রান্ত নথি ফাঁকা বা তারিখবিহীন রাখা হয়েছে। অনেক ঋণগ্রহীতা ছিল আর্থিকভাবে দুর্বল বা কার্যক্রমে সীমিত।
এছাড়া, রিলায়েন্স কমিউনিকেশনস লিমিটেড (আরকম) ও সংশ্লিষ্ট কোম্পানির ঋণ জালিয়াতি মামলার তদন্তও জোরদার করা হয়েছে। প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ১৩ হাজার ৬০০ কোটি রুপির বেশি অর্থ ‘লোন এভারগ্রিনিং’ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সরিয়ে দেয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ১২ হাজার ৬০০ কোটি রুপিরও বেশি অর্থ সংযুক্ত পক্ষের কাছে গেছে, এবং ১ হাজার ৮০০ কোটি রুপি ফিক্সড ডিপোজিট ও মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করে পরে গ্রুপের কোম্পানিতে ফেরানো হয়েছে।
অপরাধমূলক সম্পত্তির সন্ধান ও বাজেয়াপ্ত কার্যক্রম চলমান থাকবে। সংস্থার দাবি, এই পদক্ষেপের লক্ষ্য জনসাধারণের স্বার্থ রক্ষা করা এবং বিনিয়োগকারীদের অর্থ সুরক্ষিত রাখা।
এস এস/
প্রিন্ট করুন






Discussion about this post