শেয়ার বিজ ডেস্ক : নীতিগত অনিশ্চয়তার কারণে উদ্যোক্তারা আপাতত নতুন বিনিয়োগে আগ্রহী নন। নির্বাচিত সরকার গঠন ছাড়া দেশে ব্যবসার পরিবেশের উন্নতি হবে না, অর্থনীতিতেও গতি ফিরবে না। এ কারণে আগামী জাতীয় নির্বাচন ও নতুন সরকার গঠনের আগ পর্যন্ত দেশে বেসরকারি বিনিয়োগ স্থবিরই থাকতে পারে।
গতকাল সোমবার ‘ব্যবসা পরিবেশ, সংস্কার, সুযোগ ও আগামীর চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। ইংরেজি দৈনিক দ্য ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে এই সেমিনারের আয়োজন করে। প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিকবিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী এতে প্রধান অতিথি ছিলেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব আনোয়ার হোসেন এবং রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান হাসান আরিফ। সভাপতিত্ব করেন দ্য ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ।
লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, প্রশাসনিক ও শাসনব্যবস্থার পূর্ণ পুনর্গঠন প্রয়োজন। খণ্ড খণ্ড সংস্কারে টেকসই দক্ষতা বা প্রবৃদ্ধি আসবে না। বন্দর ব্যবস্থাকে ডিজিটালাইজড করতে প্রযুক্তি ও প্রয়োজনীয় নীতিমালা রয়েছে। কিন্তু কিছু মন্ত্রণালয় ও মধ্যস্বত্বভোগীদের অনীহায় তা বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না।
তিনি বলেন, অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা বিশেষ করে লজিস্টিকস ও রপ্তানি খাতে এককভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো কর্তৃপক্ষ নেই। সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার মতো দেশে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের অধীনে আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয়কারী থাকে, এতে নীতি সমন্বয় নিশ্চিত করা হয়। আমাদেরও এমন কাঠামোগত সংস্কার দরকার।
আলোচনায় বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, দেশে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আগুন নেভানোর সরঞ্জাম পর্যন্ত নেই। নীতিতে স্থিতিশীলতা নেই। জ্বালানি সংকট চলছে। বিদেশি বিনিয়োগ আসবে কীভাবে? বিদেশি বিনিয়োগের পেছনে ছোটা বাদ দিয়ে সরকারকে স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের সুবিধা দেয়াতেই মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, টার্নওভার ট্যাক্স নীতিটি ব্যবসাবান্ধব নয়। প্রথমে এটিকে সমন্বয়যোগ্য বলা হলেও পরে তা আয়কর হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে লাভ-ক্ষতির তোয়াক্কা না করেই। এমনকি এনবিআর চেয়ারম্যানও বলেছেন, এটি ব্যবসার অনুকূল নয়, কিন্তু তিনি নিজেই এর পরিবর্তন করতে পারেননি।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যই প্রমাণ করে, বেসরকারি বিনিয়োগ স্পষ্টভাবে ধীর হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও দীর্ঘমেয়াদি নীতিগত ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করতে সক্ষম একটি নির্বাচিত সরকার প্রয়োজন।
বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের (বিল্ড) চেয়ারপারসন আবুল কাসেম খান বলেন, ব্যবসায়ীরা সরকারের কাছে জবাবদিহি করেন। কিন্তু যেসব আমলা করের টাকায় বেতন পান, তাদের কোনো জবাবদিহি নেই। এটা অবশ্যই বদলাতে হবে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দেশের সম্ভাবনাকে চেপে ধরেছে। বেসরকারি খাতকে মুক্তভাবে কাজ করতে দিতে হবে।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিজিএমইএর সিনিয়র সহসভাপতি ইনামুল হক খান, ইউসিবির চেয়ারম্যান শরীফ জহীর, বাংলাদেশ এগ্রোকেমিক্যাল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কে এস এম মোস্তাফিজুর রহমান, মিডল্যান্ড ব্যাংকের এমডি মো. আহসান-উজ জামান, আকিজ বশির গ্রুপের সিওও খোরশেদ আলম প্রমুখ।
এস এস/
প্রিন্ট করুন






Discussion about this post