শেয়ার বিজ ডেস্ক : রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো অস্ত্রের রমরমা ব্যবসায় মেতে উঠেছে। গত ফেব্রুয়ারিতে রুশ সামরিক বাহিনী ইউক্রেন আক্রমণ শুরুর পর থেকে এ অঞ্চলে যুদ্ধের রসদের (অস্ত্র) ঝনঝনানি বেড়েই চলছেই। মূলত রাশিয়াকে সায়েস্তা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের দেশগুলো ইউক্রেনকে আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি অস্ত্র এবং সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করছে। যেখানে সরাসরি অস্ত্র বিক্রির প্রতিযোগিতায় নেমেছে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো। খবর: রয়টার্স।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলছে আট মাস ধরে। এখনও যুদ্ধ থামার লক্ষণ নেই বরং ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন বন্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধ চালাচ্ছে কিয়েভ। এতে রসদ সরবরাহ করছে পশ্চিমা দেশগুলো। ফলে এ যুদ্ধকে কেন্দ্র করে পূর্ব ইউরোপের সমরাস্ত্রশিল্পের চিত্র পুরোটাই বদলে গেছে। অঞ্চলটির বিভিন্ন দেশের সমরাস্ত্র সরঞ্জাম নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যস্ততা বেড়েছে কয়েকগুণ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, পূর্ব ইউরোপের অস্ত্রশিল্প, যেমন বন্দুক, আর্টিলারি শেল ও অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ এমন গতিতে এগোচ্ছে, যা স্নায়ুযুদ্ধের পর থেকে দেখা যায়নি। ফলে চলমান যুদ্ধ অস্ত্র ব্যবসায় পূর্ব ইউরোপের শক্ত অবস্থান তৈরি করছে।
কিয়েল ইনস্টিটিউট ফর দ্য ওয়ার্ল্ড ইকোনমির তথ্য বলছে, গত ২৪ জানুয়ারি ও ৩ অক্টোবরের মাঝে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য ইউক্রেনকে সরাসরি সামরিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেয়। এরপর ইউক্রেন তৃতীয় সর্বোচ্চ সামরিক সহায়তা পাচ্ছে পোল্যান্ড থেকে। এর ধারাবাহিকতায় চেক প্রজাতন্ত্র রয়েছে ৯ নম্বরে। কিয়েভকে বিপুল সহায়তা দিচ্ছে পূর্ব ইউরোপের অন্য দেশগুলোও। এতেই ফুলেফেঁপে উঠছে এ অঞ্চলটির সমরাস্ত্রশিল্প।
রাশিয়ার ব্যাপারে এখনও সতর্ক থাকলেও সোভিয়েত যুগের ওয়ারশ চুক্তির আওতায় কয়েকটি সাবেক দেশ ইউক্রেনকে আঞ্চলিক নিরাপত্তা ইস্যুতে সাহায্য করছে। প্রায় ডজনখানেক সরকারি ও সংশ্লিষ্ট কোম্পানির কর্মকর্তা এবং বিশ্লেষক যারা রয়টার্সের সঙ্গে কথা বলেছেন, তারা বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ এ অঞ্চলের অস্ত্রশিল্পের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করেছে।
পোলিশ আর্মামেন্টস গ্রুপের (পিজিজেড) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেবাস্তিয়ান চোয়ালেক বলেন, ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধের বাস্তবতা ও প্রতিরক্ষা বাজেটে ব্যয় বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অনেক দেশের মনোভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। ফলে অস্ত্রের নতুন বাজারে প্রবেশ এবং আগামীতে রপ্তানি আয় বাড়ানোর একটি সত্যিকারের সুযোগ রয়েছে।
দেশটির রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পিজিজেড অস্ত্র ও গোলাবারুদ তৈরির ৫০টিরও বেশি কোম্পানি নিয়ন্ত্রণ করছে। সাঁজোয়া যান থেকে শুরু করে মনুষ্যবিহীন এয়ার সিস্টেম পর্যন্তও রয়েছে তাদের অস্ত্র তৈরির তালিকায়। আরও কয়েক ডজন কোম্পানিতে অংশীদারিত্ব রয়েছে এ পিজিজেডের।
তিনি আরও বলেন, আগামী দশকে আরও ১ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে। এটি যুদ্ধের আগের পরিকল্পনার চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি। বিশেষ করে রাশিয়ার মিত্র বেলারুশের সীমান্ত-লাগোয়া অংশের নিরাপত্তার বিষয়টিকেও গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে এ ক্ষেত্রে।
অন্যান্য দেশের মতো পোল্যান্ড, সেøাভাকিয়া ও চেক প্রজাতন্ত্র সামরিক সক্ষমতা বাড়াতে অস্ত্র তৈরিতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, দেশগুলোর সরকারি কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট কোম্পানির সূত্রে জানা যাচ্ছে, তারা লোকবল নিয়োগও বাড়িয়েছে এ খাতে।
চোয়ালেক বলেন, পিজিজেড ২০২৩ সালে এক হাজার পোর্টেবল পিওরুন ম্যানপ্যাড এয়ারডিফেন্স সিস্টেম তৈরি করবে, তবে সবই ইউক্রেনের জন্য নয়। ২০২২ সালে ৬০০ এবং এর আগের বছর ৩০০ থেকে ৩৫০ পোর্টেবল পিওরুন ম্যানপ্যাড এয়ারডিফেন্স সিস্টেম তৈরি করেছিল সংস্থাটি।
কিয়েল ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ক্রিস্টোফ ট্রেবেশ বলেন, ‘পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো ইউক্রেনকে যথেষ্ট সমর্থন করে। একইসঙ্গে এটি তাদের সামরিক উৎপাদন শিল্প গড়ে তোলার বড় সুযোগ।’ তিনি বলেন, ইউক্রেন এরই মধ্যে চেক কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে প্রায় ৫০ বিলিয়ন ক্রাউনের (২.১ বিলিয়ন ডলার) অস্ত্র এবং সরাঞ্জাম পেয়েছে, যার মধ্যে ৯৫ শতাংশ বাণিজ্যিক সরবরাহ ছিল।