শেয়ার বিজ ডেস্ক : চলতি বছর অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিন অর্থনীতিবিদ। তারা হলেন জোয়েল মোকির, ফিলিপ আগিয়োঁ ও পিটার হাউইট। উদ্ভাবননির্ভর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ব্যাখ্যা করার জন্য তারা এ পুরস্কার পান। গতকাল সোমবার দ্য রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্স এ পুরস্কার ঘোষণা দেয়।
এই তিন অর্থনীতিবিদের মধ্যে জোয়েল মোকির অর্ধেক পুরস্কার পেয়েছেন। প্রযুক্তিগত অগ্রগতির মাধ্যমে টেকসই প্রবৃদ্ধির পূর্বশর্তগুলো শনাক্ত করার জন্য তিনি পুরস্কার পেয়েছেন। ‘সৃজনশীল বিনাশ’ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে টেকসই প্রবৃদ্ধির তত্ত্ব দেয়ার জন্য বাকি অর্ধেক পুরস্কার যৌথভাবে পেয়েছেন ফিলিপ আগিয়োঁ ও পিটার হাউইট। রয়টার্সের তথ্যানুসারে, এই পুরস্কারের মূল্যমান ১২ লাখ ডলার।
বিবৃতিতে নোবেল কমিটি বলেছে, নোবেলজয়ীরা আমাদের শিখিয়েছেনÑসব সময় প্রবৃদ্ধি হবে, এটা কখনোই নিশ্চিত ধরে নেয়া যায় না। মানবসভ্যতার ইতিহাসে প্রবৃদ্ধি নয়, বরং স্থবিরতাই ছিল স্বাভাবিক অবস্থা। তাদের গবেষণায় দেখা গেছে, এই প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখতে হলে সম্ভাব্য হুমকিগুলো চিহ্নিত করে তা মোকাবিলা করতে হবে।
ঐতিহাসিক উপাত্ত ও দলিল ব্যবহার করে মোকির দেখিয়েছেন, কীভাবে প্রযুক্তিগত অগ্রগতি ও উদ্ভাবন একসময় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে নিয়মিত বিষয়ে পরিণত করেছে। অন্যদিকে আগিয়োঁ ও হাউইট সেই প্রবৃদ্ধির অন্তর্নিহিত প্রক্রিয়া বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন। ১৯৯২ সালের এক প্রবন্ধে তারা গাণিতিক মডেলের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করেন, যখন নতুন ও উন্নত কোনো পণ্য বাজারে আসে, তখন পুরোনো পণ্য বিক্রি করা প্রতিষ্ঠানগুলো ধীরে ধীরে টিকে থাকতে পারে না। এই প্রক্রিয়াই অর্থনীতিতে ‘সৃজনশীল বিনাশ’ নামে পরিচিত। অর্থাৎ পুরোনো ব্যবস্থার ভেতর থেকেই নতুন উদ্ভাবন হয়।
পুরস্কারের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ধারাবাহিকভাবে যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হতে পারে, গত দুই শতকের ইতিহাসে তা প্রথম দেখা গেছে। এর ধারাবাহিকতায় কোটি কোটি মানুষ দারিদ্র্য থেকে মুক্ত হয়েছে। সেই মানুষেরাই আজকের সমৃদ্ধির ভিত্তি গড়ে তুলেছে।
চলতি বছর অর্থনীতিতে নোবেলজয়ী জোয়েল মোকির, ফিলিপ আগিয়োঁ ও পিটার হাউইট দেখিয়েছেন, উদ্ভাবনই ভবিষ্যৎ অগ্রগতির মূল চালিকাশক্তি। তাদের গবেষণা মনে করিয়ে দেয়, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি স্বয়ংক্রিয় বা নিশ্চিত প্রক্রিয়া নয়।
অর্থনীতির এই পুরস্কার মূল নোবেল পুরস্কারের অন্তর্ভুক্ত নয়। ১৯৬৯ সালে সুইডেনের কেন্দ ীয় ব্যাংক নোবেল পুরস্কারের প্রতিষ্ঠাতা আলফ্রেড নোবেলের স্মরণে এই পুরস্কার চালু করে। তখন থেকে এখন পর্যন্ত মোট ৫৭ জন এই পুরস্কার পেয়েছেন। আলফ্রেড নোবেলের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অর্থনীতিতে সুইডেনের কেন্দ ীয় ব্যাংকের পুরস্কার, এটাই এই পুরস্কারের কেতাবি নাম।
সবচেয়ে বেশি বয়সে এই পুরস্কার পেয়েছেন লিওনিড হারউইচ। ২০০৭ সালে এই পুরস্কার পাওয়ার সময় তার বয়স ছিল ৯০ বছর। তিনি আরও দুজনের সঙ্গে যৌথভাবে এই পুরস্কার পেয়েছিলেন। সবচেয়ে কম বয়সে (৪৬) এই পুরস্কার পেয়েছেন এস্থার দুফলো। ২০১৯ সালে স্বামী অভিজিৎ ব্যানার্জির সঙ্গে যৌথভাবে এই পুরস্কার পান তিনি।
প্রথা অনুযায়ী, অক্টোবরের প্রথম সোমবার চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়। সে হিসেবে এবার ৬ অক্টোবর নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করে রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস। এদিন চিকিৎসাশাস্ত্র বা ওষুধশাস্ত্রে মেরি ব্রাঙ্কো, ফ্রেড রামসডেল ও শিমন সাকাগুচি যৌথভাবে ‘পেরিফেরাল ইমিউন টলারেন্স’ সংক্রান্ত তাদের যুগান্তকারী আবিষ্কারের জন্য নোবেল প্রাপ্ত হন।
মঙ্গলবার রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্স ম্যাক্রোস্কোপিক কোয়ান্টাম মেকানিক্যাল টানেলিং এবং ইলেকট্রিক সার্কিটে এনার্জি কোয়ান্টাইজেশন গবেষণার জন্য জন ক্লার্ক, মাইকেল ডেভোরেট এবং জন মার্টিনিসকে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানায়।
ধারাবাহিকতা মেনে বুধবার ঘোষণা করা হয় রসায়নে নোবেলজয়ীর নাম। এবার রসায়নে যৌথভাবে নোবেল পেয়েছেন সুসুমু কিতাগাওয়া, রিচার্ড রবসন এবং ওমার এম ইয়াগি। ‘মেটাল অরগানিক ফ্রেমওয়ার্ক’ ডেভেলপের কারণে তাদের এ বছর রসায়নে নোবেল দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস।
হাঙ্গেরিয়ান লেখক লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী হিসেবে বৃহস্পতিবার নাম ঘোষণা করে সুইডিশ অ্যাকাডেমি। তার সম্পর্কে নোবেল কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তিনি এই পুরস্কার পেয়েছেন তার চিত্তাকর্ষক ও দূরদর্শী সৃজনকর্মের জন্য, যা মহাপ্রলয়ের ভয়াবহতার মধ্যেও শিল্পের শক্তিকে পুনর্ব্যক্ত করে।
শুক্রবার নোবেল শান্তি পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। এ বছর পুরস্কারটির জন্য মনোনীত হয়েছেন ভেনেজুয়েলার রাজনীতিবিদ মারিয়া কোরিনা মাচাদো। নোবেল কমিটির বিবৃতিতে বলা হয়, ভেনেজুয়েলার মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিতকরণ এবং দেশকে স্বৈরতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণে তার নিরলস প্রচেষ্টার জন্য তাকে এই সম্মানে ভূষিত করা হলো।
প্রিন্ট করুন






Discussion about this post