ড. শামসুল আলম পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (জ্যেষ্ঠ সচিব)। ১৯৭৩ সালে তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষি অর্থনীতিতে এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। শিক্ষক হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি ব্যবসা ও বিপণন বিভাগে ১৯৭৪ সালে। ১৯৮৩ সালে তিনি ব্যাংককের থাম্মাসাট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এমএ ডিগ্রি এবং ১৯৯১ সালে যুক্তরাজ্যের নিউক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একই বিষয়ে পিএইচডি অর্জন করেন। অধ্যাপনা জীবনে ড. আলম জার্মানির হামবোল্ট বিশ্ববিদ্যালয়, বেলজিয়ামের ঘেন্ট বিশ্ববিদ্যালয় ও নেদারল্যান্ডসের ভাগিনিঙ্গেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রায় পাঁচ বছর কাজ করেছেন জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থায়। সরকারের আমন্ত্রণে ৩৫ বছরের শিক্ষকতা জীবনশেষে ২০০৯ সালে যোগ দেন পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য পদে। তার সরাসরি ব্যবস্থাপনা ও অংশগ্রহণে দেশের প্রথম প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০১০-২১, বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০, ষষ্ঠ ও সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এবং দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০৪১ প্রণীত হয়েছে। গত মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদে (এনইসি) অনুমোদন পায় অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা। এ বিষয়ে সম্প্রতি তিনি কথা বলেছেন শেয়ার বিজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মাসুম বিল্লাহ
শেয়ার বিজ: অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার প্রেক্ষাপট ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানতে চাই।
ড. শামসুল আলম: অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আমরা বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছি। একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে এটি অনুমোদিত হলো। গুরুত্বপূর্ণ সময় এ কারণে যে, এটি মুজিববর্ষে প্রণীত একটি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা। একই সঙ্গে এ পরিকল্পনার মেয়াদেই আমরা ২০২৪ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হব। এছাড়া এসডিজি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে একটি বড় সময় পাওয়া যাচ্ছে এ পরিকল্পনাকালে; পূর্ণ পাঁচ বছর। এছাড়া ২০৪১ সালে উন্নত দেশে উন্নীত হওয়ার বিষয়ে যে রূপকল্প প্রণয়ন করা হয়েছে, সে রূপকল্প বাস্তবায়নের ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে এ পরিকল্পনা। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার প্রাসঙ্গিকতার বিষয় এগুলো। সবচেয়ে বড় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কভিড-১৯-এর কারণে প্রবৃদ্ধির হার খানিকটা হলেও ধাক্কা খেয়েছে। সেটা কাটিয়ে উঠে বিভিন্ন খাতের সমন্বয়ের মাধ্যমে সামগ্রিক অর্থনীতিকে কীভাবে এগিয়ে নেয়া যায়, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট কৌশল ও কর্মসূচি এ পরিকল্পনায় বর্ণনা করা আছে।
অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলোÑএটি প্রণয়নের প্রাক্কালে আমরা সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা পর্যালোচনা করেছি এবং সপ্তম পরিকল্পনায় আমরা যেখানে যেখানে পিছিয়ে ছিলাম, সেটি চিহ্নিত করেছি। পিছিয়ে পড়া যে খাতগুলো রয়েছে বা যেসব বিষয়ে লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হয়নি, সেসব বিষয়ে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় নতুন লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে এবং সেগুলো যাতে অর্জিত হয়, সে বিষয়ে জোর দেয়া হয়েছে। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার অভিজ্ঞতার আলোকে অষ্টম পরিকল্পনার কৌশলগুলো সাজানো হয়েছে। বিশেষ করে আমরা প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্যগুলো ঠিক করেছি, সেগুলো অর্জন করতে কী কী কৌশল নিতে হবে, তা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরপর কর্মসূচির কথা বলা হয়েছে। আমাদের কী কী প্রয়োগিক কর্মসূচি নিতে হবে এবং আমাদের বিনিয়োগে কোথায় গুরুত্ব দিতে হবে, সে বিষয়ে বর্ণনা করেছি এবং কোন ধরনের প্রকল্পে জোর দিতে হবে, সে বিষয়ে আলোকপাত করেছি।
শেয়ার বিজ: এ পরিকল্পনায় কোন কোন বিষয়ের ওপর জোর দেয়া হয়েছে?
