প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

উচ্চ মাধ্যমিকে পাসের হার কমে ৮৫.৯৫%

নিজস্ব প্রতিবেদক: কভিড মহামারি আর বন্যায় বিলম্বিত শিক্ষাবর্ষ শেষে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে হওয়া এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করেছে ৮৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ শিক্ষার্থী।

দীর্ঘ অপেক্ষার পর দ্বাদশ শ্রেণির গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার পর্যায়ে পা রাখতে যাওয়া এই শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১ লাখ ৭৬ হাজার ২৮২ জন জিপিএ ৫ পেয়েছে, যা উত্তীর্ণের মোট সংখ্যার ১৭ দশমিক ৪২ শতাংশ।

এর আগে ২০২১ সালের এইচএসসি পরীক্ষাও মহামারির কারণে বিলম্বিত হয়েছিল। সেবারও বিষয় কমিয়ে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা হয়। তাতে ৯৫ দশমিক ২৬ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করে। জিপিএ ৫ পায় এক লাখ ১ লাখ ৮৯ হাজার ১৬৯ জন। এই হিসাবে ২০২২ সালের পরীক্ষায় পাসের হার কমেছে ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ পয়েন্ট। আর জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে ১২ হাজার ৮৮৭ জন।

২০২০ সালে মহামারির কারণে পরীক্ষা হয়নি। জেএসসি ও এসএসসির ফলের ভিত্তিতে মূল্যায়নে সবাই পাস করে, জিপিএ ৫ পায় এক লাখ ৬১ হাজার ৮০৭ জন। আর মহামারি শুরুর আগে ২০১৯ সালে উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষায় সার্বিকভাবে পাস করে ৭৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে মোট ৪৭ হাজার ২৮৬ জন শিক্ষার্থী পাঁচে পাঁচ জিপিএ পায়।

শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি গতকাল বুধবার সকালে সব শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানদের সঙ্গে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠান সরকারপ্রধানের হাতে ২০২২ সালের এইচএসসি পরীক্ষার ফলের সারসংক্ষেপ হাতে তুলে দেন। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাউস চেপে উচ্চ মাধ্যমিকের ফল প্রকাশের আনুষ্ঠানিকতা সারেন। দুপুর সাড়ে ১২টায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে সংবাদ সম্মেলন করে এবারের ফলাফলের বিস্তারিত তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।

২০২০ সালে দেশে মহামারির প্রকোপে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলে এইচএসসি পরীক্ষা নেয়া যায়নি। জেএসসি ও এসএসসির ফলের ভিত্তিতে ২০২১ সালের জানুয়ারিতে তাদের মূল্যায়ন ফল প্রকাশ করা হয়। তাতে ১৩ লাখ ৬৭ হাজার ৩৭৭ জন শিক্ষার্থীর সবাই পাস করে, জিপিএ ৫ পায় এক লাখ ৬১ হাজার ৮০৭ জন।

২০২১ সালের পরীক্ষা শুরুই হয় ডিসেম্বরে, যেখানে মহামারির আগে স্বাভাবিক সময়ে এপ্রিলে এ পরীক্ষা হতো নিয়মিতভাবে। বিশেষ পরিস্থিতিতে সেবার সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে গ্রুপভিত্তিক তিনটি নৈর্বাচনিক বিষয়ে ছয়টি পত্রে এইচএসসি পরীক্ষা হয়। সময় কমিয়ে আনা হয় দেড় ঘণ্টায়।

২০২২ সালের পরীক্ষা এগিয়ে আনার পরিকল্পনা থাকলেও বন্যার কারণে তা আবার পিছিয়ে শুরু হয় ৬ নভেম্বর থেকে। নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদ্রাসা বোর্ড ও কারিগরি বোর্ড মিলিয়ে ১২ লাখ ৩ হাজার ৪০৭ জন শিক্ষার্থী নিবন্ধন করেছিল এ পরীক্ষা দেয়ার জন্য।

এবারও বিষয়, নম্বর ও সময় কমিয়ে পরীক্ষা নেয়া হয়। সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে ২ ঘণ্টার পরীক্ষায় বহুনির্বাচনী প্রশ্নের জন্য ছিল ২০ মিনিট, সৃজনশীল বা রচনামূলকের জন্য ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট।

২০২২ সালে পরীক্ষা হয়েছে বাংলা, ইংরেজি ও গ্রুপভিত্তিক নৈর্বাচনিক তিনটি বিষয় এবং একটি ঐচ্ছিক বিষয়ে। পুনর্বিন্যস্ত পাঠ্যসূচিতে বাংলা দ্বিতীয় পত্র, ইংরেজি প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রে ৫০ নম্বরের পরীক্ষা দিতে হয়েছে শিক্ষার্থীদের।

এছাড়া যেসব বিষয়ে ব্যবহারিক আছে, সেগুলোতে ৪৫ নম্বরের (রচনামূলক ৩০ ও নৈর্ব্যক্তিক ১৫ নম্বর) এবং ব্যবহারিক না থাকলে ৫৫ নম্বরের (রচনামূলক ৪০ ও নৈর্ব্যক্তিক ১৫) পরীক্ষা দিতে হয়েছে।

১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ১১ লাখ ৭৭ হাজার ৩৮৭ জন শিক্ষার্থী এবার পরীক্ষায় অংশ নেয়। তাদের মধ্যে ১০ লাখ ১১ হাজার ৯৮৭ জন পাস করেছে। সার্বিক পাসের হার ৮৫.৯৫ শতাংশ।

ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী, ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে ঢাকা বোর্ডে পাসের হার ৮৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ, জিপিএ ৫ পেয়েছেন ৬২ হাজার ৪২১ জন শিক্ষার্থী। রাজশাহী বোর্ডে পাসের হার ৮১ দশমিক ৫৯ শতাংশ, জিপিএ ৫ পেয়েছেন ২১ হাজার ৮৫৫ জন শিক্ষার্থী।

কুমিল্লা বোর্ডে পাসের হার ৯০ দশমিক ৭ শতাংশ, জিপিএ ৫ পেয়েছেন ১৪ হাজার ৯৯১ জন শিক্ষার্থী। সিলেট বোর্ডে পাসের হার ৮১ দশমিক ৪ শতাংশ, জিপিএ ৫ পেয়েছেন ৪ হাজার ৮৭১ জন। বরিশাল বোর্ডে পাসের হার ৮৬ দশমিক ৯৫ শতাংশ, জিপিএ ৫ পেয়েছেন ৭ হাজার ৩৮৬ জন শিক্ষার্থী।

চট্টগ্রাম বোর্ডে পাসের হার ৭৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ, জিপিএ ৫ পেয়েছেন ১২ হাজার ৬৭০ জন শিক্ষার্থী। যশোর বোর্ডে পাসের হার ৮৩ দশমিক ৯ শতাংশ, জিপিএ ৫ পেয়েছে ১৮ হাজার ৭০৬ জন শিক্ষার্থী।

দিনাজপুর বোর্ডে পাসের হার ৭৯ দশমিক ০৬ শতাংশ, জিপিএ ৫ পেয়েছে ১১ হাজার ৮৩০ জন শিক্ষার্থী। ময়?মনসিংহ বোর্ডে পাসের হার ৭৭ দশমিক ০৩ শতাংশ, জিপিএ ৫ পেয়েছেন ৭ হাজার ১৭৯ জন।

এ ছাড়া কারিগরি বোর্ডে পাস করেছেন ৯১ দশমিক ২ শতাংশ শিক্ষার্থী, এ বোর্ডে জিপিএ ৫ পেয়েছেন ৭ হাজার ১০৫ জন শিক্ষার্থী। মাদ্রাসা বোর্ডে পাসের হার ৯২ দশমিক ৫৬ শতাংশ। জিপিএ ৫ পেয়েছেন ৯ হাজার ৪২৩ জন শিক্ষার্থী।