প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

অর্থছাড়ে জটিলতা: মিল্ক ভিটার দ্বিতীয় গুঁড়োদুধ কারখানা স্থাপনে ধীরগতি

 

নাজমুল হুসাইন : গত বছরের মে মাসে একনেকে অনুমোদিত হয় বাঘাবাড়ীতে মিল্ক ভিটার নতুন গুঁড়োদুধ তৈরির কারখানা। নির্মিতব্য এ কারখানাটি উৎপাদনে যাওয়ার কথা ছিল আগামী বছরের জুনে। তবে গত দেড় বছরে কারখানার জন্য শুধু জমি নির্ধারণ ও যন্ত্রাংশ ক্রয়ের দরপত্র আহ্বান ছাড়া কার্যত কোনো কাজ হয়নি। অর্থছাড়ে জটিলতা ও বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লিমিটেডের (মিল্ক ভিটা) উদাসীনতায় ধীরগতিতে চলছে প্রকল্পটি।

দেশে ক্রমাগত দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি হচ্ছে। এছাড়া মৌসুমে উদ্বৃত্ত দুধ আসছে মিল্ক ভিটার কাছে। তবে প্রক্রিয়াকরণের সক্ষমতা কম হওয়ায় অতিরিক্ত দুধ নিতে পারছে না মিল্ক ভিটা। এছাড়াও প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং মানবসৃষ্ট বিরূপ পরিস্থিতিতেও বহুবার দুগ্ধখামারিদের উৎপাদিত দুধ নষ্ট হয়েছে। এসব পরিস্থিতিতেই দুগ্ধখামারিদের স্বার্থ রক্ষায় উদ্বৃত্ত দুধ সংগ্রহ করে গুঁড়োদুধে রূপান্তরে ‘সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী ঘাটে গুঁড়া দুগ্ধ কারখানা প্রকল্প’টি নেওয়া হয়েছিল। তবে প্রকল্পের ধীরগতিতে খামারিদের স্বার্থ অরক্ষিতই রয়ে গেছে।

এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক ও মিল্ক ভিটার উপ-মহাব্যবস্থাপক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মুস্তাফিজুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, ‘নানা জটিলতায় নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পটি সম্পন্ন করা যাচ্ছে না। এখনও কাক্সিক্ষত অর্থছাড় করানো যায়নি। তবে গত মাসে যন্ত্রাংশ ক্রয়ের জন্য দরপত্র দেওয়া হয়েছে। যা জানুয়ারিতে উন্মক্ত হবে। আর নতুন এই কারখানার জন্য সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী কেন্দ্রের মধ্যেই জায়গা নির্ধারণ হয়ে গেছে।’

জানা গেছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ৭৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৫৬ কোটি ১০ লাখ টাকা অর্থায়ন করছে সরকার; বাকি টাকা দেওয়া হবে মিল্ক ভিটার নিজস্ব অর্থায়ন থেকে। এতে প্রতিদিন উৎপাদন হবে ২৫ টন গুঁড়োদুধ। যার জন্য সংগ্রহ করা হবে প্রতিদিন প্রায় দুই লাখ লিটার তরল দুধ।

১৯৯৮ সালে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী ঘাটে প্রথম একটি গুঁড়োদুধের কারখানা স্থাপন করে মিল্ক ভিটা। ওই কারখানায় বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় আট থেকে ১০ টন গুঁড়োদুধ উৎপাদন হয়। কারণ পুরোনো প্রযুক্তি ও দীর্ঘদিন বিএমআরই ছাড়া বর্তমানে প্রতিদিন প্রক্রিয়াকরণ সক্ষমতা ৭০ হাজার লিটারে এসেছে। সেখান থেকে নতুন করে উৎপাদন বাড়ানো সম্ভবও নয়। অপরদিকে গ্র্রীষ্ম মৌসুমে শুধু সিরাজগঞ্জ ও শাহজাদপুর উপজেলায়ই পাঁচ লাখ ২৮ হাজার লিটার দুধ হয়। আর শীত মৌসুমে আরও লক্ষাধিক লিটার উদ্বৃত্ত দুধ আসে। তবে প্রতিদিন মিল্ক ভিটা সংগ্রহ করছে সর্বোচ্চ এক লাখ ৭০ হাজার লিটার, যা গ্রীষ্ম মৌসুমে আরও কম।

