প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

অভিযোগ অনুসন্ধানে আরও ১৫ দিন সময় পেল নিরীক্ষক

অ্যাকটিভ ফাইন কেমিক্যালস

আতাউর রহমান: দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ওষুধ ও রসায়ন খাতের কোম্পানি অ্যাকটিভ ফাইন কেমিক্যালসের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এবং আর্থিক দুর্বলতা অনুসন্ধানে বিশেষ নিরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এরই পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন হাওলাদার ইউনুস এবং কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টদের কোম্পানিটির নিরীক্ষার জন্য নিয়োগ দেয়। তবে কোম্পানির পক্ষ থেকে কোনো সহযোগিতা করে না বলে এর আগে অভিযোগ জানায় নিরীক্ষক। পরে কোম্পানিটিকে কারণ দর্শানোর জন্য তলব করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় নিরীক্ষক নির্ধারিত সময়ের পর আরও কিছু সময় চেয়ে কমিশনের কাছে আবেদন করে। পরে আবেদনের ভিত্তিতে নিরীক্ষককে আরও ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে নিরীক্ষা প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছে বিএসইসি। সম্প্রতি এ বিষয়ে জানিয়ে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকে একটি চিঠি দিয়েছে কমিশন।

বিএসইসির চিঠিতে বলা হয়েছে, অ্যাকটিভ ফাইন কেমিক্যালস লিমিটেডের বিশেষ নিরীক্ষার অবস্থা সম্পর্কে উল্লেখ করে বলা হয়,  নিরীক্ষক হাওলাদার ইউনুস অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টদের নিয়োগের বিষয়ে এর আগে প্রথমবার কমিশন ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ একটি চিঠি জারি করে। পরে ১ নভেম্বর ২০২১, ২৫ মে এবং ১৬ অক্টোবর ২০২২ মোট তিনিটি চিঠি কমিশনের কাছে পাঠায় নিরীক্ষক। সেই চিঠিতে উল্লিখিত বিষয়ের সূত্র ধরে কমিশন জানিয়েছে, কমিশন হাওলাদার ইউনুস এবং কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টদের কোম্পানির বিশেষ নিরীক্ষায় সময় বাড়িয়ে দেয়ার বিষয়ে অনুমতি দিতে সম্মতি জানিয়েছে। চিঠি জারির দিন থেকে আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে কোম্পানিটির বিশেষ নিরীক্ষা সম্পূর্ণ করতে হবে এবং প্রতিবেদন জমা দিতে বলে জানানো হয়।

এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. রেজাউল করিম শেয়ার বিজকে বলেন, কোম্পানিটির নিরীক্ষককে যেসব বিষয়ের ওপর গুরুত দিয়ে নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালন করতে বলা হয়েছে, তারা সময়ে সময়ে নিরীক্ষার তথ্য বিএসইসিকে জানিয়েছে। তবে নিরীক্ষা ভালোভাবে সম্পূর্ণ না হওয়ায় বিএসইসির কাছে তারা সময় চেয়েছে। ফলে নিরীক্ষকের দেয়া চিঠির সূত্রতেই কমিশন সময় বাড়িয়ে দিয়েছে।

এর আগে অ্যাকটিভ ফাইন কেমিক্যালসের আর্থিক বিবরণী বিশেষ নিরীক্ষার নির্দেশ দেয় বিএসইসি। নিরীক্ষার জন্য হাওলাদার ইউনুস অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টকে নিয়োগ দিয়েছিল কমিশন। তবে, বিশেষ নিরীক্ষা

কার্যক্রম পরিচালনায় কোম্পানি কর্তৃপক্ষ সহযোগিতা করেনি বলে বিএসইসিতে অভিযোগ করেছে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান। তাই, বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী বিশেষ নিরীক্ষককে অসহযোগিতার জন্য চলতি বছর ১০ ফেব্রুয়ারি কোম্পানিটিকে কারণ দর্শাতে বলা হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিএসইসির ৭৯০তম কমিশন সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় জরুরি পরিস্থিতি বিবেচনা এবং সর্বনিম্ন দরদাতা হাওলাদার ইউনুস অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টকে ৮ লাখ টাকায় অ্যাক্টিভ ফাইন কেমিক্যালসের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন বিশেষ নিরীক্ষার জন্য নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়। বিশেষ নিরীক্ষা কার্যক্রমে ৯টি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়।

এর আগে গত বছর অ্যাক্টিভ ফাইন কেমিক্যালসের তিন বছরের আর্থিক হিসাব খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নেয় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষও। এজন্য ওই কোম্পানিকে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি গত বছর ৩০ আগস্টের মধ্যে দাখিল করতে বলা হয়।

উল্লেখ্য, অ্যাক্টিভ ফাইন কেমিক্যালসের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এবং আর্থিক দুর্বলতা অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি গঠন করে বিএসইসি। কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

অ্যাক্টিভ ফাইন কেমিক্যালের বিরুদ্ধে গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেনÑ বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক মোল্লা মো. মিরাজ-উস-সুন্নাহ, একই প্রতিষ্ঠানের উপপরিচালক মোহাম্মদ রতন মিয়া ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্যবস্থাপক স্নেহাশিস চক্রবর্তী।

বিএসইসি’র আদেশে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন মনে করে, অ্যাকটিভ ফাইন কেমিক্যালসের বিরুদ্ধে করা বিভিন্ন অভিযোগ তদন্ত করা প্রয়োজন। তাই, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ (১৯৬৯ সালের অধ্যাদেশ নং-ঢঠওও) এর ২১ ধারা এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ১৯৯৩ এর ১৭ক ধারা অনুযায়ী অ্যাকটিভ ফাইন কেমিক্যালসের বিরুদ্ধে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলো। তদন্ত কমিটিতে বিএসইসি ও ডিএসইর কর্মকর্তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হলো। তদন্ত কর্মকর্তারা এ আদেশ জারির ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে বিএসইসর কাছে একটি প্রতিবেদন জমা দেবেন।

২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর ও ২০১৯ সালের ২১ মে জারি করা নির্দেশনা অনুযায়ী উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের মোট পরিশোধিত মূলধনের সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ ধারণ করতে ব্যর্থ হয়েছে অ্যাক্টিভ ফাইন কেমিক্যালস। কোম্পানির মোট পরিশোধিত মূলধনের মধ্যে মাত্র ১২ দশমিক ৪ শতাংশ শেয়ার আছে পরিচালকদের হাতে। ফলে, এখনও ১৭ দশমিক ৯৬ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে হবে কোম্পানিকে। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে কোম্পানিকে একাধিকবার শুনানিতে তলব করা হয়েছে। সর্বশেষ চলতি বছরের জুন মাসে অ্যাক্টিভ ফাইন কেমিক্যালসের পরিচালনা পর্ষদসহ কোম্পানির সচিব ও প্রধান অর্থ কর্মকর্তাকে (সিএফও) তলব করে বিএসইসি। পাশাপাশি কোম্পানির ব্যবসায়িক ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা চাওয়া হয়।

প্রসঙ্গত, ২০১০ সালে শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত হয় অ্যাক্টিভ ফাইন কেমিক্যালস। ২৩৯ কোটি ৯৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা পরিশোধিত মূলধন। কোম্পানির মোট শেয়ার ২৩ কোটি ৯৯ লাখ ৩৬ হাজার ৫৮০টি।