প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

আইপিওতে শেয়ার ছাড়ার ব্যাখ্যা দেবে ডিএসই

আতাউর রহমান: ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জকে (ডিএসই-সিএসই) প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে ইনিস্টিটিউট ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মাঝে শেয়ার ছেড়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করার উদ্যোগ নেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এরই ধরাবাহিকতায় ৩৫ শতাংশ শেয়ার ছেড়ে তালিকাভুক্ত হওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ডিএসই। এরই মধ্যে সেলফ লিস্টিং আইনের খসড়াও কমিশনে জমা দিয়েছে ডিএসই। এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানটি প্রস্তাবনার বিস্তারিত ব্যাখ্যা উপস্থাপনের জন্য বিএসইসির সঙ্গে বৈঠকের সময় চেয়েছে বলে জানা গেছে। সম্প্রতি বিএসইসির কাছে এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে ডিএসই সূত্রে জানা গেছে।

চিঠিতে ডিএসই জানিয়েছে, ব্লক অ্যাকাউন্টে সংরক্ষিত ৩৫ শতাংশ শেয়ার অফলোড করার বিষয়ে অপনাদের সঙ্গে আলোচনা করা প্রয়োজন। আলোচনার জন্য বিনীতভাবে বৈঠকের সময় চাচ্ছি।

এ বিষয়ে নিশ্চিত করে ডিএসইর প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) মো. সাইফুর রহমান মজুমদার শেয়ার বিজকে বলেন, শেয়ার অফলোড করার বিষয়ে আমরা একটি প্রস্তাবনা জমা দিয়েছিলাম। প্রস্তাবনাটি অনেক বড় এবং এর ব্যাখ্যা সময়সাপেক্ষ। তাই প্রস্তাবনাটির বিস্তারিত ব্যাখ্যা উপস্থাপনের জন্য বিএসইসির কাছে সময় চাওয়া হয়েছে।

তথ্যমতে, ২০২১ সালের ১৩ ডিসেম্বর বিএসইসি উভয় স্টক এক্সচেঞ্জকে ৩৫ শতাংশ শেয়ার ছাড়ার নির্দেশ দেয়। এ লক্ষ্যে পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা চলতি বছরের ১০ জানুয়ারির মধ্যে জমা দিতে সময় বেঁধে দেয়া হয়। পরবর্তী ফেব্রুয়ারিতে ডিএসই এ-সংক্রান্ত পরিকল্পনা কমিশনে দাখিল করে।

এদিকে নিজ প্রতিষ্ঠানে তালিকাভুক্তির বিষয়ে সেলফ-লিস্টিং রেগুলেশন, ২০২২ প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি। এ লক্ষ্যে চলতি বছরের মার্চে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। গঠিত কমিটির আহ্বায়ক হলেন বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মো. সাইফুর রহমান। কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম, পরিচালক মো. আবুল কালাম, অতিরিক্ত পরিচালক মো. কাওসার আলী এবং যুগ্ম পরিচালক মোহাম্মদ জহিরুল হক (সদস্য সচিব)। গঠিত কমিটিকে দাখিল করা প্রতিবেদন অনুযায়ী ও উভয় স্টক এক্সচেঞ্জে মতামতের ভিত্তিতে সেলফ-লিস্টিং রেগুলেশন প্রণয়নের কাজ চলছে।

এদিকে স্টক এক্সচেঞ্জের তালিকাভুক্তি আইপিওর বুক বিল্ডিং প্রক্রিয়ায় হবে। তবে স্টক এক্সচেঞ্জের বুক বিল্ডিং প্রক্রিয়ায় যোগ্য বিনিয়োগকারীদের সিংহভাগই অংশ নিতে পারবেন না। এর কারণ ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইনে বলা আছে, প্রাইমারি শেয়ারহোল্ডার এবং তাদের সংশ্নিষ্টদের কেউই এর আইপিওর দর নির্ধারণ প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার যোগ্য হবেন না। এ অবস্থায় স্টক

এক্সচেঞ্জের বুক বিল্ডিং প্রক্রিয়ায় যথেষ্ট প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী পাওয়া কষ্টকর হতে পারে। আবার শেয়ারসংখ্যা বেশি হলে বেশি দামে শেয়ার কেনার জন্য পর্যাপ্ত ক্রেতা নাও মিলতে পারে। তাই ব্লক হিসাবে থাকা ৩৫ শতাংশ শেয়ার বিক্রির জন্য আলাদা বিধি ও প্রবিধিমালা করা হয়েছে।

এছাড়া যে কোনো কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে ডিএসইর কাছে আবেদন করতে হয়। কিন্তু নিজস্ব পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে ডিএসইকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির কাছে আবেদন করতে হবে। এ-সংক্রান্ত সব অনুমোদন কেবল বিএসইসি দেবে। তালিকাভুক্তির পর অন্য তালিকাভুক্ত কোম্পানির মতো কমপ্লায়েন্স মেনে সব ধরনের তথ্য জমা দেবে ও প্রকাশ করবে। তবে বিদ্যমান আইনে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ এবং এককভাবে পরিচালকদের দুই শতাংশ শেয়ার ধারণের বাধ্যবাধকতা স্টক এক্সচেঞ্জের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।

জানা গেছে, ২০১০ সালে পুঁজিবাজার ধসের পর স্টক এক্সচেঞ্জ ব্যবসা পরিচালনা থেকে ব্রোকারদের প্রভাব কমাতে ২০১৩ সালে ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন করে বিএসইসি। ওই আইন অনুযায়ী আলোচ্য বছরেই দেশের উভয় স্টক এক্সচেঞ্জ মুনাফাকেন্দ্রিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তরিত হয়। ওই সময়ে ডিএসইর পুরো সম্পদের ভিত্তিতে (এক হাজার ৮০৩ কোটি ৭৭ লাখ ৬৫ হাজার টাকা) ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের প্রায় ১৮০ কোটি ৩৮ লাখ শেয়ার সৃষ্টি করা হয়। এর মধ্যে ৪০ শতাংশ শেয়ার পেয়েছে ব্রোকারেজ হাউসগুলো। বাকি ৬০ শতাংশের মধ্যে ২০১৮ সালে ডিএসই ২৫ শতাংশ শেয়ার কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে চীনের শেনজেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের কাছে বিক্রি করেছে। আর ৩৫ শতাংশ শেয়ার প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি শ্রেণির বিনিয়োগকারীদের কাছে বিক্রির জন্য প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) প্রস্তাব রাখা হচ্ছে। ৩৫ শতাংশ হিসেবে ডিএসইতে মোট ৬৩ কোটি ১৩ লাখ শেয়ার সংরক্ষিত আছে।