প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

উদ্ধার অভিযান নিয়ে অসন্তোষ বাড়ছে

তুরস্ক-সিরিয়ায় ভূমিকম্প

শেয়ার বিজ ডেস্ক: তুরস্ক ও সিরিয়ায় গত সোমবারের শক্তিশালী ভূমিকম্পে হাজারো ঘরবাড়ি ধসে পড়ে। এর দুদিন পার হয়ে যাওয়ার পরও এখনও শত শত মানুষ আটকে রয়েছেন সেসব ভবনের নিচে। সাধারণ তুর্কিদের অভিযোগ, ধীরগতিতে উদ্ধার অভিযান চালানোয় অনেকে এখন ধ্বংসস্তূপের ভেতর আটকে থেকে মারা যাচ্ছেন। এ বিষয়টি নিয়ে তাদের মধ্যে অসন্তোষ দানা বাঁধছে। খবর: আল জাজিরা।

ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল তুরস্কের গাজিয়ানতেপের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ভূমিকম্প সংঘটিত হওয়ার ১২ ঘণ্টার মধ্যে এখানে কোনো উদ্ধারকারীরা আসেননি। তারা আসেন সোমবার সন্ধ্যার পর। রাত নেমে আসায় কয়েক ঘণ্টা পর উদ্ধার অভিযান বন্ধ করে দেন উদ্ধারকারীরা।

তুরস্কের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে প্রায় ৬৫০ কিলোমিটার এলাকায় এখন ভূমিকম্পের ধ্বংসলীলা। এসব এলাকায় পাঁচ হাজার ৭৭৫টি ভবন ধসে পড়েছে। আর ভূমিকম্পে সিরিয়ায় যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা দেশটিতে ১১ বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতির চেয়ে বেশি বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন।

সোমবার ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে তুরস্ক ও সিরিয়ার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে আঘাত হানে শক্তিশালী ভূমিকম্প। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৮। কম্পনের উৎসস্থল ছিল তুরস্কের গাজিয়ানতেপ প্রদেশের পূর্ব দিকে নুরদাগি শহর থেকে ২৬ কিলোমিটার পূর্বে ভূগর্ভের প্রায় ২৪ দশমিক ১ কিলোমিটার গভীরে। এর পর থেকে দফায় দফায় আরও কয়েকটি ভূমিকম্প হয়েছে। এতে দুই দেশে ধসে পড়েছে হাজার হাজার ভবন। এসব ভবনের নিচে আটকে পড়েছে অনেক মানুষ। তাদের উদ্ধারের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন উদ্ধারকারী ও সাধারণ মানুষরা। তবে উদ্ধারকাজে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে তীব্র ঠাণ্ডা, তুষারপাত ও বৃষ্টি।

চেলাল দানিজ নামে গাজিয়ানতাপের ৬১ বছর বয়সী এক বাসিন্দা বলেন, মঙ্গলবার সকালে মানুষ বিক্ষোভ শুরু করে। পুলিশ পরে হস্তক্ষেপ করে। দানিজের ভাই ও ভাতিজারা এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে। তিনি বলেন, ১৯৯৯ সাল থেকে আদায় করা আমাদের ট্যাক্স কোথায় গেল?

প্রসঙ্গত, তুরস্কে ১৯৯৯ সালে ভয়াবহ ভূমিকম্পে ১৭ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হওয়ার পর ‘ভূমিকম্প ট্যাক্স’ আরোপ করে সরকার। বলা হয়েছিল, এমন বড় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনা ঘটলে সেই ট্যাক্সের অর্থ খরচ করে উদ্ধারকাজ চালানো হবে।

বর্তমানে এ ট্যাক্স বাবদ তোলা ৮৪ বিলিয়ন তার্কিশ লিরা (৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার) সরকারি কোষাগারে জমা। এ অর্থ খরচ করে দুর্যোগ প্রতিরোধী কার্যক্রম ও জরুরি পরিষেবার অবকাঠামো নির্মাণের কথা ছিল।

তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্পে মৃত্যুর সংখ্যা ১১ হাজার ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে তুরস্কে মৃত্যু হয়েছে ছয় হাজার ৯৫৭ জনের। তুরস্কের দুর্যোগ ও জরুরি পরিস্থিতি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (এএফএডি) জানিয়েছে, দেশটিতে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে আট হাজার ৫৭৪ জনে। অপরদিকে সিরিয়ায় মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে এক হাজার ২৮০ জন বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোর বাসিন্দা বলে জানিয়েছে উদ্ধারকারী দল হোয়াইট হেলমেটস। সিরিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ-নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোয় নিহতের সংখ্যা এক হাজার ২৫০ হওয়ার কথা জানিয়েছেন। হতাহতের সংখ্যা আরও অনেক বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলেছে, তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর মানচিত্র থেকে দেখা যাচ্ছে, এসব এলাকায় দুই কোটি ৩০ লাখ মানুষের বসবাস। ভূমিকম্পের কারণে সেখানকার সবাই কোনো না কোনোভাবে সংকটে পড়েছেন। দুই দেশের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোয় লাখো মানুষ এখন খোলা আকাশের নিচে রয়েছেন। ভবনধসের কারণে তুরস্ক ও সিরিয়ার বেশ কয়েকটি শহরে কয়েক হাজার মানুষ আহত ও গৃহহীন হয়ে পড়েছেন।

তুরস্কের দুর্যোগ ও জরুরি পরিস্থিতি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ বলছে, দেশটিতে ভূমিকম্পে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এক কোটি ৩৫ লাখ মানুষ। আহত হয়েছেন ২০ হাজারের বেশি মানুষ।