মিল্ক ভিটার ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকির হোসেন বলেন, ‘বাস্তবতার কারণেই প্রকল্পটি দরকার। বছরের এই সময় অর্থাৎ নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত দুধের ভরা মৌসুমে মিল্ক ভিটার এলাকায় অতিরিক্ত দুধ উৎপাদন হয়, অনেক সময় উদ্বৃত্তও থাকে, যা মিল্ক ভিটা কাজে লাগাতে পারে না। প্রকল্পটি হলে আমরাই উপকৃত হবো। অপরদিকে দেশে যথেষ্ট গুঁড়োদুধ উৎপাদন না হওয়ায় প্রচুর দুধ আমদানিও হচ্ছে। মিল্ক ভিটার উৎপাদন বাড়লে ভোক্তারাই উপকৃত হবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘তবে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পটি শেষ করা সম্ভব হবে না। এক থেকে দুবছর সময় বাড়ানো হতে পারে।’

জানা গেছে, প্রকল্পটিতে ৪০ কোটি টাকা ব্যয় হবে গুঁড়োদুধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্লান্ট বা কারখানার মূল যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম কিনতে। এ ধরনের যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে থাকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ। এছাড়া গুঁড়োদুধ মোড়কজাতের যন্ত্রপাতি, পরীক্ষার জন্য ল্যাবরেটরি, মিল্ক রিসিভিং সেন্টার, প্রসেসিং ইউনিট, ক্রিম-বাটার প্রসেসিং শাখা স্থাপনে আরও ২১ কোটি টাকা খরচ হবে।

প্রকল্প পরিচালক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ইতোমধ্যে যন্ত্রপাতি ক্রয়ে আমরা আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করেছি। জানুয়ারি মাসে তা খোলা হবে। তবে এখন পর্যন্ত অর্থছাড়ের পরিমাণ সন্তোষজনক নয়। সরকারি প্রকল্পের কাজে এমন নানা জটিলতা থাকে।

দুগ্ধ প্রক্রিয়াকরণ খাতসংশ্লিষ্টরা বলছে, চাহিদা মেটাতে দেশে প্রতিবছর প্রায় ২১ হাজার ৭০০ টন গুঁড়ো দুধ আমদানি করা হয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে। সামান্য পরিমাণে মিল্ক ভিটা ছাড়াও দেশে বেসরকারি খাতের ব্র্যাক ডেইরি এবং প্রাণ গুঁড়োদুধ উৎপাদনে রয়েছে। এছাড়া দেশের কয়েকটি গ্রুপ ও বহুজাতিক কোম্পানি দেশে অবশিষ্ট দুধ আমদানি করে।

অন্যদিকে দেশে প্রতিদিন এক কোটি ৮০ লাখ লিটার তরল দুধ উৎপাদিত হয়, যা মোট চাহিদার অর্ধেক। চাহিদা মেটাতে প্রতিবছর দেশে ১৭ লাখ লিটার তরল দুধের সমপরিমাণ গুঁড়োদুধ আমদানি হয়। দেশে যে পরিমাণে দুধ উৎপাদিত হয়, তার মাত্র সাত শতাংশ দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাত কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে বাজারে আসে।

প্রসঙ্গত, বর্তমানে মিল্ক ভিটা পাস্তুরিত তরল দুধ ও গুঁড়োদুধ উৎপাদনের পাশাপাশি মাখন, ঘি, টক দই, মিষ্টি দই, রসমালাই, কনডেন্সড মিল্কসহ বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন ও বিপণন করে থাকে।