ড. শামসুল আলম: কভিডকেন্দ্রিক দুর্যোগ ও বিপর্যয় আমরা বেশ ভালোভাবেই মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছি। বিভিন্ন প্রণোদনা কর্মসূচি যথাসময়ে ঘোষণা করা এবং এটির দ্রুত বাস্তবায়নের মাধ্যমে সেটা সম্ভব হয়েছে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় এ কৌশলগুলো ধারণ করা হয়েছে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় যে বিষয়টির ওপর আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি তা হলোÑকর্মসংস্থান সৃষ্টি। এছাড়া দারিদ্র্য বিমোচনে যাতে আমরা আরও এগোতে পারি, সে বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে। কারণ করোনার কারণে দারিদ্র্যসীমার কাছাকাছি অবস্থানকারী অনেকে সাময়িক সময়ের জন্য দারিদ্র্যরেখার নিচে নেমে এসেছিল। বিশেষ করে দেশে কভিড সংক্রমণের শুরুর দিকে যখন টানা দুমাস লকডাউন চলছিল, তখন অনেকে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গিয়েছিল। যদিও সেটি পূর্ণ লকডাউন ছিল না, কিন্তু কিছুটা হলেও আমরা লকডাউনে ছিলাম। আংশিকভাবে অর্থনীতি সচল রেখে আমরা অফিস-আদালত বন্ধ করেছিলাম। এই দারিদ্র্য বিমোচন কার্যক্রম আরও দ্রুততর করা যায় কীভাবে, সে বিষয়ে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় মনোযোগ দেয়া হয়েছে। আর দ্রুততার সঙ্গে দারিদ্র্য বিমোচন করতে হলে কর্মসংস্থান প্রয়োজন হবে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সময়কালে আমাদের লক্ষ্য প্রায় এক কোটি ১৩ লাখ ৩০ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি। এ কর্মসংস্থান হবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে। সরকারি-বেসরকারি মিলে এবং বিদেশে পাঠিয়ে। এ কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে আমরা নজর রেখেছি, যাতে আমাদের দেশে পর্যাপ্ত শিল্পায়ন হয় এবং ম্যানুফ্যাকচারিং খাত এগিয়ে যায়। আর শিল্পায়ন হতে হবে অবশ্যই কর্মসৃজনমুখী। সে অনুযায়ীই আমাদের কৌশলগুলো বর্ণনা করেছি। আর সেটা করার জন্য আমাদের শুল্ক-কর কাঠামো ও বাণিজ্যনীতি কী হওয়া উচিত, সেটা নির্ধারণ করেছি, যাতে আমাদের রপ্তানি বৃদ্ধি পায় এবং যতটা সম্ভব দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানো যায়। পরিকল্পনায় এ বিষয়গুলোয় আমরা লক্ষ্য রেখেছি।
শেয়ার বিজ: পরিকল্পনায় সামাজিক খাতে কতটা গুরুত্ব দেয়া হয়েছে?
ড. শামসুল আলম: অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় সামাজিক খাতে ব্যাপকহারে জোর দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক ব্যয় বৃদ্ধির প্রাক্কলন করা হয়েছে। বর্তমানে শিক্ষা খাতে আমরা আমাদের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) এক দশমিক সাত শতাংশ ব্যয় করছি। ২০২৫ সালের মধ্যে এ ব্যয় কম করে হলেও আমরা মোট জিডিপির তিন শতাংশে উন্নীত করতে চাই। এক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয় যাতে এ বর্ধিত অঙ্কের অর্থ ব্যয়ের সক্ষমতা অর্জন করতে পারে, আমরা সেটা প্রত্যাশা করছি। স্বাস্থ্য খাতেও আমাদের ব্যাপক ব্যয় বৃদ্ধির পরিকল্পনা রয়েছে। এ খাতেও মোট জিডিপির এক দশমিক সাত শতাংশ ব্যয় হচ্ছে। ২০২৫ সাল নাগাদ এটি যাতে কমপক্ষে জিডিপির দুই শতাংশে উন্নীত হয়, সেটিই আমাদের প্রত্যাশা।
শেয়ার বিজ: স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে আপনার ভাবনা কী?
