প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

অন্তর্ভুক্তিমূলক আর্থিক সেবা নিশ্চিতে পদক্ষেপ নিন

বর্তমান সময়ে মোবাইল ব্যাংকিং বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কয়েক বছর আগেও যেকোনো ব্যাংকিং সেবা নেয়ার জন্য গ্রাহকদের সরাসরি ব্যাংকে যেতে হতো। কিন্তু ইন্টারনেটের মাধ্যমে এর গ্রাহক ও সেবাগ্রহীতা ঘরে বসেই সেবা নিতে পারছেন।

মোবাইল ব্যাংকিংয়ে এখন দৈনিক লেনদেন ক্রমেই বাড়ছে। প্রতিদিনই মোবাইল ব্যাংকিংয়ে গ্রাহক বাড়ছে, বাড়ছে লেনদেনের পরিমাণ। এটি গ্রামীণ অর্থনীতিতে গতি এনেছে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় সরকারি বিভিন্ন সুবিধা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে দ্রুত ও সরাসরি পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিংই বড় ভূমিকা রাখছে। নাগরিক জীবনেও বাস-ট্রেনের টিকিট কাটা থেকে শুরু করে পাড়ার দোকানে কেনাকাটা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের টিউশন ফি পরিশোধসহ বিভিন্ন আর্থিক লেনদেনের নানা ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার সুফল পাচ্ছে সবাই।

ব্যাংকিং সেবার আওতার বাইরে থাকা দেশের বিপুল জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনার লক্ষ্যে মোবাইল আর্থিক সেবা বা এমএফএস চালু করা হয়েছিল। মহামারি কভিড শুরু হওয়ার মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গুরুত্ব স্পষ্ট হয়েছে। লকডাউন চলাকালে যখন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড একপ্রকার স্থবির হয়ে পড়েছে, তখন মোবাইল ব্যাংকিংই ছিল ভরসা।

মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকউন্ট এখন যে কেউ খুলতে পারেন। ডিজিটাল কেওয়াইসি দিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলতে লাগে মাত্র ১০ সেকেন্ড। আছে সেন্ড মানি টু অ্যানি ফোন (এসএমটিপি) সেবা। যার অ্যাকাউন্ট নেই, তার মোবাইল নম্বরেও টাকা পাঠানো সম্ভব। পরে তিনি অ্যাকাউন্ট খুলে টাকা তুলে নিতে পারবেন। এখন মোবাইল ব্যাংকিং এতই সহজ হয়ে গেছে, প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষক, জেলে, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ঘরে বসেই অ্যাকাউন্টের ব্যালান্স চেক, টাকা ট্রান্সফার, কেনাকাটা প্রভৃতি অনায়াসেই করেন।

দেশকে এগিয়ে নিতে মোবাইল ব্যাংকিং অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। এটিকে উপেক্ষা করে যুগের সঙ্গে তাল মেলানোর কোনো সুযোগ নেই। মঙ্গলবার ‘বাংলাদেশে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি: প্রয়োজনীয়তা ও চর্চা’ শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) গবেষকরা বলেছেন ভিন্ন কথা। তারা বলেছেন, সেবাপদ্ধতি সহজ না হওয়ায় অনেক সম্ভাবনা থাকার পরও খাতটি এগোচ্ছে না।

আমাদের মনে আছে, মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান বিকাশ ২০১০ সালে প্রান্তিক মানুষকে অন্তর্ভুক্তিমূলক আর্থিক সেবার আওতায় নিয়ে আসতে শুরু করে। বর্তমানে দেশে ১৬টি এমএফএস প্রতিষ্ঠান ১০ কোটির বেশি মানুষকে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে। পিআরআই’র গবেষকরা বলছেন, সরকারি সহায়তা পেলে দেশের শতভাগ মানুষকে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক আর্থিক সেবার আওতায় আনা সম্ভব।

আর্থিক অন্তর্ভুক্তি না থাকায় কভিডকালে প্রধানমন্ত্রী ৫০ লাখ মানুষকে নগদ সহায়তা দিতে চেয়ে তা পুরোপুরি পারেননি। সরকারি তথ্যভাণ্ডারের দুর্বলতায় টার্গেট গ্রুপকে এই সেবার মধ্যে আনা যায়নি।

এমএফএস কতটা জরুরি, তা বোঝার জন্য একটি দৃষ্টান্ত যথেষ্ট। অতি সম্প্রতি সিটি ব্যাংকের সহায়তায় ক্ষুদ্রঋণ চালু করেছে বিকাশ। বিনা জামানতে ঘরে বসেই ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ পেতে পারেন ক্ষদ্র ব্যবসায়ী। এ উদ্যোগ সফল হলে সাধারণ মানুষ এনজিও কিংবা মহাজনদের উচ্চহারের ঋণ থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে। তাই এমএফএস সেবাকে দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে সরকার এগিয়ে আসবে বলে আমরা আশা করি।