নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকার পতন আন্দোলনে জনগণকে জেগে ওঠার ডাক দিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আপনারা জেগে উঠেছেন, বাংলাদেশের মানুষ জেগে উঠেছে। এখন আমাদের আরও বেশি করে জেগে উঠতে হবে। আমরা আজকে সেই প্রস্তুতি নিই.. আসুন আমরা জেগে উঠি। গতকাল বুধবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচির সমাপ্তি টেনে সদ্য কারামুক্ত বিএনপি মহাসচিব এ আহ্বান জানান।
মির্জা ফখরুল বলেন, এখন বাংলাদেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে তাদের জাগিয়ে তুলে আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। সংবাদ হচ্ছে এটাই, আজকে বাংলাদেশের বিশিষ্ট নাগরিকেরা তারা এগিয়ে আসতে শুরু করেছেন, তারা দেশে যে অন্যায় হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে ৬০ জন দেশের বরেণ্য নাগরিক বিবৃতি দিয়েছেন। আমি তাদের এজন্য ধন্যবাদ জানাতে চাই, কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই। আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই আমাদের মিডিয়া-গণমাধ্যমের সব কর্মী ভাইদের তারা জনগণের আন্দোলনের খবর প্রচার করে জনগণকে জাগিয়ে তুলছেন। আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই, দেশের সব মানুষকে যারা আজকে আমাদের এই গণ-আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে মানুষের অধিকারকে ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করছেন।
নয়াপল্টনের সড়কে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত, নির্দলীয় সরকার গঠন, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ১০ দফা দাবিতে এই অবস্থান কর্মসূচি করে বিএনপি। ঢাকা ছাড়াও দেশের সব বিভাগে একই সময়ে এই কর্মসূচি পালিত হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ নিজেকে রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিচয় দেয়। আমরা জানি যে, তারা অত্যন্ত পুরনো পরিচিত দল। কিন্তু এখন তারা সম্পূর্ণভাবে তার রাজনৈতিক অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলেছে। আওয়ামী লীগ গণবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সেজন্য তাকে এখন পুলিশের ওপর নির্ভর করে, আমলাদের ওপর নির্ভর করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা জোর করে দখল করে রাখতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, ২৭ দফা রাষ্ট্র সংস্কারের কর্মসূচি দেয়া হয়েছে। আমরা খুব পরিষ্কার করে বলেছি, এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে হবে। এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের মধ্য দিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশনের মধ্য দিয়ে নতুন নির্বাচন করতে হবে। আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রের সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে, তারা রাষ্ট্রকে ধ্বংস করে দিয়েছে। সেজন্য আমরা বলেছি, রাষ্ট্রকে সংস্কার করতে হবে। রাষ্ট্রের সংস্কারের বিভিন্ন বিষয় যেমন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য আনা, তাদের মেয়াদ দুই বার নির্ধারণ করাসহ বিভিন্ন সংস্কারের দিকগুলো তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।
রাজধানীতে সাড়ে তিন ঘণ্টাব্যাপী অবস্থান কর্মসূচিতে বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনের হাজারো নেতাকর্মী অংশ নেন। ফকিরেরপুল বাজার থেকে কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল রেস্তোরাঁ পর্যন্ত দীর্ঘ সড়কে পলিথিন বিছিয়ে নেতাকর্মীরা বসে এই কর্মসূচি পালন করেন।
কারাগারে আটক বিএনপি নেতা আবদুস সালাম, রুহুল কবির রিজভী, খায়রুল কবির খোকন, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, ফজলুল হক মিলন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, এবিএম মোশাররফ হোসেন, খন্দকার আবু আশফাক, আবুল হোসেন, সেলিম রেজা হাবিব, যুবদলের সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, উলামা দলের শাহ নেছারুল হক, মৎস্যজীবী দলের রফিকুল ইসলাম মাহতাবসহ বন্দি নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবি জানান মির্জা ফখরুল।
সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা জানি, এই সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকলে এই ১০ দফা মানবে না। তাই আমাদের সামনে একটিই চ্যালেঞ্জ এই সরকারকে বিদায় করতে হবে। আগামী দিনে গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারের পতন ঘটাতে হবে। আজকে এই সরকার শুধু বাংলাদেশের জনগণের কাছে নয়, আন্তর্জাতিকভাবেও আজকে ধিকৃত।