প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

আড়াই বছরেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বিশ্বের ব্যয়বহুল মহাসড়ক!

ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে

ইসমাইল আলী: বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল মহাসড়ক ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে। ৫৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এক্সপ্রেসওয়েটি উদ্বোধন করা হয়েছে ২০২০ সালের ১২ মার্চ। তবে প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হয়েছে গত জুনে। ২০১৬ সালের মে মাসে শুরু হওয়ার পর থেকে এর ব্যয় বেড়েছে তিন দফা। নির্মাণকাজ সম্পন্ন করতে নিতে হয়েছে দুটি ভিন্ন প্রকল্প। এখন চলছে প্রকল্পটির ডিফেক্ট লায়াবিলিটি পিরিয়ড। তবে এরই মধ্যে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এক্সপ্রেসওয়েটি।

উদ্বোধনের মাত্র আড়াই বছর পেরুতেই এক্সপ্রেসওয়েটির বিভিন্ন পয়েন্ট মেরামত করতে হয়েছে। রোড মার্কিং ও গার্ড ওয়াল নির্মাণ, সড়কের মিডিয়ান (সড়ক বিভাজক) ও দুই পাশের আগাছা পরিষ্কার, গাছ লাগানোসহ বিভিন্ন কাজ করা হয়েছে। তবে রক্ষণাবেক্ষণ খাতে কোনো বরাদ্দ নেই প্রকল্পটিতে। এজন্য ২৯ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে চিঠি দিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক।

চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রথম অ্যাকসেস কন্ট্রোল্ড এক্সপ্রেসওয়ে হিসেবে ঢাকা-খুলনা (এন-৮) মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্পটির নির্মাণকাজ ২০১৬ সালের মে মাসে শুরু হয়েছে। ২০২০ সালের ১২ মার্চ প্রধানমন্ত্রী মহাসড়কটি উদ্বোধন করেন। প্রকল্পটি উদ্বোধনের পর থেকে জনসাধারণের জন্য খুলে দেয়া হয়। ফলে প্রতিনিয়ত ব্যবহারের কারণে সাধারণ ক্ষয়ক্ষতি (ওয়ার অ্যান্ড টিয়ার), দুর্ঘটনাজনিত ক্ষয়ক্ষতি এবং মৌসুমি বৃষ্টিপাতের প্রভাবে প্রকল্পের রক্ষণাবেক্ষণজনিত প্রয়োজনীয়তা পরিলক্ষিত হচ্ছে।

নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর এরই মধ্যে সড়কের বিভিন্ন অংশের ও অধিকাংশ স্থাপনার ডিফেক্ট লায়াবিলিটি পিরিয়ড শেষ হয়েছে। তবে প্রকল্পের মূল ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) নির্মাণপরবর্তী রক্ষণাবেক্ষণ খাত ছিল না। ফলে বিভিন্ন স্থাপনার রক্ষণাবেক্ষণের ব্যয় সম্পন্ন করা হলেও সংশোধিত ডিপিপিতে (আরডিপিপি) এ খাতে বরাদ্দ রাখা যায়নি। এ অবস্থায় গত বছর ৩ অক্টোবর সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ প্রকল্পের অনুকূলে রক্ষণাবেক্ষণ খাতে বরাদ্দ দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, যদিও এখনও ওই বরাদ্দ পাওয়া যায়নি।

চিঠিতে আরও বলা হয়, পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষ্যে ৫৫ কিলোমিটার সড়কে নিয়মিত যানবাহন চলাচলের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত গার্ড রেল, কার্বস্টোন মেরামত ও রং করা এবং সড়কের মিডিয়ান ও দুপাশে আগাছা পরিষ্কারসহ সড়কটি দৃষ্টিনন্দন করা হয়েছে। এরই মধ্যে প্রকল্পের তৃতীয় বর্ষের রক্ষণাবেক্ষণ চলছে। ফলে প্রকল্পের রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় অধিকহারে বৃদ্ধি  পেয়েছে। এ অবস্থায় সড়ক ও স্থাপনাগুলোর রক্ষণাবেক্ষণে দ্রুত অর্থ বরাদ্দ দেয়া প্রয়োজন।

চিঠিতে রক্ষণাবেক্ষণের ব্যয়ের বিবরণী সংযুক্ত করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, রক্ষণাবেক্ষণ, রোড সাইন ও গার্ড ওয়াল, বৃক্ষরোপণ, আগাছা পরিষ্কারসহ অন্যান্য কাজে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় হয়েছে গড়ে ৫২ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। এতে ৫৫ কিলোমিটারে মোট ব্যয় হয়েছে ২৯ কোটি এক লাখ টাকার বেশি।

এ প্রসঙ্গে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী একেএম মনির হোসেন পাঠান বলেন, এক্সপ্রেসওয়েটির টোল আদায় ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য গত জুনে অপরাটের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তবে এর আগে রক্ষণাবেক্ষণের বেশকিছু কাজ করা হয়েছে, বরাদ্দ না থাকায় যার বিল দেয়া যায়নি। এজন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। গত বছর এক বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হলেও বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। তাই বরাদ্দ দেয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়ে আবার চিঠি দেয়া হয়েছে।

তথ্যমতে, ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা ৫৫ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে দুটি প্রকল্প নেয়া হয়েছিল। প্রথম প্রকল্পটি নেয়া হয় ২০১৬ সালের মে মাসে। সে সময় ব্যয় ধরা হয়েছিল ছয় হাজার ২৫২ কোটি ২৮ লাখ টাকা। পরে তা বেড়ে হয় ৬ হাজার ৮৯২ কোটি পাঁচ লাখ টাকা। তবে প্রকল্পটিতে নতুন বেশকিছু অঙ্গ যুক্ত হওয়ায় বাকি কাজ শেষ করার জন্য ২০১৮ সালে নেয়া হয় দ্বিতীয় প্রকল্প, যা অসমাপ্ত কাজ সমাপ্তকরণ প্রকল্প হিসেবে বিবেচিত।

দ্বিতীয় প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয় চার হাজার ১১১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। পরে তা বেড়ে দাঁড়ায় চার হাজার ১৫১ কোটি ৮০ লাখ টাকা। অর্থাৎ দুই প্রকল্প মিলিয়ে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১১ হাজার ৪৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। এ হিসেবে এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণব্যয় বেড়েছে মোট চার হাজার ৭৯১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা।

সব মিলিয়ে এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় হয়েছে ২০০ কোটি ৮০ লাখ টাকা, যা বিশ্বে সর্বোচ্চ। যদিও প্রাথমিকভাবে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় ছিল ১১৩ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।

এদিকে উদ্বোধনের পর থেকে ফ্রি থাকলেও গত ১ জুলাই থেকে এক্সপ্রেসওয়েটি ব্যবহারের জন্য যানবাহনকে টোল দিতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে মালামাল পরিবহনকারী ট্রেইলারের জন্য সর্বোচ্চ এক হাজার ৬৯০ টাকা টোল দিতে হয়। আর বাইকের জন্য সর্বনিম্ন টোল ৩০ টাকা। এছাড়া ভারী ট্রাকে এক হাজার ১০০ টাকা, মাঝারি ট্রাকে ৫৫০ টাকা, বড় বাসে ৪৯৫ টাকা, ছোট ট্রাকে ৪১৫ টাকা, মিনিবাস ও কোস্টারে ২৭৫ টাকা, মাইক্রোবাস ও চার চাকার যানে (পিকআপ) ২২০ টাকা এবং ব্যক্তিগত গাড়ির জন্য ১৪০ টাকা টোল দিতে হয়।