শেয়ার বিজ ডেস্ক: আন্তর্জাতিক বাজারে টানা আট মাসের বেশি সময় পর কমল স্বর্ণের দাম। গত সোমবার স্বর্ণের দাম কমেছে শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ। ২০২২ সালের মাঝামাঝির পর এমন খবর পাওয়া গেল। খবর: রয়টার্স।
গত সোমবার আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স (এক আউন্স=২৮ দশমিক ৩৫ গ্রাম) স্বর্ণ শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৯০৪ ডলার ৮৭ সেন্টে। যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম শূন্য
দশমিক ৬ শতাংশ কমে হয়েছে এক হাজার ৯০৯ ডলার ৯০ সেন্ট।
স্বর্ণের আন্তর্জাতিক বাজার বিশ্লেষণকারী বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত বছরের মাঝামাঝি থেকে লাগামহীনভাবে ডলারের মূল্যমান বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছিল স্বর্ণের
বাজারেও। এ কারণে মূল্যবান ও আকর্ষণীয় এ ধাতুটির দামও ছিল চড়া।
এছাড়া গত বছরের জুনে ইউক্রেন আগ্রাসনের জন্য মস্কোর ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে রাশিয়ার সোনার ওপর নতুন আমদানি নিষিদ্ধ করছে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও কানাডা। এ ঘোষণার প্রভাব পড়ে আন্তর্জাতিক বাজারে। ২০২১ সালে রাশিয়া ১৫ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার (এক হাজার ৫৪০ কোটি ডলার) মূল্যের সোনা রপ্তানি করে। ২০২২ সালে দেশটির ধনকুবেররা পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার আর্থিক প্রভাব কমাতে বুলিয়ন (সোনা-রুপার বাট) কিনতে শুরু করেন।
২০২২ সালের সেপ্টেম্বরের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোয় ঋণের বিপরীতে নীতি সুদের হার বাড়ানোর নির্দেশ দেয় দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেম বা ফেড। বিশ্লেষকদের মতে, সেই নীতির সুফল এখন পাওয়া যাচ্ছে।
গত আট মাসের মধ্যে ২৪ সেপ্টেম্বর অল্প সময়ের জন্য আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম কমে। সেদিন আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স সোনা ২৯ ডলার বা ১ দশমিক ৭৫ শতাংশ কমে এক হাজার ৬৪৩ ডলার ৯০ সেন্টে নামে। এ দর ছিল দুই বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে এ ধাতুর দাম এক হাজার ৬৫০ ডলারের নিচে নেমে এসেছিল। তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০২২ সালের ১২ আগস্টও একবার স্বর্ণের দাম কমে। এদিন প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ছিল এক হাজার ৮০১ দশমিক ৮২ ডলার। এছাড়া বছরের প্রায় পুরোটা সময় স্বর্ণের দাম বাড়তি ছিল। বিশ্বমন্দার আশঙ্কায় ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার বৃদ্ধি কিছুটা শ্লথ হওয়ায় স্বর্ণে বিনিয়োগ বাড়ে। এ কারণে গত অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে স্বর্ণের দাম প্রায় ২০০ ডলার বেড়ে যায়।
দাম কমে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বজুড়ে বেড়েছে স্বর্ণ কেনার হার। গতকাল বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের স্বর্ণ কেনাবেচা-সংক্রান্ত সূচকের উন্নতি হয়েছে শূন্য দশমিক ২ শতাংশ। স্বর্ণ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি হাই রিজ ফিচারসের বাণিজ্য শাখার পরিচালক ডেভিড মেগের বলেন, স্বর্ণের এ মূল্যহ্রাস বাণিজ্যিকভাবে অবশ্যই আমাদের জন্য লাভজনক। যদি এটি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে একদিকে যেমন ডলারের মূল্যমান নিয়ন্ত্রণে আসবে, তেমনি স্বর্ণের বাজারও চাঙা হবে।
ডেভিড মেগের আরও বলেন, বুলিয়ন মার্কেটে চড়া প্রবণতা রয়েছে। এদিন স্বর্ণের
দরপতন হয়েছে। তবে একে সাময়িক হিসেবে দেখছি আমরা। ডলারের দাম নিন্মমুখী হয়েছে, সেই সঙ্গে মূল্যস্ফীতি স্থির হয়েছে। ফলে স্বর্ণের বাজার ইতিবাচক থাকবে বলে আমরা মনে করছি।
স্বর্ণের আন্তর্জাতিক বাজারের শীর্ষস্থানীয় ক্রয়াদেশ না হলেও প্রতি বছর নতুন চান্দ্র বর্ষের সময় বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ চীনে ব্যাপক হারে স্বর্ণ কেনাবেচা হয়। প্রায় এক মাস ধরে চলে নতুন চান্দ্র বর্ষের উদ্যাপন। চলতি বছর এ উৎসব শুরু হবে ২১ জানুয়ারি। এ উৎসবে স্বর্ণ কেনাবেচার হারও ব্যাপকভাবে বাড়বে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। শূন্য কভিড নীতির
কারণে দেশটিতে ২০২২ সালের প্রায় পুরো সময় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মন্থর ছিল। তবে ২ ডিসেম্বর থেকে সব বিধিনিষেধ থেকে সরে আসার পর থেকে চীনের পাশাপাশি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক তৎপরতাও বাড়ছে।