প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

অনিশ্চয়তায় ঢাকা রিজেন্সির আইপিও আবেদন

নিয়াজ মাহমুদ : পরিচালকদের বিরুদ্ধে উদ্যোক্তাদের মালিকানা থেকে বঞ্চিত করার অভিযোগ নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) মধ্যে চিঠি চালাচালিতে থমকে গেছে ঢাকা রিজেন্সি হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টের প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) অনুমোদন প্রক্রিয়া। বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে পুঁজিবাজারে আসতে রোড শো সম্পন্ন করা এ কোম্পানিটির বিরুদ্ধে অর্থ মন্ত্রণালয় কঠোর হচ্ছে বলে জানা গেছে।

উল্লেখ্য, গত অক্টোবরে পরিচালকদের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ এনে ঢাকা রিজেন্সি হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট লিমিটেডের আইপিও অনুমোদন প্রক্রিয়া বন্ধ রাখতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে আবেদন করেন লন্ডনের তিন প্রবাসী বিনিয়োগকারী। এ বিষয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যানকে ব্যবস্থা নিতে বলেন অর্থমন্ত্রী। এরপর চলতি মাসের ৬ ডিসেম্বর অভিযোগের বিষয়ে তিন দিনের মধ্যে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য কমিশনকে নির্দেশ দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জবাব না দিলেও সম্প্রতি চিঠির জবাব দিয়েছে কমিশন।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, লল্ডনপ্রবাসী কাজী ফয়সাল আহমেদ, কাজী কায়সার আহমেদ ও কাজী জুবেল আহমেদের অভিযোগ আমলে নিয়েছে মন্ত্রণালয়। অর্থমন্ত্রীও বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখছেন। তাই বিএসইসির কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। কিন্তু সংস্থাটির ব্যাখ্যায় মন্ত্রণালয় সন্তুষ্ট হতে পারেনি বলে জানা গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসইসির এক কর্মকর্তা শেয়ার বিজকে বলেন, ঢাকা রিজেন্সি হোটেলের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের চিঠির জবাব দেওয়া হয়েছে। সেখানে প্রবাসী উদ্যোক্তা বিনিয়োগকারীদের অভিযোগের কিছুটা সত্যতা পাওয়া গেছে। এখন এটা অর্থমন্ত্রী ও কমিশনের সিদ্ধান্তের বিষয়।

এ প্রসঙ্গে কথা হয় বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সাইফুর রহমানের সঙ্গে। তিনি শেয়ার বিজকে বলেন, ‘ঢাকা রিজেন্সির বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে একটা চিঠি আমরা পেয়েছি, যার জবাবও দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি আরও গভীরভাবে তদন্তের জন্য এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।’

গত ২৬ অক্টোবর অর্থমন্ত্রী বরাবর পাঠানো অভিযোগপত্রটির অনুলিপি একই সঙ্গে বিএসইসির চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন, লন্ডনের মেয়র সাদিক খান, হাউস অব কমন্স, ব্রিটিশ হাইকমিশন, লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে পাঠানো হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, কোম্পানির মালিকানার জটিলতা নিয়ে উচ্চ আদালতে একটি মামলা চলমান।

অর্থমন্ত্রী বরাবর পাঠানো অভিযোগপত্রে প্রবাসী বিনিয়োগকারীরা বলেন, ঢাকা রিজেন্সি হোটেলের সাবেক পরিচালক আরিফ মোতাহার, কবির রেজা (বর্তমানে ব্যবস্থাপনা পরিচালক) ও মুসলেহ উদ্দিন আহমেদ (বর্তমান চেয়ারম্যান) নামের তিনজন উদ্যোক্তা হোটেল প্রতিষ্ঠাকালে কোম্পানির পরিচালক নিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ব্রিটেনপ্রবাসী বেশ কয়েকজন বাংলাদেশির কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। শুরুতে তাদের পরিচালনা পর্ষদে রাখাও হয়। তাদের নামে বিজনেস কার্ড করে দেওয়া হয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে কৌশলে তাদের পর্ষদ থেকে বের করে দেওয়া হয়।

‘জরুরি ভিত্তিতে ঢাকা রিজেন্সি হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট লিমিটেডের আইপিও প্রক্রিয়া বন্ধ করা প্রসঙ্গে’ শীর্ষক পত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, কোম্পানিটির অন্য বিনিয়োগকারীদের মতো কাজী ফয়সাল আহমেদ, কাজী কায়সার আহমেদ ও কাজী জুবেল আহমেদের প্রায় আড়াই লাখ পাউন্ড বিনিয়োগ রয়েছে। তারা উদ্যোক্তাদের অনিয়ম ও প্রতারণার শিকার হয়ে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বলে দাবি করা হয়।

