প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

অর্থনীতিতে আরও বৃদ্ধি পাক নারীর অংশগ্রহণ

‘এডিবির প্রতিবেদন: তিন বছরে শিল্পে নারীর অংশগ্রহণ বেড়ে দ্বিগুণ’ শিরোনামে গতকালের শেয়ার বিজে প্রকাশিত খবরটি এরই মধ্যে অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকবে। প্রতিবেদনটির ভিত্তি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর লেবার ফোর্স সার্ভে ২০১০ ও ২০১৩’র ভিত্তিতে প্রণীত এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) কর্তৃক প্রকাশিত ‘উইমেন অ্যাট ওয়ার্ক’ শীর্ষক গবেষণা। ওই সূত্র ধরে প্রতিবেদক জানিয়েছেন, ২০১০ সালে মোট ৪ কোটি ৭৭ লাখ ২৮ হাজার বাংলাদেশী নারীর মধ্যে কর্মে নিয়োজিত ছিলেন ১ কোটি ৭১ লাখ ৭৪ হাজার জন। নারীর কর্মে নিয়োজনের এ হার কমে ২০১৩ সালে। ওই বছর ৫ কোটি ৪২ লাখ ৯ হাজার নারীর মধ্যে কর্মে নিয়োজিত ছিলেন ১ কোটি ৮১ লাখ ৫৫ হাজার জন। খেয়াল করার মতো বিষয়, ২০১০-এর তুলনায় ২০১৩ সালে কৃষিতে নারীর অংশগ্রহণ কমেছে প্রায় ১৫ লাখ তথা ১৪ দশমিক ২৬ শতাংশ। তবে একই সময়ে শিল্পে নারীর অংশগ্রহণ প্রায় দ্বিগুণে পৌঁছে; ২০১০ সালে শিল্পে নারীর অংশগ্রহণ ছিল ১৯ লাখ ৭ হাজার, যেখানে ২০১৩ সালে সংখ্যাটি বেড়ে দাঁড়ায় ৩৭ লাখ ৮২ হাজারে। সুখবর হলো, শিল্পে নিয়োজিত এ নারীরা কেবল তৈরি পোশাক কারখানায় কর্মসংস্থান বেছে নেননি, তাদের অংশগ্রহণ বেড়েছে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, তামাকজাত পণ্য, টেক্সটাইল, চামড়াজাত পণ্য, অধাতব (নন-মেটালিক) খনিজ পণ্য ও ওষুধ শিল্পে এবং তাদের মধ্যে মাত্র ১২ শতাংশই অশিক্ষিত। বলার অপেক্ষা রাখে না, কৃষিতে নিয়োজিত নারীর তুলনায় শিল্পে নিয়োজিত নারীর শিক্ষা হার বেশি। নিঃসন্দেহে এটি আমাদের জন্য এক বিরাট অর্জন এবং সামগ্রিকভাবে তা সামাজিক উন্নয়ন সূচকে অগ্রগতির আংশিক প্রতিফলন। আর এর পেছনে সংশ্লিষ্ট নারীরা তো বটেই, ধারাবাহিকভাবে সরকারের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সক্রিয় ভূমিকা রেখে চলেছে দেশি-বিদেশি উন্নয়ন সহযোগী দেশ ও সংস্থা। নারী উন্নয়নে এদের প্রত্যেকের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তবে এমন উন্নয়নেও আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই। কেননা স্থানীয় নারীর এক বড় অংশ এখনও কর্মবঞ্চিত। ফলে সেদিকে মনোযোগ বাড়ানো প্রয়োজন এখন।

বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন আমাদের প্রতিনিধির কাছে মন্তব্য করেছেন, বর্তমানে দেশে পুরুষ কর্মসংস্থানের হার ৮২ শতাংশ; যেখানে কর্মে নিয়োজিত নারী মাত্র ৩২ শতাংশ। তার মতে, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এ হার বাড়ানো গেলে তা সার্বিকভাবে প্রবৃদ্ধিতেও ব্যাপক ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। এ বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণের সুযোগ নেই। অর্থনীতিতে নারীর বাড়তি অংশগ্রহণ নিঃসন্দেহে ফেলবে সুপ্রভাব। তবে প্রথম সমস্যা হলো কর্মপোযুক্ত সবার জন্য কর্মসংস্থান সৃজন এবং তাতে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি। কাজটি সহজ হবে না মোটেও। অগ্রসর অর্থনীতিতে এরই মধ্যে বিশ্বায়নের বিপরীত স্রোত প্রতিভাত। লক্ষণীয়, বিশ্বায়নে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হয়েছিল বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশগুলো। এখন উন্নত দেশে বিশ্বায়নবিরোধী শক্তি আধিপত্য বিস্তার শুরু করলে সেটি আমাদের জন্য দুশ্চিন্তার বৈকি। সেক্ষেত্রে তেমন জুতসই না হলেও একটা ভালো উপায় হতে পারে অভ্যন্তরীণ সেবা খাতের সম্প্রসারণ। মাথায় রাখা দরকার, আমাদের নারীর উপস্থিতি কৃষি ও শিল্পের তুলনায়ও সেবায় কম। ফলে নীতিনির্ধারকদের উচিত হবে সেবা খাত নিয়ে এখন থেকেই ভালোভাবে চিন্তা-ভাবনা করা। নারীর দক্ষতা অর্জনের সম্ভাবনা কম বলে যে কথাটি প্রচলিত রয়েছে, তা নিতান্ত অমূলক। বরং তৈরি পোশাকসহ অনেক খাতেই তাদের দক্ষতা অর্জনের ক্ষমতা প্রমাণিত। উপযুক্ত সুযোগ পেলে তারা অন্যান্য খাতেও একই স্বাক্ষর রাখতে পারবেন বলে আমাদের দৃঢ় প্রত্যাশা।