প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

‘অর্থনৈতিকভাবে সম্ভাবনাময় দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম সারিতে’

নিজস্ব প্রতিবেদক : অর্থনৈতিকভাবে বিশেষ সম্ভাবনাময় দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম সারিতে রয়েছে। এখানে রয়েছে বিনিয়োগের অপার সম্ভাবনা। সুনির্দিষ্ট কয়েকটি কারণে এ সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে এর মধ্যে রয়েছে বিশাল বাজার, শ্রমশক্তি, ক্রয়ক্ষমতা, স্থিতিশীল গণতন্ত্র ও সরকারের নীতি-সহায়তা। যে কারণে বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারির নেতিবাচক প্রভাব থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ছে। ‘ফরেন রেমিট্যান্স’ বাংলাদেশের অর্থনীতির ভিত তৈরি করছে এবং নানা রকমের সংকট সত্ত্বেও করোনার মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতি ও অর্থনীতি নিয়ে সোমবার (২৬ জুলাই) যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ইন্টারকন্টিনেন্টাল বার্কলে হোটেলে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) উদ্যোগে এক বিনিয়োগ সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন।
এ সময় বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগের এক অপার সম্ভাবনাময় অঞ্চল। এখানে প্রচুর মুনাফা করার সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যাপক সম্ভাবনা নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে আরও ভালো অবস্থানে দেখতে পারব। আমি আপনাদের সবাইকে আহ্বান জানাই, আপনারাও এই উন্নয়নে সঙ্গী হোন।
উদ্বোধনী বক্তৃতায় বিএসইসি চেয়ারম্যান প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বিদেশি বিনিয়োগের জন্য সবচেয়ে বেশি সুবিধা দেয় বাংলাদেশ। বিনিয়োগের জন্য যেসব অবকাঠামোগত সুবিধা দরকারÑ সবই এখন বাংলাদেশে আছে। বিগত ১০ বছর ধরে বাংলাদেশে বিনিয়োগ পরিকল্পনাকে সামনে রেখে অবকাঠামো সাজানো হচ্ছে। বাংলাদেশ এখন বিদ্যুতে স্বয়ংসম্পূর্ণতাসহ অন্যান্য অবকাঠামোতেও ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে যে অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে, তা আজ বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য যেসব সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়, তার বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেন তিনি এবং প্রবাসী বাংলাদেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার জন্য আহ্বান জানান।
চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার যুক্তরাষ্ট্র। আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অর্থনীতির উন্নতিতে খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে গেছেন। সেই পথ ধরে একটি সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখে আসছে এ দেশের মানুষ। গত বছর জিডিপিতে বাংলাদেশ প্রতিবেশী ভারত, ভিয়েতনামসহ আরও অনেক দেশকে পেছনে ফেলেছে। আমাদের গড় জিডিপি গ্রোথ গত এক দশকে ছয় দশমিক আট শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি বলেন, এখানে আমাদের টার্গেট গ্রুপ দুটি। প্রথমত, নন-রেসিডেন্ট বাংলাদেশি। তারা যুক্তরাষ্ট্রে থেকে যে সঞ্চয় করছেন, সেটা সেখানে বিনিয়োগ করে ভালো রিটার্ন পাচ্ছেন না। বাংলাদেশে নিটা অ্যাকাউন্ট হয়ে গেছে। বাংলাদেশ থেকে লাভসহ বিনিয়োগ ফেরত নিয়ে যাওয়ার সুযোগ আছে। এ সুযোগটি নিয়ে কথা বলতে যাচ্ছি আমরা। বাংলাদেশের দ্বিতীয় ‘টার্গেট গ্রুপ’ হিসেবে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ী গোষ্ঠী। দেশটির বিনিয়োগকারীদের একটি সংঘ পাঁচটি দেশকে বিনিয়োগের লক্ষ্য হিসেবে ঠিক করেছে, যার মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম দিকে রয়েছে। বাংলাদেশে তারা তাদের বিনিয়োগের মোট টাকার ১৭ শতাংশ বিনিয়োগ করতে চায়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের শিক্ষার হারও আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। অপরদিকে শিক্ষিত ও অর্ধশিক্ষিত শ্রমশক্তি রয়েছে আমাদের, যারা বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নতিতে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এসবের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আগ্রহ শিল্প-কারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্য, নেটওয়ার্কিংসহ আরও অনেক কিছুতে।
এছাড়াও আমরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল পণ্য উৎপাদনে খরচ অনেক কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। যার ফলে বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহ বাড়ছে।
এদিকে বাংলাদেশের অধিকাংশ যুবক ডিজিটাল পদ্ধতির সঙ্গে খুবই পরিচিত ও সচেতন। তাদের এসব সক্ষমতা বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব সময়ই ব্যবসাবান্ধব পরামর্শ দিয়ে থাকেন। বাংলাদেশ সামনের দিকে খুব দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার এটি এক গুরুত্বপূর্ণ কারণ। আমাদের পলিসিসহ সবকিছু এখন ব্যবসাবান্ধব। বর্তমান সময়ে সরকারি কর্মকর্তাসহ সবার চিন্তাভাবনায় পরিবর্তন এসেছে। তারা সবাই ব্যবসায়ী ও ব্যবসার পক্ষে কাজ করছেনÑ যা ব্যবসার জন্য একটি ভালো দিক। তাই আমরা বিশ্বের সব প্রান্তের মানুষকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানাই। আমরা আপনাদের পার্টনার হতে চাই।
বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, এফডিআইতে সরকার অনেক ধরনের সুবিধা দিচ্ছে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের। গত ১০ বছরে তাদের জন্য হাইটেক পার্কে ২২ শতাংশ ট্যাক্স কমানো হয়েছে। এছাড়াও হাইটেক পার্কে তাদের ৮০ শতাংশ ভ্যাট ইউটিলিটি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে এবং তাদের জন্য কোনো ইক্যুইটি সীমাবদ্ধতা রাখা হয়নি।
বাংলাদেশ বিনিয়োগকারীদের প্রচুর মুনাফা দেওয়ার চেষ্টা করে আসছে। এর জন্য এই দেশ পুঁজিবাজারে অনেকগুলো ভালো নিয়ম করেছে।
তিনি বলেন, এছাড়াও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ডিএসইএক্স ডাবল ডিজিট গ্রোথ ২৪ দশমিক চার শতাংশ। চলতি মাসে ডিএসইর মোট বাজার মূলধন রেকর্ড ৬৩ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। বর্তমান কমিশন পুঁজিবাজারের উন্নয়নে সব ধরনের কাজ করে যাচ্ছে।
‘দ্য রাইজ অব বেঙ্গল টাইগার্স : পটেনশিয়ালস অব ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট’ শীর্ষক এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বিএসইসি চেয়ারম্যান প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। বিএসইসির কমিশনার ড. সিরাজুল ইসলাম, বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষের (বেপজা) চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল নজরুল ইসলাম, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুল্লাহ, বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি মজুমদার ছাড়াও অন্যান্য বিশিষ্ট শিল্পপতি, বিনিয়োগে আগ্রহী বিদেশি ও প্রবাসী ব্যবসায়ীরা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। সম্মেলনে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান।