প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

আরআইএসের গবেষণা প্রতিবেদন: লালফিতায় আঞ্চলিক বাণিজ্য

 

শেয়ার বিজ ডেস্ক: ভারত, নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশের মধ্যকার আঞ্চলিক বাণিজ্যিক করিডরে পণ্য পরিবহনে অসম্ভব আমলাতান্ত্রিক জটিলতা রয়েছে। পাশাপাশি এ প্রক্রিয়াটি ভীষণ সময়সাপেক্ষ বলে এক সমীক্ষায় দেখানো হয়েছে। খবর বিবিসি।

দিল্লিভিত্তিক থিংকট্যাংক আরআইএস বা রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম ফর ডেভেলপিং কান্ট্রিজের গবেষণায় দেখানো হয়েছে, প্রতিবেশী এই দেশগুলোর মধ্যে পণ্য পরিবহনে কখনও কখনও এক মাসের মতো সময় লেগে যাচ্ছে, পেরোতে হচ্ছে প্রায় ১০-১৫টি ধাপ।

সীমান্ত বাণিজ্যের এই বেহাল দশা নিয়ে আরআইএস যে গবেষণাটি করেছে, তা কমিশন করেছিল এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক এবং জাতিসংঘের সংস্থা এসক্যাপ।

এ গবেষণাতেই দেখা গেছে, ভারত-নেপাল-ভুটান ও বাংলাদেশ এই চারটি দেশের মধ্যে যে প্রধান তিনটি বাণিজ্যিক করিডর আছে, তার সবগুলোতেই পণ্য চলাচলে নানা ছাড়পত্র পেতে ভীষণ দেরি হয়, আমদানিকারী-রফতানিকারী উভয় পক্ষকেই জোগাড় করতে হয় অজস্র নথি ও কাগজপত্র।

গবেষণা প্রতিবেদনটির মূল প্রণেতা ও আরআইএসের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. প্রবীর দে বলেন, নেপালের কাঁকড়ভিটা থেকে বাংলাদেশের ফুলবাড়িতে একটা পণ্য রফতানি করতে ৭৪টি ডকুমেন্ট লাগছেÑযা ভাবাই যায় না!

আর শুধু এতগুলো ডকুমেন্টই নয়, তার অনেক ফটোকপিও লাগে, সামলাতে হয় অন্তত ১৪-১৫ কর্মকর্তাকে। সব মিলিয়ে ট্রাকড্রাইভার ও কাস্টম হাউস এজেন্টদের হিমশিম খেয়ে হয়। এক জায়গাতেই প্রচুর সময় লাগে।

ফলে বাংলাদেশ থেকে একটা গাড়ির ব্যাটারি নেপালে রফতানি করতে গড়ে লেগে যাচ্ছে ২৯ দিনেরও বেশি, খরচও হয় অস্বাভাবিক বেশি। অথচ এই করিডরটা মাত্র ৫৪ কিলোমিটার লম্বা, যা পাড়ি দিতে ঘণ্টাখানেকের বেশি সময় লাগার কথা নয়।

প্রবীর দে বলেন, এর মধ্যে ভারতের অংশে কিন্তু বেশি সময় লাগছে না। কিন্তু যেহেতু অন্য তিনটি দেশে রফতানি সংক্রান্ত প্রক্রিয়ার ডিজিটাইজেশন এখনও প্রায় প্রাথমিক পর্যায়ে, তাই নথিপত্রের ঝামেলা রয়েই যাচ্ছে।

তিনি বলছিলেন, অ্যাসিকোডা নামে একটি সফটওয়্যারের সাহায্যে আমদানি-রফতানির হিসাব এখন পুরোটা কম্পিউটারেই ধরে রাখা সম্ভব, তার জন্য ফাইলপত্র রক্ষণাবেক্ষণের কোনো দরকার নেই।

কিন্তু সমস্যা হলো, ভারত ছাড়া বাকি তিনটি দেশে এই সফটওয়্যার থাকলেও কম্পিউটার চালানোর মতো উপযুক্ত লোকবলের অভাব আছে; তাই নথিপত্রের ঝামেলা রয়েই গেছে। আর এ সমস্যাটা সবচেয়ে প্রকট ভুটানে।

নথিপত্রের পাশাপাশি দেরির আর একটা বড় কারণ এলসি হিসাব  খুলতে দেরি হওয়া। অথচ এটা ছাড়া আমদানি-রফতানির প্রক্রিয়া শুরুই করা মুশকিল।

আর বিশেষ করে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সীমান্তে উপযুক্ত অবকাঠামোর অভাব ও শুল্ক বিভাগে সমন্বয়ের অভাবকেও দেরির কারণ বলে চিহ্নিত করছেন গবেষকরা।

ড. দে যেমন বলেন, ভুটান থেকে বাংলাদেশের ফুড প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রির জন্য কমলালেবু আসে বাংলাবান্ধা সীমান্ত দিয়ে; অথচ সেখানে রাস্তাঘাট ভালো নয়, বিদ্যুৎ নেই, হ্যান্ডলিং চার্জও অত্যন্ত বেশি।

ঢাকা ও চট্টগ্রামে কাস্টম হাউস এজেন্টদের মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই, সার্বিকভাবে নিয়ন্ত্রণেরও অভাব আছে বলে জানান তিনি।

বালিতে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সম্মেলনে সদস্য সব দেশই অঙ্গীকার করেছে পেপারলেস ট্রেড বা কাগজমুক্ত বাণিজ্যের পথে এগোনোর, যাতে সব নথিই থাকবে অনলাইনে।

কাঁকড়ভিটা, ধুলাবাড়ি বা বাংলাবান্ধায় ট্রাকড্রাইভারদের হাতে তাড়া তাড়া কাগজের বান্ডিল আর ভেতরে পচতে শুরু করা কমলালেবুর বাক্স এই চেনা দৃশ্য কিন্তু সহজে পাল্টানোর লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না!

যদিও দক্ষিণ এশিয়া আঞ্চলিক জোট বা সার্কভুক্ত দেশের বাণিজ্যমন্ত্রীরা সব সময়ই পারস্পরিক বাণিজ্য বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে থাকেন।

এদিকে, এ অঞ্চলের বাণিজ্যের ক্ষেত্রে মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপালের (বিবিআইএন) মোটর ভেহিক্যাল চুক্তি সম্পাদনে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে ভুটানের সংসদে আপত্তির কারণে। এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিবিআইএনের অন্য সদস্য রাষ্ট্র ভারত, বাংলাদেশ ও নেপাল।

ভুটান সংসদ সোংডুর উচ্চকক্ষে গত নভেম্বরে উপস্থাপন করা হয়েছিল চুক্তিটি অনুমোদনের জন্য। আলোচনার পর ভোটাভুটি। ২৫ সদস্যের মধ্যে চুক্তির পক্ষে ভোট মাত্র দুটি। বিপক্ষে ১৩, অনুপস্থিত চার এবং বাকি সদস্যরা ভোট প্রদানে বিরত থাকেন। ভুটানের সংসদ অনুমোদন না দেওয়ায় চুক্তিটি এখন অচল। দক্ষিণ এশিয়ার চার দেশের অর্থনৈতিক-বাণিজ্যিক বিকাশের নিরবচ্ছিন্ন সুলভ সড়ক যোগাযোগের পথ বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

চার দেশের মধ্যে সড়কপথে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে ২০১৬ সালের ১৫ জুন এক চুক্তিতে সই করেন পরিবহনমন্ত্রীরা।