নিজস্ব প্রতিবেদক : আগামী জাতীয় নির্বাচনের ‘লড়াইয়ে’ বিএনপিকে অংশ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এ নির্বাচন হবে ‘ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার’। গতকাল শনিবার দুপুরে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপকমিটির আয়োজনে ইফতার সামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, পৃথিবীর অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশে যেভাবে নির্বাচন হয় বাংলাদেশেও সেভাবে নির্বাচন হবে। নির্বাচন ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার করার জন্য দরকার নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন। তখন সরকারের কোনো ভূমিকা থাকবে না। সরকার শুধু নিরপেক্ষ নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনকে বিভিন্ন সহযোগিতা দেবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন সবকিছুই থাকবে নির্বাচন কমিশনের আন্ডারে, সরকারের অধীনে কিছুই থাকবে না।
বিএনপিকে নির্বাচনে আসার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আসলে শেষ পর্যন্ত গাধা ঘোলা করে পানি খায়। আপনারা আসবেন একটু পানি ঘোলা করে। এতসবের দরকার কী! আসুন লড়াই করি। নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হই। প্রস্তুতি আপনাদের আছে, লড়াইয়ের মানসিকতা নিয়ে আসুন, নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করে কোনো লাভ নেই। ইনশাল্লাহ বাংলাদেশে একটা ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার নির্বাচন হবে।
বিএনপি মহাসচিব গণতন্ত্রের নামে দ্বিচারিতা করছেন দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, আজকে ফখরুল সাহেব গণতন্ত্রী সেজেছেন। আপনি কী ধরনের গণতন্ত্র বিশ্বাস করেন? সংসদে আপনাদের কয়েকজন সদস্য আছে অবলীলায় যা খুশি তা বলে, প্রধানমন্ত্রীসহ এই সরকারকে গালাগাল করে। বাইরে আপনারা বলেন, ভেতরে আপনাদের সদস্যরা বলেন। তারপরও এ পর্যন্ত কাউকে এজন্য কোনো খেসারত দিতে হয়নি। কারও মুখ বন্ধ করেননি স্পিকার।
আমি বলতে চাই, ফখরুল সাহেব, আপনি কোন গণতন্ত্রী? আপনি নিজে নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচিত হয়ে নিজে সংসদে যান না, অথচ অন্য যারা বিএনপির সদস্য আছেন তারা সংসদে থাকেন। আপনি সংসদ বর্জন করেছেন, এটা কোন গণতন্ত্র? গণতন্ত্রের নামে এই দ্বিচারিতা আপনি নিজেই তো করছেন, ফখরুল সাহেব। এটা কোন গণতন্ত্র? সংসদ সদস্য হয়ে আপনি সংসদে যাচ্ছেন না? গণতন্ত্রের প্রতি আপনার তাহলে আস্থাটা কোথায়?
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের শাসনামলের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, অবৈধ ক্ষমতা দখলকে বৈধতা দেয়ার অভিপ্রায়ে জিয়াউর রহমান ১৯৭৭ সালের ৩০ মে ‘হাঁ-না’ ভোটের আয়োজন করেন। তারই পদাঙ্ক অনুসরণ করে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারি কার সৃষ্টি? বহুদলীয় গণতন্ত্র না বহুদলীয় তামাশা? আজকে আজিজ মার্কা নির্বাচন কমিশন, সোয়া কোটি ভুয়া ভোটারÑএটাই বিএনপির বহুদলীয় গণতন্ত্র?
বিএনপি বহুদলীয় গণতন্ত্রের মুখোশের আড়ালে যা করেছিল, তা বাংলাদেশের মানুষ ভুলে যায়নি। তাদের ছদ্মবেশী বহুদলীয় গণতন্ত্র ছিল বহু দলীয় তামাশা। সে তামাশার গণতন্ত্র আমরা বিশ্বাস করি না। আমরা জনগণের শক্তিতে আস্থাবান। আমাদের শক্তির উৎস বাংলাদেশের জনগণ।
গণতন্ত্রের কাঠামো, গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠানগুলো বারবার বিএনপি ধ্বংস করেছে বলে দাবি করে তিনি বলেন, ‘মির্জা ফখরুল আমাদের আজকে গণতন্ত্রের ছবক দেন। কোনো বিদেশি ঋণ ছাড়াই নিজস্ব অর্থায়নে শেখ হাসিনার সোনালি ফসল পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করছি। আমরা ঋণখেলাপি নয়। বাংলাদেশে পঁচাত্তর-পরবর্তীকালে সব সরকারই ঋণখেলাপি, আওয়ামী লীগ ছাড়া। আওয়ামী লীগ যে খাতে ঋণ এনেছে, যথাসময়ে ঋণ পরিশোধ করেছে।
অন্যরা দেশকে ঋণগ্রস্ত করেছে, ঋণের টাকা পরিশোধ করেনি। ফখরুল সাহেব, আপনারা ছিলেন ঋণখেলাপি। গণতন্ত্রের কথা বলে, এদের কোনো শরম নেই। এদেশের গণতন্ত্রের কাঠামো, গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠানগুলো বারবার ধ্বংস করেছে এ বিএনপি। তাদের প্রতিষ্ঠাতা সংবিধানের সেনা আইন লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে নিজেকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষণা দিয়ে বাংলাদেশের সংবিধান, সব প্রতিষ্ঠানের প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতাকে ধ্বংস করে দেয়। জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যার মদত দিয়েছিল বলেই সেদিন খুনিরা এই দুঃসাহস দেখিয়েছিল।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সম্পাদক বলেন, এ হত্যাকাণ্ডে খুনিদের প্রশ্রয় দিয়ে খুনিদের এ দেশে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কর্ম-সম্পর্কের মধ্যে অলঙ্ঘনীয় দেয়াল তুলেছে জিয়াউর রহমান। জিয়াউর রহমান এদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কর্ম-সম্পর্কের মধ্যে অলঙ্ঘনীয় দেয়াল সৃষ্টি করে গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পাওয়ার পথকে রুদ্ধ করেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরীর সভাপতিত্বে সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, শিক্ষা ও মানবসম্পদ সম্পাদক সামসুন্নাহার চাঁপা, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায়, কেন্দ্রীয় সদস্য সানজিদা খানম প্রমুখ বক্তৃতা করেন।