নুরুন্নাহার চৌধুরী কলি : গত বছরের ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনে (বাজুস) বড় পরিবর্তন ঘটেছে।
সদস্য ও ব্যবসায়ীদের প্রতিবাদসহ নানা চাপের মুখে সংগঠনটির নতুন নির্বাহী কমিটি, সাংগঠনিক কাঠামোয় রদবদল এবং অফিসে পরিবর্তনসহ একাধিক উদ্যোগ ইতোমধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে।
বাজুসের আগের বিলাসবহুল অফিস ছিল রাজধানীর পান্থপথের বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সের লেভেল-১৯ এ। কিন্তু গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর রাজধানীর নিউ ইস্কাটন রোডে বাজুসের কার্যালয় স্থানান্তর করা হয়।
এর মধ্যে ২০২৫-২৭ মেয়াদে সংগঠনের নতুন নেতৃত্ব ঘোষণা করা হয়েছে। ডায়মন্ড অ্যান্ড ডিভাসের মালিক এনামুল হক খান দোলন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। নতুন নির্বাহী কমিটিতে রয়েছেন ৩৫ সদস্য। সবচেয়ে আলোচিত পরিবর্তনটি হলোÑবাজুসের সাংগঠনিক কাঠামো থেকে প্রথমবারের মতো সাধারণ সম্পাদক পদ বাতিল করা হয়েছে। সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কার্যক্রমকে আরও বিকেন্দ্রীভূত ও জবাবদিহিমূলক করার জন্যই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
গতকাল সোমবার বাজুসের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সংগঠনটির ২০২৫-২৬ এবং ২০২৬-২৭ মেয়াদের নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হয়। বাজুস নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যান নাসরিন ফাতেমা আউয়াল ফলাফল ঘোষণা করেন।
সংগঠনটির সিনিয়র সহসভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন সানন্দা জুয়েলার্সের (প্রা.) রনজিৎ ঘোষ, সহসভাপতি পদে আপন ডায়মন্ড হাউসের আজাদ আহমেদ, জড়োয়া হাউস (প্রা.) লিমিটেডের অভি রায় এবং জেসিএক্স গোল্ড অ্যান্ড ডায়মন্ডের ইকবাল হোসেন চৌধুরী নির্বাচিত হয়েছেন। কোষাধ্যক্ষ পদে নির্বাচিত হয়েছেন নিউ ফেন্সী জুয়েলার্সের অমিত ঘোষ।
পরিচালক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেনÑমো. মিলন মিয়া, পবন কুমার আগরওয়ালা, তানভীর রহমান, মো. লিটন হাওলাদার, বাবুল দত্ত, গণেশ দেবনাথ, আশিস কুমার মণ্ডল, মিনাজুর রহমান, বিকাশ ঘোষ, সুমন চন্দ্র দে, মোস্তাফা কামাল, ধনঞ্জয় সাহা (বিপুল), শ্রীবাস রায়, মো. আলী হোসেন, মো. রুবেল, মো. নয়ন চৌধুরী, মো. ছালাম, ফাহাদ কামাল লিংকন, গৌতম ঘোষ, মোহাম্মদ রবিউল ইসলাম, মো. তারেকুল ইসলাম চৌধুরী, আবু নাসের মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, মো. রফিকুল ইসলাম, সৌমেন সাহা, আককাছ আলী, মোহাম্মদ মোরশেদ আলম, শাওন আহাম্মদ চৌধুরী, মো. নাজমুল হুদা লতিফ এবং পলাশ কুমার সাহা।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বৈধ প্রার্থীদের মধ্য থেকে কোনো প্রার্থী তাদের মনোনয়পত্র প্রত্যাহার না করায় বাণিজ্য সংগঠনের বিধিমালা ২০২৫-এর ২৪(১) ধারা মোতাবেক বৈধ প্রার্থীর সংখ্যা নির্বাচযোগ্য পদের সমান হওয়ায় ৩৫ প্রার্থীকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে বাজুসের সহসভাপতি মো. রিপনুল হাসানকে একটি মামলায় গ্রেপ্তার করার পর সংগঠনটি সারাদেশের সব জুয়েলারি দোকান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়। তবে স্বল্প সময়ের মধ্যেই তা প্রত্যাহার করে এবং কার্যক্রম সচল রাখার সিদ্ধান্ত নেয় নেতৃত্ব। ওই ঘোষণা এবং ক্ষেত্রবিশেষে প্রত্যাহারÑদুই ঘটনাই ব্যবসায়ীদের মধ্যে আলোচনার জš§ দেয়। ফলে নেতৃত্ব ও নীতিগত অবস্থানে এক ধরনের পরীক্ষার মুখে পড়ে সংগঠনটি।
এই সময়ের মধ্যেই বাজুস তাদের অফিস পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেয়। আগের কার্যালয়ের পরিবর্তে নতুন অফিস স্থাপন করা হয়েছে ঢাকার নিউ ইস্কাটন রোডে। সংগঠনের একাধিক সদস্য বলছেন, এটি একটি প্রয়োজনীয় ও প্রতীকী পদক্ষেপ, যা বোঝায় বাজুস একটি নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বর্তমান কমিটি আগামী ডিসেম্বরে নতুন কমিটির কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করবে। এ সময় বক্তারা বাজুসের বর্তমান সভাপতি সায়েম সোবহান আনভীরের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
তারা বলেন, সায়েম সোবহান আনভীর বাজুসের দায়িত্ব নেয়ার দেশের জুয়েলারি ব্যবসা উন্নতির দিকে যাচ্ছিল। নতুন নেতৃত্ব এই সংগঠনকে আরও গতিশীল করবে বলে আশা করা যায়।
বাজুসের নতুন নির্বাচিত সভাপতি এনামুল হক খান বলেন, আমাদের সোনা আমদানির প্রক্রিয়া সহজ করতে হবে। সোনা আমদানির ব্যবস্থা আছে, কিন্তু এত কঠিন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সোনা আমদানি করতে গেলে যেই দাম দাঁড়ায়, সেই দাম দিয়ে কেউ সোনা কিনতে আগ্রহী না।
তিনি বলেন, মানুষকে বোঝাতে হবে ব্যবসায়ীরা কিন্তু চোরাকারবারি নয়। যারা চোরাকারবারি করে তারা কোনোদিন সোনা ব্যবসায় আসবে না। আর যারা সোনা ব্যবসা করে, তারা কোনোদিন চোরাকারবারিতে জড়াবে না।
তিনি আরও বলেন, যতদিন সোনা আমদানি সহজ না হয়, ততদিন পর্যন্ত ব্যাগেজ রুলের মাধ্যমে সোনা যে সহজে আসত, সেটা চালু করার জন্য আমরা উদ্যোগ গ্রহণ করব।
উল্লেখ্য, বাজুসের নতুন সভাপতি এনামুল হক খান দোলন এর আগেও বাজুসের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বাজুসের বর্তমান সভাপতি সায়েম সোবহান আনভীরের স্থলাভিষিক্ত হবেন।
জানা গেছে, ২০২৩ সালে এপ্রিলে এনামুল হক খান দোলনকে বাজুসের সব পদ থেকে বহিষ্কার করে। দোলন বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন। সম্প্রতি তার বহিষ্কার আদেশ তুলে নিয়ে সদস্যপদ ফিরিয়ে দেয় বাজুস।
প্রিন্ট করুন







Discussion about this post