এর আগে বিনিয়োগকারীদের করা মামলায় জেল খাটেন ঢাকা রিজেন্সির বর্তমান চেয়ারম্যান মুসলেহ উদ্দিন আহমদ ও পরিচালক আরিফ মোতাহার।

প্রবাসীদের অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে ঢাকা রিজেন্সি হোটেলের কোম্পানি সচিব মিজানুর রহমান সিদ্দিকী শেয়ার বিজকে বলেন, ‘কোম্পানিতে ১২৪ জন শেয়ারহোল্ডার রয়েছেন। অভিযোগকারী তিনজনই আপন ভাই। নিয়ন্ত্রক সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী কোনো কোম্পানির পরিচালক পদ পেতে হলে ন্যূনতম ২ শতাংশ শেয়ার ধারণ বাধ্যতামূলক। তবে তাদের তিন ভাইয়ের মোট শেয়ার ২ শতাংশের কম হওয়ায় তারা পরিচালক হতে পারছেন না।’

অর্থমন্ত্রীকে দেওয়া চিঠি প্রসঙ্গে কোম্পানি সচিব বলেন, ‘অফিশিয়ালভাবে এখনও চিঠিটি আমাদের কাছে আসেনি। নিয়ন্ত্রক সংস্থা যদি পত্রটি আমাদের দিয়ে জবাব চায়, তাহলে আমরা জবাব দেবো।’

তিনি আরও বলেন, ‘একজন শেয়ারহোল্ডার হিসেবে কোম্পানির লভ্যাংশ তারা পাচ্ছেন। একই সঙ্গে এজিএমে অংশ নেওয়ার সুযোগ তাদের রয়েছে। এর আগেও তারা অভিযোগ করেছিল, তার ভিত্তিতে দুদক তদন্তও করেছিল। কিন্তু বিষয়টির সত্যতা মেলেনি’ বলে দাবি করেন তিনি।

ঢাকা রিজেন্সি হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট লিমিটেড মূলত হোটেল ও রিসোর্ট ব্যবসা করে। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকদের উন্নত মানের রুমসেবা, রেস্টুরেন্ট সেবা, কনফারেন্স ও ইভেন্টসেবা দেয় বলে জানান কোম্পানি সচিব।

জানা গেছে, ভ্রমণ ও অবকাশ খাতের এ কোম্পানিটি বুক বিল্ডিং প্রক্রিয়ায় আইপিওর মাধ্যমে মোট ৬০ কোটি টাকার মূলধন সংগ্রহ করবে। আর এ জন্য চলতি বছরের এপ্রিলে রোড শো করেছে ঢাকা রিজেন্সি। কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে আনতে ইস্যু ম্যানেজার রয়েছে যৌথভাবে লংকাবাংলা ইনভেস্টমেন্ট ও বাংকো ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট। আর রেজিস্ট্রার টু দ্য ইস্যু হিসেবে রয়েছে আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট।

বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে হোটেলটি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে আইপিওর ৬০ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করবে। আইপিওতে উত্তোলিত অর্থ থেকে ২০ কোটি টাকা ব্যয় হবে ঋণ পরিশোধে। কোম্পানির বিদ্যমান পণ্য ও সেবার আধুনিকীকরণে ব্যয় করা হবে ১০ কোটি টাকা। কক্সবাজারে হোটেল নির্মাণে ব্যয় করা হবে ২৭ কোটি টাকা। আর আইপিও বাবদ খরচ করা হবে তিন কোটি টাকা।

কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৬০ কোটি টাকা। ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫ সমাপ্ত অর্থবছরে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে দুই টাকা ৪২ পয়সা। তবে আগের বছর ইপিএস ছিল তিন টাকা ১১ পয়সা। আলোচিত বছরে কর-পরবর্তী মুনাফা ছিল ১৪ কোটি ৫১ লাখ ৯০ হাজার ২৫৬ টাকা, যা এর আগের বছরে ছিল ১৮ কোটি ৬৫ লাখ ৭৬ হাজার ৯০৪ টাকা। ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য (এনএভি) ছিল ৩১ টাকা ৩৫ পয়সা।