নিজস্ব প্রতিবেদক: আদার দামে অস্থিরতা কাটেনি। এক কেজি আদা কিনতে এখন গুনতে হচ্ছে ৪০০ টাকার বেশি; যা গত বছর এ সময় ছিল ৯০ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে এখন আদার দাম তিনগুণ বেশি। ঈদুল ফিতরের পর থেকে বেড়েছে কেজিতে মানভেদে ১০০ থেকে ১৪০ টাকা। পাশাপাশি গ্রীষ্ম মৌসুমের সবজির সরবরাহ ভালো থাকার পরও দাম এখনও চড়া। ঈদুল ফিতরের পর বেড়ে যায় সব ধরনের সবজির দাম। তখন থেকেই বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে সবজি। প্রতিকেজি বেগুন, করলা, বরবটি, ঝিঙা, পটোল ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মোটা দাগে ৬০ টাকার নিচে এক কেজি সবজি মিলছে না। গতকাল শুক্রবার সরেজমিনে রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
ক্রেতারা বলছেন, কয়েক মাসে বাজারে নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির উত্তাপ সব কিছুতে ছড়িয়ে পড়ছে। অবস্থা এমন যে, মাছ-মাংস ছুঁয়ে দেখতেও ভয় পাচ্ছেন নি¤œ ও নি¤œ-মধ্যবিত্তরা।
গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে জানা গেছে, সাধারণ মানের আদা ২৮০ থেকে ৩২০ টাকা বিক্রি হলেও চায়না আদা আরও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে আমদানি করা চীনা রসুনের দাম কেজিপ্রতি ২০ টাকা ৩০ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা। এছাড়া মুদি বাজারে তেল, চিনি, আটা, ময়দাসহ অন্যান্য বেশকিছু পণ্য বাড়তি দামে আটকে রয়েছে। প্রতি কেজি বোতলজাত সয়াবিন তেল ২০০ টাকা এবং চিনি ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা সরকার নির্ধারিত দামের চেয়েও বেশি। তবে আমদানির খবরে বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৫ টাকা কমেছে। এক মাসের ব্যবধানে ৪০ টাকা থেকে বেড়ে ৮০ টাকায় ওঠা পেঁয়াজ এখন বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকা কেজি।
বিক্রেতারা বলছে, বাজারে দেশি আদা থাকলেও আমদানি করা আদার সরবরাহ কম। তাই বাড়তি দাম। এ দাম আরও বেড়েছিল।
কারওয়ান বাজার থেকে পাইকারিতে আদা কিনে এনে খুচরা বিক্রি করেন এমন একজন ব্যবসায়ী বলেন, আমাদের দেশে আমদানি করা আদার প্রায় অর্ধেক আনা হয় চীনা আদা আর বাকি আদা মিয়ানমার, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনামসহ অন্যান্য দেশ থেকে। কিছুদিন ধরে বাজারে চীনা আদা আসছে না। তাই সংকট সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে এবার দেশি আদার উৎপাদনও কম হয়েছে। সব কিছু মিলিয়ে আদার দাম বাড়তি যাচ্ছে। তবে ঈদের আগে আর আদার দাম কমার সম্ভাবনা নেই।
অন্যদিকে সরবরাহ ভালো থাকার পরও সবজির দাম কমার নাম-গন্ধ নেই। দুই-একটি সবজির দাম আগের চেয়ে কিছুটা কমলেও বেশির ভাগেরই দাম কমেনি। এতে করে সবজির বাজারে এসে প্রতিটি ক্রেতাকে বাড়পতি দামের জন্য হোঁচট খেতে হচ্ছে। গতকাল বাজারে বরবটি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়, পটোল প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকায়, বেগুন প্রতি কেজি ৬০ টাকা, ঢ্যাঁড়স প্রতি কেজি ৬০ টাকা, করলা প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, মূলা প্রতি কেজি ৬০ টাকা, শসা প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, কাঁকরোল প্রতি কেজি ৮০ টাকা, পেঁপে প্রতি কেজি ৬০ টাকা, কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ১৬০ টাকা, টমেটো প্রতি কেজি ৬০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৭০ থেকে ৮০ টাকা, কাঁচা কলা প্রতি হালি ৪০ টাকা এবং মিষ্টিকুমড়া কেজি ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মহাখালী বাজারে বাজার করতে আসা গার্মেন্ট কর্মী তৌহিদুল ইসলাম বলেন, বাজারে বলতে গেলে ৬০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই। যেটারই দাম করা হচ্ছে; তার দামই ৬০ টাকা বা তার চেয়ে বেশি। প্রতিটি সবজির এত দাম হলে আমরা সাধারণ মানুষ কিনতে পারব না। আজ প্রায় এক মাস ধরে প্রতিটি সবজির দাম বাড়তি যাচ্ছে। আগে যদি এক কেজি সবজি কিনতাম এখন বাড়তি দামের জন্য আধা কেজি করে কিনি। কিন্তু বাজারে এলে হিসাবে মেলে না।
সবজির বাড়তি দামের বিষয়ে মালিবাগ বাজারের সবজি বিক্রেতা আহমদ আলী বলেন, কিছুদিন আগে করলা, বরবটি, ঢ্যাঁড়স, বরবটি ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। সেই তুলনায় এগুলোর দাম কিছুটা কমেছে। মূলত শীতের সময় সবজির দাম কম থাকে, অন্য সময় একটু বেশি থাকে। তবে এবার একটু বেশি বাড়তি দাম যাচ্ছে সবজির।
এদিকে, টানা কয়েক সপ্তাহ থেকে অস্থির ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের বাজার। প্রতি কেজি ব্রয়লার এখন ২৩০-২৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি হালি ডিমের দাম ৫০ টাকা। সেই উত্তাপ এখন ছড়িয়েছে মাছের বাজারেও। প্রকারভেদে সাধারণ চাষের মাছগুলোর দাম কেজিতে বেড়েছে প্রায় ৫০-২০০ টাকা পর্যন্ত। ইলিশ-চিংড়ির পাশাপাশি দেশি (উš§ুক্ত জলাশয়ের) মাছের দাম কেজিতে বেড়েছে ২০০-৫০০ টাকা পর্যন্ত।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, চাষের পাঙাস-তেলাপিয়া থেকে শুরু করে দেশি প্রজাতির সব ধরনের মাছের দাম বেড়েছে। আগে বাজারে প্রতি কেজি পাঙাস বিক্রি হতো ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা, যা এখন ২২০ থেকে ২৩০ টাকায় ঠেকেছে। অন্যদিকে তেলাপিয়া মাছের কেজি হয়েছে ২২০ থেকে ২৫০ টাকা, যা আগে ১৮০-২০০ টাকায় কেনা যেত।
বাজারে সাধারণত গরিব ও নি¤œ-মধ্যবিত্ত শ্রেণির ক্রেতারা ব্রয়লার মুরগি এবং পাঙাস-তেলাপিয়া মাছের পরে বেশি নির্ভরশীল। তাদের মধ্যে অনেকে এসব নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
রামপুরা বাজারে রিকশাচালক কুদ্দুস মিয়া বলেন, ‘একটা দিন যে ভালো-মন্দ খাবো, সেই উপায় নেই। এগুলো দেখার কেউ নেই। গরিবকে নিয়ে কেউ ভাবে না। দিনে যে কয় টাকা আয় করি, তার মধ্যে যদি ২৫০ টাকার মাছ কিনি, অন্য খরচ কী দিয়ে হবে?’
রামপুরা বাজারে মাছ বিক্রেতা এনামুল জানান, তিনি প্রতি কেজি চিংড়ি বিক্রি করছেন ৬০০-১০০০ টাকায়; যা আগে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে বিক্রি করতেন। অন্যান্য চাষের মাছগুলোও বেশ বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। তাজা রুই, কাতলা, মিরগেল বিক্রি হচ্ছে ৩৪০ থেকে ৩৬০ টাকা কেজিতে, যা আগে ২৮০ থেকে ৩২০ টাকা ছিল।