‘চুক্তিতেই অভিনব সুযোগ: নিন্মমানের কয়লা কিনেও উচ্চ দাম নিতে পারবে আদানি!’ শীর্ষক যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে গতকালের শেয়ার বিজে, তা পাঠকের মনোযোগ কাড়বে বলেই ধারণা। কোনো চুক্তিতে উভয় পক্ষ বিজয়ী হয় না বা সুবিধাজনক অবস্থায় থাকে না; এক পক্ষকে ছাড় দিতে হয়। এটিই বাস্তবতা। যদিও ইংরেজিতে ‘উইন-উইন সিচুয়েশন’ বলে একটা টার্ম আছে। সাধারণত সম্মানজনক চুক্তি অর্থে এটি ব্যবহার হয়ে থাকে। অর্থাৎ প্রতিপক্ষকে ক্ষতিগ্রস্ত করার কোনো মনোবৃত্তি থাকে না এতে। কিন্তু ভারতের আদানি থেকে বিদ্যুৎ আনয়নে সম্পদিত চুক্তির প্রতিটি শর্তই যেন ব্যতিক্রম। যেমন, ৪৬০০ গ্রেডের কয়লা কিনলেও ৬৩২২ গ্রেডের মূল্য নিতে পারবে আদানি, ইন্দোনেশিয়ার কয়লা কিনে বৈশ্বিক মূল্য নিতে পারবে ভারতের কোম্পানিটি, রামপালে কয়লার দাম ২৩২ ডলার, পায়রায় ২৩৭ ডলার এবং আদানি চাচ্ছে ৪০০ ডলার।
আমাদের প্রতিবেদক জানাচ্ছেন, আদানির ঝাড়খণ্ডের গড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে আগামী মাসে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ আসার কথা। তবে কয়লার দাম অনেক বেশি চাওয়া নিয়ে এরই মধ্যে শুরু হয়েছে বিতর্ক। তবে আদানির সঙ্গে ২০১৭ সালে সই করা চুক্তিতেই এ বিষয়ে ছাড় দেয়া আছে। তারা ইন্দোনেশিয়ার কম দামের কয়লা কিনে উচ্চ দাম নিতে পারবে। সম্প্রতি চুক্তি পর্যবেক্ষণ করে বিষয়টি চিহ্নিত করেছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। এজন্য চুক্তি সংশোধনে আদানিকে চিঠি দেয়া হয়েছে। গত সপ্তাহে পাঠানো চিঠিতে আদানি ও পিডিবির মধ্যে সম্পাদিত বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি (পিপিএ) সংশোধনের কথা বলা হয়েছে। চুক্তি সংশোধনের আগে আদানির বিদ্যুৎ কেনার জন্য চাহিদা দেয়া হবে না বলেও জানানো হয়।
বিদ্যুৎ খাতের নীতিগবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক বলেছেন, ‘আদানির সঙ্গে চুক্তির সময় আমাদের অভিজ্ঞতা ছিল না। তাই আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। তবে চুক্তিটি বিশ্লেষণ করে দুর্বলতা চিহ্নিত করা হয়েছে। এটা সংশোধনে কাজ চলছে।’ বিদ্যুৎ কেনার বিষয়ে পূর্ব-অভিজ্ঞতা না থাকায় দুর্বলতা থাকতেই পারে। দুর্বলতা যেহেতু চিহ্নিত করা গেছে, তাই যাতে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট প্রত্যেককে আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে।
‘নিন্মমানের কয়লা কিনেও উচ্চ দাম নিতে পারবে আদানি’ এমন খবরেই অন্যায্যতার আঁচ পাওয়া যায়। তারা যেহেতু ব্যবসা করছে তাই বেশি দাম নিতেই পারে। কিন্তু তা কতটা বেশি হবে! কেন চুক্তির ভুলে আদানির কয়লার জন্য পুরো দামই পরিশোধ করতে হবে? এখন ভুল চিহ্নিত হওয়ার পর দ্রুত পিপিএ সংশোধনের উদ্যোগ নিতে হবে। পিডিবির কর্মকর্তা বলছেন, চুক্তির শর্তের কারণে আরও সুবিধা পাবে আদানি। আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র পূর্ণ সক্ষমতায় বিদ্যুৎ দিতে প্রস্তুত থাকে, তবে পিডিবি কোনো কারণে চাহিদা দিয়েও সে অনুযায়ী যদি বিদ্যুৎ না কেনে, তবুও আদানি কয়লার পুরো মূল্যই পাবে। আমরা জানি না, এমন আজব চুক্তি অন্য দেশে সম্পাদিত হয়েছে কি না। চুক্তি সম্পাদনে যারা জড়িত, তারা হুট করেই চুক্তি করেননি। তাদের উচিত ছিল চুক্তি সম্পাদনের আগে প্রতিটি শর্ত, ধারা-উপধারা পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করা। সংশ্লিষ্টরা দায়িত্বশীল হলে আদানির কয়লার ন্যায্য দাম নিশ্চিত করা সম্ভব বলে আমরা মনে করি।