প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক নিয়ে আলোচনা দ্রুত শুরু হোক

 

বাংলাদেশ ও নেপাল থেকে রফতানি করা পাটপণ্যে বড় অঙ্কের অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করেছে ভারত। দেশটির কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীন সেন্ট্রাল বোর্ড এক্সাইজ অ্যান্ড কাস্টমস এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সম্প্রতি এবং তা কার্যকর হয়েছে এরই মধ্যে। শুধু দেশের পাট উৎপাদন ও প্রক্রিয়াকরণে সংশ্লিষ্টরা নয়, জাতীয় অর্থনীতির জন্য এ খবর উদ্বেগের। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে আমাদের পাটপণ্য রফতানির সবচেয়ে বড় বাজার। বাংলাদেশের মোট পাটপণ্য রফতানির ৩৫ শতাংশই হয়ে থাকে প্রতিবেশী ভারতে। এ শুল্ক আরোপের ফলে সেখানকার আমদানিকারকরা এখানে উৎপাদিত পণ্য আমদানিতে কিছুটা হলেও নিরুৎসাহিত হবেন, তাতে সন্দেহ নেই। এতে আমাদের রফতানিকারকরাও পড়বেন বিপাকে। কমে আসবে ভারতের বাজারে পাটপণ্য রফতানি বাবদ আয়।

বলা বাহুল্য, সিদ্ধান্তটি চূড়ান্ত করার আগে দীর্ঘ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ভারত। তাদের এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনে আমাদের ব্যবসায়ীদের অদক্ষতা, অবহেলা ও মানসম্পন্ন তথ্যের ঘাটতি যে কিছুটা হলেও দায়ী, তা এখন স্পষ্ট। শেয়ার বিজে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যাচ্ছে, গত বছরের এপ্রিলে কলকাতায় ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সভায় আইনজীবী নিযুক্ত করার কথা থাকলেও তা করেননি পাট রফতানিকারকরা। তথ্য সংগ্রহে যে প্রশ্নপত্র দেশটির পক্ষ থেকে পাঠানো হয়েছিল, তারও জবাব দেয়নি আমাদের সব প্রতিষ্ঠান। স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে, এসবের গুরুত্ব কি তখন অনুধাবন করতে পারেননি রফতানিকারকরা? বিষয়টি যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অজানা ছিল, তা নয়। গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবে বাংলাদেশের রফতানিকারকদের কাছে এসব তথ্য যখন চাওয়া হয়েছিল, তখন মন্ত্রণালয়টির কর্মকর্তারা কি তাদের কোনো রকম সহায়তা জুগিয়েছিলেন? এখন অবশ্য অনেকে বলছেন, ব্যবসায়ীদের ব্যর্থতার কারণেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ পেয়েছে ভারত। প্রশ্ন হলো, এ দায়িত্বে নিয়োজিত সরকারের বিভাগগুলো কি দায় এড়াতে পারে? আমরা বিষয়টিকে সরকার ও রফতানিসংশ্লিষ্টদের সামগ্রিক ব্যর্থতা হিসেবেই দেখতে চাই।

মনে রাখা দরকার, ভারত সরকার এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ায় দেশটির সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য ঘাটতি বাড়বে। এটি সামাল দেওয়ার জন্য নীতিনির্ধারকরা কি কিছু ভেবেছেন? শেয়ার বিজের প্রতিবেদনেই বলা হয়েছে, ভারতীয় আমদানিকারকরা এ শুল্ক আরোপের বিপক্ষে। তাই আপাতত দেশটিতে এ পণ্য রফতানি কমে এলেও বাংলাদেশ যে বাজারটি হারাবে না, সে আশা করাই যায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ৯০ দিনের মধ্যে ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশনে (ডব্লিউটিও) মামলার সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশের। সরকার এ ধরনের আইনি প্রক্রিয়ার দিকে অগ্রসর হবে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এর সম্ভাব্য পরিণতিগুলোও বিবেচনায় রাখা দরকার।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব অবশ্য বলেছেন, ভারত সরকারের এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার চিঠি এলেই দ্বিপক্ষীয় পর্যায়ে কাজ শুরু হবে। বাস্তবতা হলো, দুই দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট যেসব ইস্যু আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান করা সম্ভব, সেগুলোর ব্যাপারে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আইনি প্রক্রিয়ায় যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। সেজন্য উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা যত দ্রুত সম্ভব শুরু করার পরামর্শই দেবো আমরা। দেশটি এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবে কি না, সেটা তাদের ব্যাপার। তবে সিদ্ধান্তটি নিয়ে তারা এমনটাই মনে করিয়ে দিল যে, একটি দেশের ওপর এত বেশি নির্ভরশীল হওয়া আমাদের ঠিক হয়নি। শুধু পাট নয়, এ বাস্তবতা বিবেচনায় রাখা দরকার যে কোনো পণ্যের ক্ষেত্রেই। এজন্য নিজেদের স্বার্থেই এখন আমাদের অন্বেষণ করতে হবে নতুন রফতানি বাজার। এটি পেতে যত দেরি হবে, আমাদের পাটশিল্পও হবে তত ক্ষতিগ্রস্ত। যেহেতু এর ওপর আমাদের রফতানি আয় অনেকটা নির্ভরশীল, সেহেতু অন্তত সমপরিমাণ দরের বাজার পাওয়ার আপাতত প্রচেষ্টায়ই থাকতে হবে সংশ্লিষ্টদের। স্থানীয় শিল্প বাঁচানোর চালু যুক্তি দেখিয়েই অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। দেশীয় শিল্প বাঁচাতে বাংলাদেশ যথাযথ উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হলে সে দায় কিন্তু কেউ নেবে না।