ড. শামসুল আলম: স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে পুরোপুরি পুনর্গঠন করতে হবে। সরকারি-বেসরকারি সংযোগ বাড়াতে হবে। সরকারের পরিবীক্ষণ বাড়াতে হবে এবং এ খাতকে আরও নিয়মশৃঙ্খলার মধ্যে আনতে হবে। এক্ষেত্রে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোর (এনজিও) ভূমিকা যাতে আরও স্পষ্ট হয়, সে বিষয়ে আমরা বলেছি। স্বাস্থ্য খাতে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব যাতে জোরদার হয়, সে বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছি। আর বিশেষ করে আমাদের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো বা জেলা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাটা যাতে আরও দরিদ্র শ্রেণিমুখী হয় এবং সেখানে জনগণের অভিগম্যতা যাতে আরও বাড়ে, সে বিষয়ে উল্লেখ করেছি। সার্বিকভাবে এ পরিকল্পনায় আমরা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক গুরুত্ব দিয়েছি। অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার মধ্যে সামাজিক খাতে এটিই আমাদের প্রধান লক্ষ্য এ কারণে যে, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের (এসডিজি) অনেক সূচক নিহিত রয়েছে। সুতরাং আমরা যদি এসডিজি বাস্তবায়ন করতে চাই বা এসডিজির লক্ষ্য অর্জন করতে চাই, তাহলে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে এই বিনিয়োগ অপরিহার্য। এসব খাতে বিনিয়োগ না বাড়ালে স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় এসডিজির সূচকগুলো অর্জন করা সম্ভব হবে না। স্বাস্থ্য খাতে এসডিজির অনেক সূচক রয়েছে। যেমন: মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর হার কমানো, কম ওজনের শিশুর হার কমানো, রোগবালাই কমিয়ে আনা, যক্ষ্মা সংক্রমণের হার কমিয়ে আনা, কভিডের প্রধান মোকাবিলা প্রভৃতি বিষয়ে অষ্টম পরিকল্পনায় আমরা বিস্তারিতভাবে আলোকপাত করেছি।
শেয়ার বিজ: তাহলে ভৌত অবকাঠামো খাতকে কি এবার কম প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে?
ড. শামসুল আলম: প্রাধান্যের মধ্যে রয়েছে আর্থ-সামাজিক, পরিবেশ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মূল্যবোধগত বিষয় প্রভৃতি। আর ভৌত অবকাঠামোর ক্ষেত্রে আমাদের যে দুর্বলতা ছিল, তা অনেকটাই আমরা কাটিয়ে উঠেছি। তবে সেটির একটি পূর্ণাঙ্গ চাহিদা মিটবে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাকালে। আমরা দুটি গভীর সমুদ্রবন্দর গড়ে তুলতে চাচ্ছি, এর একটি পটুয়াখালীর পায়রায়, অন্যটি কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে। সেগুলো ২০২৫ সালের মধ্যে সম্পন্ন হবে। ভৌত অবকাঠামোতে আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। আমাদের এখন মহাপ্রকল্পের দিকে এগুতে হবে। এ সময়ের মধ্যে আমাদের মেট্রোরেল চালু হবে, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী টানেল চালু হবে এবং দুটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রই এ সময়ে চালু হবে বলে আমরা আশা করছি। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় অবকাঠামোতে আমরা যে জোর দিয়েছিলাম, সেক্ষেত্রে আমাদের লক্ষ্য অনেক দূর এগিয়েছে। সেটি পদ্মা সেতু হোক, বা যে মেগাপ্রকল্পগুলোর কথা আমি উল্লেখ করলাম, সেগুলো হোক। এখন আমাদের লক্ষ্য যমুনা নদীর ওপর একটি রেলসেতু গড়ে তোলা ও ভূতল ট্রেন চালু করা। এছাড়া এ রকম ব্যাপক পরিবর্তন ঘটাতে পারে, এমন মহাপরিকল্পনা এখন আমরা নেব। আর যে বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে তা হলো, দেশে যেসব ভৌত অবকাঠামো রয়েছে, সেগুলোর সংরক্ষণ এবং ব্যবহার-উপযোগী পর্যায়ে অক্ষুন্ন রাখা।
শেয়ার বিজ: ব–দ্বীপ পরিকল্পনাসহ অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এ পরিকল্পনা কতটা ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন?
ড. শামসুল আলম: বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা (ডেল্টা প্ল্যান) বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করা এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিরূপ প্রভাব যাতে আমরা দ্রুত কাটিয়ে উঠতে পারি, সেটিও আমরা অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ধারণ করেছি। এ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার হাত ধরে এসডিজি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া এগিয়ে যাবে। পাশাপাশি ২০৩১ সালের মধ্যে আমরা যাতে উচ্চমধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে পারি, তার ভিত্তিও জোরদার করতে হবে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাকালে। বিশেষ করে, ব-দ্বীপ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আমরা প্রাথমিক যে লক্ষ্য স্থির করেছিলাম, সে লক্ষ্য বাস্তবায়নের অন্যতম সময় ২০২১ থেকে ২০২৫ সাল। এছাড়া ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত দেশে উন্নীত হওয়ার বিষয়ে আমাদের যে সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য রয়েছে, সেটি অর্জনের ক্ষেত্রেও অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার বাস্তবায়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং বলা যায়, আমাদের যত দীর্ঘমেয়াদি দেশীয় পরিকল্পনা রয়েছে এবং আন্তর্জাতিক যেসব উন্নয়ন এজেন্ডা আমরা বাস্তবায়ন করছি, সেসবের সমন্বয় সাধনের চেষ্টা করা হয়েছে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায়। কাজেই এ পরিকল্পনাটি হবে এযাবৎকালের সর্বোত্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা। এর আগে যেসব পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ছিল, সেগুলোও উত্তম পরিকল্পনা ছিল। তবে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা গুণবিচারে সেগুলোকে ছাড়িয়ে যাবে। কারণ এ পরিকল্পনা অত্যন্ত প্রয়োগমুখী ও কর্মসূচিভিত্তিক পরিকল্পনা। জাতীয় সব দিক এ পরিকল্পনায় স্থান পেয়েছে বিস্তৃতভাবে। পরিকল্পনাটিতে আর্থ-সামাজিক, পরিবেশগত, আমাদের মূল্যবোধগত ও সাংস্কৃতিক বিকাশের মতো বিষয়ের পাশাপাশি আমাদের ব্যবহারিক আচার-আচরণ যাতে মানবিক হয়ে ওঠে, সেটার ওপর জোর দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে শিক্ষা ব্যবস্থায় এ বিষয়টির ওপর জোর দেয়ার তাগিদ দেয়া হয়েছে। মানবিক, বাস্তবধর্মী, প্রয়োগমুখী ও বাজারমুখী শিক্ষার যেন আরও সংযোগ বাড়ে, সেটি পরিকল্পনায় উল্লেখ করা হয়েছে। আর মাদরাসা শিক্ষাকে আরেকটু যুগোপযোগী ও ব্যবহার-উপযোগী কীভাবে করা যায়, সেটি আমরা বলতে চেষ্টা করেছি।
সব মিলিয়ে আর্থিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পরিবেশগত প্রভৃতি বিষয়কে সুনির্দিষ্টভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে এবং প্রস্তাব রাখা হয়েছে। কাজেই সর্বমুখী উন্নয়নের একটি চমৎকার দলিল হতে চলেছে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাকালে প্রবৃদ্ধি অর্জনে যে গতিশীলতা অর্জিত হয়েছে, অষ্টম পরিকল্পনার বাস্তবায়ন সে বিষয়টিকে আরও উন্নত করবে। এ পরিকল্পনায় আমরা মেগাপ্রকল্পগুলো দ্রুত ও যথাসময়ে বাস্তবায়নের ওপর জোর দিয়েছি। ২০২৫ সালের মধ্যে কমপক্ষে ১৫টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল যাতে আমরা পুরোপুরি চালু করতে পারি, সে বিষয়ে চেষ্টা করব। আর মোট ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে যাতে ১০০টিই প্রস্তুত হয়ে যায়, সে বিষয়ে আমরা লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি। সবমিলিয়ে একটি সর্বমুখী পরিবর্তনের উপকরণ হবে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা। আমি মনে করি, আমাদের দেশের সর্বোচ্চ প্রতিভা আহরণ, প্রয়োগ এবং দেশজ মেধার সর্বোচ্চ ব্যবহার ঘটাতে আমরা চেষ্টা করেছি এ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়নে।
