করোনায় শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বব্যাপী মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি হয়েছে। আর তা আগের তুলনায় তিন-চারগুণ বেশি। করোনার সময় আত্মহত্যার প্রবণতাও বেড়েছে। হতাশা থেকেই আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ে। করোনায় হতাশা সৃষ্টির নানা কারণ ঘটেছে। কেউ চাকরি হারিয়েছেন, কেউ ব্যবসা হারিয়েছেন। কেউ স্বজন হারিয়েছেন। শুধু তাই নয়, অনেকের ভবিষ্যৎও অন্ধকার হয়ে গেছে। বাল্যবিয়ে বেড়েছে। বেড়েছে ড্রপ আউট। করোনার সময় অনেকের চাকরির বয়স চলে গেছে। তারা কী করবেন? আর এখন একই দিনে একই সময়ে ১৪-১৫টি চাকরির পরীক্ষা হচ্ছে। ফলে মানসিক চাপ, হতাশা, আত্মবিশ্বাসের অভাব, অবসাদ ও হেনস্তার শিকার হয়ে মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। বিষণœতায় যারা ভোগেন, তাদের মধ্যেও আত্মহত্যার প্রবণতা থাকে। কারণ জীবন নিয়ে তাদের মধ্যে প্রচণ্ড নেতিবাচক ধারণা কাজ করে।
আবেগময় মুহূর্তে অর্থাৎ যে বিষয়টা আরও গভীরভাবে চিন্তা করলে সমাধান হতে পারত, তা না করে অনেকে আবেগের বশবর্তী হয়ে কোনো কিছু থেকে বাঁচার জন্য আত্মহত্যার পথ বেছে নেন; যা মোটেও ঠিক নয়। যেমন অবৈধ গর্ভধারণ। হয়তো সেই নারী ভাবছেন, বিষয়টি যদি মানুষ জেনে ফেলে, তাকে মানুষ কী ভাববে? এ ভাবনা থেকে হয়তো আত্মহত্যা করেন। অথচ তিনি আত্মহত্যা না করলেও পারতেন। তিনি যদি ভুল করেই থাকেন, তা সংশোধনের উপায় ছিল। তিনি যদি প্রতারিত হয়ে থাকেন, এরও প্রতিকার ছিল। কিন্তু একটা সময় একটা বয়স মানুষকে হয়তো এত সুযোগ দেয় না। যে কারণে অনেক সময় মানুষ আত্মহত্যা করে; যা মোটেও কাম্য নয়। ভীষণ কষ্ট দেয়। আপনি সামান্য কিছু অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার জন্য আত্মহত্যার কথা ভাবছেন! আত্মহত্যা মানেই সবকিছুর সমাধান নয় বরং জীবনযুদ্ধে হার মেনে নেয়া। ইসলামে আত্মহত্যা মহাপাপ ও অত্যন্ত ঘৃণীত কাজ। আমাদের সমাজে অনেক লোক আছে, যারা জীবনযাপনের কঠিন দুঃখ-দুর্দশা ও ব্যর্থতার গ্লানি থেকে পরিত্রাণের জন্য অথবা আবেগের বশবর্তী হয়ে বেছে নেয় আত্মহননের পথ। তখন তার মধ্যে বিবেক-বুদ্ধি আত্মবোধ, মনুষ্যত্ব বলতে কিছুই থাকে না। সে তখন তার মাঝে লালন করে আত্মঘাতীপূর্ণ চিন্তা-চেতনা। ভুলে যায় নিজেকে, বুঝতে পারে না সে; ফলে আত্মহত্যা নামক জঘন্য কাজটি কেন করছে? কী লাভ হবে জীবনকে নিঃশেষ করে? সে তার জীবনে ও পরিবারে ডেকে আনে মহাবিপর্যয়। পরিশেষে বলব, সচেতন হতে হবে আমাদের অভিভাবকদের। ঘোচাতে হবে সন্তানের সঙ্গে দূরত্ব। গণমাধ্যমকে হতে হবে অনেক বেশি দায়িত্বশীল। এছাড়া রাষ্ট্রীয়ভাবে কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন। যেমন পাঠ্যপুস্তকে আত্মহত্যার কুফল সম্পর্কিত নিবন্ধ সংযোজন, প্রতিটি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা। হাসপাতালগুলোতে হটলাইন স্থাপন যেখানে যে কেউ ফোনে নিজের হতাশার কথা জানাতে পারবে এবং প্রতিকার পাবে। সভা-সেমিনারের মাধ্যমে জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে। তবে সব থেকে বেশি জরুরি অভিভাবকদের সচেতন হওয়া। আপনার সন্তান আপনার সম্পত্তি, দেশের সম্পত্তি। তাকে সুস্থ-সুন্দরভাবে বেড়ে উঠতে দিন। জীবনে অর্জিত সব সম্পদ যে সন্তানকে ঘিরে সে-ই যদি আত্মাহুতির পথ বেছে নেয় তাহলে সবকিছুই তো বৃথা। বিষয়টি নিয়ে ভাবুন, ভেবে সিদ্ধান্ত নিন। কোনটি বেশি জরুরি সন্তান না সম্পদ। তাই আসুন, নিজের জীবনকে উপভোগ করি। নিজে সচেতন হই, অপরকেও সচেতন হতে সাহায্য করি। প্রয়োজনে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিই। তাছাড়া আরেকটি উপায় হলো, একাকিত্ব ভালো না লাগলে ভ্রমণে বের হয়ে পড়ি। কে জানে, হয়তো ঘুরতে ঘুরতেই তিনি খুঁজে পাবেন জীবনের অর্থ! আত্মহত্যা করার সুযোগ তখন আর থাকবে না।
ইমরান হোসাইন
শিক্ষার্থী
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়