প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

ইফতারসামগ্রী সাধারণ মানুষের জন্য সুলভ করুন

রমজান মাসের রোজা পালন ইসলামেরে অপরিহার্য বিধান।  মানুষের দৈহিক, মানসিক, আত্মিক, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক উন্নয়নে এ মাসের রোজা অত্যন্ত ফলপ্রসূ। সংযম, সহিষ্ণুতা ও আত্মশুদ্ধির অনন্য চেতনায় ভাস্বর মাহে রমজান। পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে পবিত্র রমজান মাস, রমজান মাসের রোজা ও অন্যান্য ইবাদত কতটা মর্যাদা ও গুরুত্বপূর্ণ তা সহজেই অনুমেয়। পবিত্র কোরআনের আলোকে জীবন গঠনের একটা প্রশিক্ষণ হয় মাহে রমজানে। আত্মিক উন্নয়ন, পবিত্রতা অর্জন ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য রমজানের রোজার কোনো তুলনা হয় না।

খোদাভীতি অর্জন রোজার মূল উদ্দেশ্য। তাই এটি প্রত্যাশিত মুসলিমরা সব ধরনের পাপাচার, অন্যায়, অপরাধ, অপকর্ম, অশ্লীলতা, অনিয়ম, দুর্নীতি থেকে মুক্ত থাকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে।

এবার এমন একসময় মাহে রমজান এসেছে, যখন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের সংঘবদ্ধ হয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি করে এক ভয়াবহ সংকট সৃষ্টি করেছে। অথচ বিভিন্ন দেশে অন্যান্য ধর্মের ধর্মীয় উৎসব উপলক্ষে ব্যবসায়ীরা জিনিসপত্রের দাম কমিয়ে কিংবা বিশেষ ছাড় দিয়ে থাকে। এটা সাধারণ মানুষকে খুশি করার জন্য তারা করে। আমাদের দেশে এর ব্যতিক্রম। রমজানকে উপলক্ষ করে কতিপয় ব্যবসায়ী অতি মুনাফার লোভে জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেয়। ব্যবসায়ীদের এ আচরণ অত্যন্ত দুঃখজনক।

সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমের দেশের সরকারগুলো জনগণের  ভোগান্তি লাঘবে না ব্যবস্থা নেয়। আমাদের দেশে রমজানে যেসব পণ্যের দাম বাড়ে, সেগুলোর শুল্ক কমানো হয়েছে; যাতে যথাসময়ের পণ্য আমদানি করা সম্ভব হয়। সাম্প্রতিক সময়ে দেশে কোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে। এটি যেমন সত্য, তেমনি এ সত্য, সাধারণ মানুষ প্রকট অর্থসংকটে আছে। সীমিত আয়ের শ্রমজীবীরা দুই বেলা অন্নের সংস্থান করতে গলদঘর্ম হচ্ছেন। বেশিরভাগ মানুষ খাদ্য তালিকা থেকে মাছ, গোশত, ডিম, দুধ, এমনকি তিন বেলার জায়গায় এক বেলা আহার বাদ দিতে বাধ্য হয়েছে।

সাধারণ মানুষ বিশেষ করে ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের কষ্ট বেড়েছে। রোজায় ব্যবহার বেড়ে যায়, এমন সব নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। আমাদের প্রতিবেদক জানাচ্ছেন, ছোলা-ডালের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকলেও বাজারে ইফতারের অন্যান্য সামগ্রীর দাম চড়েছে। ফল থেকে শুরু করে সালাদের সবজি কিংবা ট্যাং, নিউট্রি সি প্রভৃতি শরবতে গুঁড়োসহ সব পণ্যের দাম বাড়তি। রোজার আগের দিন ক্রেতারা স্বস্তি অনুভব করতে পারেননি নিত্যপণ্যের বাজারেও।

বিদ্যমান বাস্তবতায় বিশেষ করে এই রমজানে হতদরিদ্র ও সীমিত আয়ের মানুষের পাশে দাঁড়ানো সরকার, বিত্তবান সম্প্রদায়ের অপরিহার্য কর্তব্য। সহমর্মিতার প্রধান ক্ষেত্র হচ্ছে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল এবং ভোক্তাসাধারণের ক্রয়ক্ষমতার নাগালে রাখা। রোজাকে উপলক্ষ করে অতিমুনাফা করার মনোবৃত্তি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। যথাসম্ভব কমিয়ে আনতে হবে নিত্যপণ্য ও ইফতারসামগ্রীর দাম। মনে রাখতে হবে ইসলাম নিছক অনুষ্ঠানসর্বস্ব ধর্ম নয়, এর মূল বাণীই হচ্ছে মানবতার উৎকর্ষ সাধন। পবিত্র রমজানে মুসলমানের জীবন-জীবিকার সর্বত্র সততা, সংযম ও পবিত্রতা চর্চা শুরু হোক, এটিই প্রত্যাশা।