প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

ঈদের পর আরেক দফা বাড়ছে বিদ্যুতের দাম!

নিজস্ব প্রতিবেদক: লোকসান কমানো ও ভর্তুকির চাপ সামাল দিতে আরেক দফা বিদ্যুতের দাম বাড়াতে যাচ্ছে সরকার। এর আগে জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন ধাপে পাঁচ শতাংশ হারে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়। এবারও গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম পাঁচ শতাংশ বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে চলতি মাসের শেষ দিকে শুরু হচ্ছে রমজান মাস। তাই ঈদুল ফিতরের পর আগামী মাসে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দেয়া হতে পারে।

সূত্রমতে, চলতি বছরের শুরু থেকেই গ্রাহক পর্যায়ে বাড়ছে বিদ্যুতের দাম। ১২ জানুয়ারি প্রথম বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির ঘোষণা দেয়া হয়। যদিও তা ১ জানুয়ারি থেকেই কার্যকর দেখানো হয়। এরপর ফেব্রুয়ারি ও মার্চে আরও দুই দফা বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করা হয়। সব মিলিয়ে তিন ধাপে মোট ১৫ দশমিক ৭১ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া ডিসেম্বর ও ফেব্রুয়ারিতে বিদ্যুতের বাল্ক পর্যায়ে দাম যথাক্রমে ১৯ দশমিক ৯২ ও আট শতাংশ বাড়ানো হয়। অর্থাৎ মোট বাড়ানো হয়েছে ২৯ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

বিদ্যুতের বাল্ক মূল্য বৃদ্ধির পরই মূলত গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করে বিতরণ কোম্পানিগুলো। তবে গণশুনানি উপেক্ষা করে সরকারের নির্বাহী আদেশে জানুয়ারিতে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়। এর পরপরই বাড়ে গ্যাসের দাম। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় আরও বেড়ে যায়। সে ঘাটতি মেটাতে বাল্ক বিদ্যুতের দাম আরও বাড়ানো হয়, যার প্রভাবে লোকসানে রয়েছে বিদ্যুৎ বিতরণকারী কোম্পানিগুলো।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লোকসান কমানোর প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবেই আরেক দফা বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির চিন্তা করা হচ্ছে। তবে রমজান সামনে আসায় সে ঘোষণা আসবে এপ্রিলে। ঈদের পরে দাম আরও পাঁচ শতাংশ বৃদ্ধির ঘোষণা আসতে পারে।

জানতে চাইলে ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকো) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. কাওসার আমীর আলী শেয়ার বিজ বলেন, ডেসকো যে বিদ্যুৎ কেনে তাতে গড়ে ব্যয় হয় আট টাকা ২৫ পয়সা। এর সঙ্গে হুইলিং চার্জ, বিতরণ ব্যয় ও লোকসানসহ সব ব্যয় যোগ করে বিদ্যুতের সরবরাহ ব্যয় পড়ে ৯ টাকা ৩৭ পয়সা। তবে বর্তমানে রিটেইল ট্যারিফের (গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম) যে অবস্থা, তা আর ৫০-৬০ পয়সা বাড়ানো দরকার। তা হলে ডেসকো ব্রেকইভেনে চলে আসবে।

পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘সরকার একসময় বিদ্যুতে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা ভর্তুকি দিত। এখন জ্বালানির মূল্য বাড়ার কারণে সে ভর্তুকি হয়ে গেছে ৪০ হাজার কোটি টাকা। সরকারের তো সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সরকারের আরও অগ্রাধিকারমূলক খাত রয়েছে। বিদ্যুতের দাম যা-ই হোক, অর্ধেকের কম দামে কৃষকদের বিদ্যুৎ দেয়া হচ্ছে। এরকম অনেক জায়গা আছে যেখানে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হয়। এটা অনেক বড় চাপ।’

প্রসঙ্গত, গত ডিসেম্বরে বিদ্যুতের গড় বাল্ক মূল্য ছিল পাঁচ টাকা ১৭ পয়সা। দুই দফা বাড়িয়ে তা ছয় টাকা ৭০ পয়সা করা হয়েছে। তবে বিদ্যুতের সবররাহ ব্যয় এরই মধ্যে বেড়ে ১০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এতে এখনও লোকসানে রয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। আর তিন দফা বৃদ্ধির পর গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম সাত টাকা ১৩ পয়সা থেকে আট টাকা ২৫ পয়সা দাঁড়িয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম গত ডিসেম্বরে ২০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এখন বিতরণ সংস্থাগুলো ভোক্তা পর্যায়ে ২০ শতাংশ না বাড়ালে তো তারা পিডিবির মতো লোকসানে পড়ে যাবে। এই চিন্তা করেই আরেক দফা বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হবে। তা না বাড়ালে তো সমন্বয় হবে না।’