প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

অল্প দামে পেঁয়াজু-শিঙাড়া বিক্রি করেন বকুল

অদিত্য রাসেল, সিরাজগঞ্জ: নিত্যপ্রয়োজনীয় সব ধরনের জিনিসপত্রের মূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে এখনও পাঁচ টাকায় তিনটি শিঙাড়া, তিনটি পেঁয়াজু ও তিনটি পুরি বিক্রি করেন সিরাজগঞ্জের বকুল হোসেন (৫০) নামের এক দোকানদার। বড়দের কাছে পেঁয়াজু ভাই ও শিশুদের কাছে শিঙাড়া দাদু হিসেবেই পরিচিত তিনি।

বকুলের শিঙাড়া, পেঁয়াজু ও পুরির বিশেষত্ব হলো কম দামে বেশিসংখ্যক পাওয়া যায়। স্বাদেও ভালো। তিনি মাত্র পাঁচ টাকায় তিন ধরনের খাদ্য বিক্রি করেন। এসব খাবার স্থানীয়ভাবে বেশ জনপ্রিয়। অল্প দাম হওয়ায় চাহিদাও বেশ ভালো।

শিঙাড়া বিক্রেতা বকুল হোসেন জেলার রায়গঞ্জ উপজেলার ধানগড়া এলাকার বাসিন্দা। বর্তমানে ধানগড়া বাজারে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের পাঠাগার-সংলগ্ন এলাকায় অস্থায়ী দোকান তার।

গত মঙ্গলবার বিকালে ধানগড়া এলাকায় গিয়ে জানা যায়, প্রতিদিন বিকাল ৪টা থেকে শুরু করে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত তিনি তৈরি ও বিক্রির কাজ শেষ করেন। এ ব্যবসায় সহযোগিতা করে তার ছোট ছেলে কলেজছাত্র রিপন হোসেন। তিন ঘণ্টায় তার দোকান থেকে প্রায় এক হাজার শিঙাড়া, পুরি ও পেঁয়াজু বিক্রি হয়। এতে যা লাভ হয়, তা দিয়ে চলে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে চলে বকুলের সংসার।

শিঙাড়া বিক্রেতা বকুল হোসেন বলেন, তিনি বেশি লেখাপড়া করতে পারেনি। ছোটবেলা থেকেই হোটেল ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। ফুলজোড় নদীর ভাঙনে সেই দোকান বিলীন হয়ে যায়। ধানগড়া গ্রামীণ ব্যাংক শাখার পশ্চিমে রাস্তার ধারে শিঙাড়া, পুরি ও পেঁয়াজু বিক্রি করতে শুরু করেন। নানা কারণে দোকানটি আগের জায়গা থেকে সরিয়ে বর্তমান জায়গায় নিয়ে আসতে হয়েছে। এ ব্যবসায় কেটে গেছে ৩০ বছরের বেশি সময়। অল্প পুঁজিতে ছোট ব্যবসা। সব বয়সী মানুষ তার ক্রেতা। তার শিঙাড়া, পুরি আর পেঁয়াজু খেতে আসেন দূরদূরান্তের মানুষ।

বকুল হোসেন আরও বলেন, প্রথম যখন এ ব্যবসা শুরু করেন, তখন ময়দা সেরদরে বিক্রি হতো। প্রতি সের ময়দার দাম ছিল ছয় থেকে সাত টাকা। আর তেলের দাম ছিল প্রতি লিটার ১৬ থেকে ১৮ টাকা। তখন তিনটি শিঙাড়া একসঙ্গে কিনলে দাম নেয়া হতো পাঁচ টাকা। সবকিছুর দাম বাড়লেও বাড়েনি তার শিঙাড়া, পুরি আর পেঁয়াজুর দাম। তবে আকারে ছোট হয়ে এসেছে শিঙাড়া ও পেঁয়াজু। কারণ বর্তমানে এক কেজি ময়দা ৬৫ টাকা এবং এক লিটার খোলা তেল ১৬৮ টাকা।

শিঙাড়া কিনতে আসা সেলিম হোসেন বলেন, অনেক আগে থেকেই বকুল দাদুর শিঙাড়া, পেঁয়াজু ও পুরির ভক্ত তিনি। দাম কম হওয়ায় এসব খাই। খেতে ভালোই লাগে।

আরেক ক্রেতা মেহেদি হাসান বলেন, অনেকবার এ দোকানের সুস্বাদু শিঙাড়া, পুরি ও পেঁয়াজু খেয়েছেন। স্বাদ আর দামে সাশ্রয়ী হওয়ায় পেঁয়াজু বকুল ভাইয়ের তৈরি শিঙাড়া, পুরি ও পেঁয়াজুর কদর আগের মতোই রয়েছে।

স্ত্রী, দুই ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে বকুল হোসেনের সংসার। বড় ছেলে সজল হোসেন বাসচালক। ছোট ছেলে রিপন হোসেন স্থানীয় সরকারি বেগম নূরুননাহার তর্কবাগীশ কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির ছাত্র। সে মাঝে মাঝে বাবার কাজে সহযোগিতা করে আর ফুটবল খেলে। বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন, ছোট মেয়ে বাড়ির কাজে মাকে সহায়তা করে।

বকুল হোসেন একবার ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য পদে নির্বাচন করেছিলেন, তবে জিততে পারেননি। নির্বাচনে জিততে না পারলেও হতাশ হননি। জীবনের পুরো সময়টাই চুলার আগুনের আঁচে কাটল। আনন্দে ও আগুনের কাছাকাছি থাকেন বলে হয়তো শরীরে অসুখ-বিসুখ কম। যত দিন বাঁচবেন, এ ব্যবসা চালিয়ে যেতে চান তিনি।