গতকালের শেয়ার বিজে প্রকাশিত ‘৯ জনেই থমকে গেলো ডিসিসিআইর দুই হাজার উদ্যোক্তা তৈরির প্রকল্প’ শীর্ষক খবরটি ইতোমধ্যে অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকবে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) সূত্রের বরাত দিয়ে আমাদের প্রতিনিধি জানাচ্ছেন, দুই হাজার উদ্যোক্তা তৈরির লক্ষ্য নিয়ে ২০১৩ সালের ১৩ জুন বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে এক সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করে ডিসিসিআই। এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল, সারা দেশের ৪০ হাজার উদ্যোক্তার মধ্য থেকে সর্বোত্তম, সম্ভাবনাময় ও বাস্তবায়নযোগ্য দুই হাজার প্রকল্প খুঁজে বের করা। এর আওতায় সে বছরই তিন হাজার ২৯ জন তালিকাভুক্ত উদ্যোক্তার মধ্য থেকে ৯ জনের আবেদন সঠিক পাওয়ায় তাদের ঋণ দেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে। দুঃখজনক যে, আমরা মাঝেমধ্যেই সারা দেশের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের অভিযোগ শুনি ঋণ চাইতে গিয়ে হয়রান হন তারা। বাংলাদেশ ব্যাংক ও ঢাকা চেম্বার যে বিশেষ উদ্যোগটি নিয়েছিল, তাতে কিন্তু সম্ভাবনাময় অনেক উদ্যোক্তাই সহজে ঋণ পেতে পারতেন। এ দিক থেকে ২ হাজার উদ্যোক্তা তৈরির উদ্যোগ ৯-এ এসেই থমকে যাওয়াটা কষ্টদায়ক বৈকি। দ্বিতীয় কথা হলো, বর্তমানে ওই প্রকল্পের কাজে নাকি কোনো অগ্রগতি নেই। আমাদের প্রতিনিধি বলছেন, ৩ হাজার ২৯টি আবেদনের মধ্য থেকে ৮৬২ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়; তার মধ্য থেকে ঋণ সহায়তা পান মাত্র ৯ জন। যারা এ সহায়তাটি পেয়েছেন, তারা নাকি পরবর্তী সময়ে তেমন আগ্রহ দেখাননি আর। বলার অপেক্ষা রাখে না, পরিসংখ্যানগত দিক থেকেও সফল বলা যায় না প্রকল্পটিকে। অথচ এ বিষয়ে বিতর্কের কোনো সুযোগ নেই যে, বাংলাদেশের অর্থনীতির গতি বৃদ্ধির জন্য এবং বিরাট জনশক্তির অর্থনৈতিক চাহিদা পূরণে নতুন ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা সৃষ্টির কোনো বিকল্প নেই। তাই খতিয়ে দেখা দরকার, কেন আশানুরূপ ফল দিতে পারলো না প্রকল্পটি।
যে কোনো যুক্তিবান লোক স্বীকার করবেন, উদ্যোক্তা তৈরি অত্যন্ত কঠিন একটি বিষয়। এজন্য মোটিভেশন লাগে, ভালো প্রশিক্ষকের প্রয়োজন হয়, উপযুক্ত প্রশিক্ষণার্থীর দরকার হয়। একাডেমিক সার্টিফিকেট এখানে মুখ্য নয়। বরং শুধু একাডেমিক সার্টিফিকেট দিয়ে উদ্যোক্তা তৈরি করা গেলে অর্থনীতি পরিচালনার কাজটি অনেক সহজ হয়ে যেত। এক্ষেত্রে বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের প্রথম অন্তরায় হচ্ছে আর্থ-সামাজিক মনোভাব। সামাজিকভাবে বৃহৎ উদ্যোক্তারা স্বীকৃতি পেলেও বিশেষত গ্রামীণ পর্যায়ে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা এখনও অবহেলিত। ফলে সম্ভাবনাময় উদ্যোক্তারা ভরসা পান না খুব একটা। আলোচ্য প্রকল্পটি এক্ষেত্রে যে কাজটি করতে পারতো তা হলো, তারা প্রকল্পের উদ্দেশ্যে শহর-বন্দর-গ্রামে প্রচার চালাতে পারতো। তাতে উদ্বুদ্ধ হতেন অনেক মানুষ। অথচ জেলা পর্যায়েও নাকি ওই বিষয়ে কোনো প্রচার চালানো হয়নি। এটা দুর্ভাগ্যজনক। বাংলাদেশের তরুণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে এখনও অনেক সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে বলে মন্তব্য করেছেন অনেক প্রথম সারির অর্থনীতিবিদ। গণমাধ্যমে সেগুলোর কাহিনিও উঠে আসে মাঝেমধ্যে। এদিকে বাংলাদেশকে দ্রুত মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে বিপুল মাত্রায় উপযুক্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। নইলে একদিকে আমরা হারাবো ‘ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডে’র সুবিধা; অন্যদিকে নীতিনির্ধারকদের ওপর বাড়তে থাকবে বেকারত্বের চাপ। এখানে অবশ্য উল্লেখ্য, সরকারি খাত দিয়ে সে চাপ সামাল দেওয়া যাবে না বলে মনে করেন কেউ কেউ। এ অবস্থায় নতুন উদ্যোক্তা তৈরির আলোচ্য প্রক্রিয়াটি নতুনভাবে ও নতুন মাত্রায় চালুর ওপর জোর দেওয়া হোক, এটাই প্রত্যাশা।