প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

উত্তোলন কমাতে চুক্তি আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি

 

শেয়ার বিজ ডেস্ক: জ্বালানি তেল রফতানিকারক দেশগুলোর সংগঠন ওপেকবহির্ভূত দেশগুলো উত্তোলন কমাতে একমত হওয়ার পর গতকাল সোমবার আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যটির দাম বেড়ে যায়। খবর বিবিসি।

নিউইয়র্ক মার্কেন্টাইল এক্সচেঞ্জে (নিমেক্স) সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের বাজার ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটে (ডব্লিউটিআই) জানুয়ারিতে সরবরাহের চুক্তিতে ব্যারেলে দাম বেড়ছে পাঁচ দশমিক দুই শতাংশ। এদিন পণ্যটির দাম প্রতি ব্যারেল ৫৪ ডলার ২৩ সেন্টে বিক্রি হয়েছে।

অন্যদিকে লন্ডনের ইন্টারকন্টিনেন্টাল এক্সচেঞ্জে (আইসিই) জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার ব্রেন্টের দাম জানুয়ারিতে সরবরাহের চুক্তিতে বেড়েছে ব্যারেলে পাঁচ দশমিক ১৭ শতাংশ। এদিন পণ্যটি ৫৭ ডলার ৭৮ সেন্টে বিক্রি হয়। ২০১৫ সালের জুলাইয়ের পর এটাই সর্বোচ্চ মূল্য।

আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমাতে ওপেকবহির্ভূত ১১টি উৎপাদনকারী দেশ উত্তোলন কমানোর সিদ্ধান্তে মত দেয়। রাশিয়াসহ এসব দেশ শনিবার ঘোষণা দিয়েছে যে, প্রতিদিন তারা পাঁচ লাখ ৫৮ হাজার ব্যারেল তেল উৎপাদন কমাবে। এর আগে গত মাসে ওপেক সদস্য দেশগুলো উত্তোলন কমানোর বিষয়ে একমত হয়। ২০০১ সালের পর এই প্রথম ওপেক ও নন-ওপেক দেশগুলো একসঙ্গে জ্বালানি তেল উৎপাদন কমাতে চুক্তিবদ্ধ হলো। অপেকবহির্ভূত দেশগুলোর মধ্যে রাশিয়া ছাড়াও আজারবাইজান, ওমান, মেক্সিকো, মালয়েশিয়া, সুদান, দক্ষিণ সুদান ও বাহরাইন শনিবার ভিয়েনার বৈঠকে অংশ নেয়। এ চুক্তির বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আগামী বছর ২৫ মে আবার ওপেক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

গত মাসে অস্ট্রেলিয়ার ভিয়েনায় এক ওপেক বৈঠকে সদস্য দেশগুলো প্রতিদিন ১২ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়। আগামী বছর জানুয়ারি থেকে এটি কার্যকর হবে।

২০১৪ সালের পর অতিরিক্ত সরবরাহের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের ব্যাপক দরপতনের পর ঘুরে দাঁড়াতে উৎপাদন কমাতে এ ধরনের চুক্তিকে ইতিবাচক দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। কাতারের তেলমন্ত্রী ও ওপেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বিন সালেহ আল সাদা বলেন, ‘একটি ঐতিহাসিক চুক্তিতে পৌঁছাতে পেরে আমি খুবই খুশি।’ ওপেকভুক্ত দেশগুলো পণ্যটির সরবরাহ বাড়ানোর সিদ্ধান্তে বাজার দীর্ঘ মেয়াদে ঊর্ধ্বমুখী হয়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশ্লেষকদের ধারণা, ওপেকের উত্তোলন কমলে বাজারে ব্যবসায়ীদের মধ্যে পণ্যটির মজুতপ্রবণতা বাড়বে, যা নিঃসন্দেহে বাজারকে ঊর্ধ্বমুখী করবে।

২০১৪ সালের জুনে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল বিক্রি হয় ১১৫ ডলারে। কিন্তু অতিরিক্ত সরবরাহের কারণে তা ব্যারেলপ্রতি ২৭ ডলারের নিচে নেমে আসে। অন্যদিকে বিশ্বে তেলের চাহিদাও কমে যায়। বিশ্বের দ্বিতীয় বড় অর্থনীতির দেশ চীনের অর্থনীতির গতি মন্থর হয়ে যাওয়া এর একটি বড় কারণ। সে সময় চীনে তেলের চাহিদাও কমে যায়। এ পরিস্থিতিতে বেশিরভাগ তেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের মুনাফা কমতে থাকে ব্যাপক হারে। নতুন বিনিয়োগ থেকে বিরত থাকে প্রতিষ্ঠানগুলো। জ্বালানি তেলের দাম কমায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে রাশিয়া অন্যতম।

২০১৫ সালে রাশিয়ার অর্থনীতি তিন দশমিক সাত শতাংশ সংকুচিত হয়। ২০০৯ সালের পর এটাই দেশটির সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক ধস। দেশটির মুদ্রা রুবলের রেকর্ড দরপতন ঘটে। রাশিয়া সরকারের অর্ধেক আয়ের উৎস হলো তেল ও গ্যাস। দেশটির ২০১৬ সালের বাজেট পাস হওয়ার সময় জ্বালানি তেলের দাম ছিল গড়ে ৫০ ডলার। ইতোমধ্যে দেশটির সরকার ১০ শতাংশ খরচ কমিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছে।