প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা যন্ত্রপাতি ব্যবহার হোক

চিকিৎসা বিজ্ঞানে বিভিন্ন রোগ নির্ণয়ে রঞ্জন রশ্মি (এক্স-রে) যুগান্তকারী আবিষ্কার হিসেবে পরিগণিত। আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় অনেক রোগ নির্ণয়ে এক্স-রের ব্যবহার অনস্বীকার্য। যেমনÑস্থানচ্যুত হাড়, হাড়ে ফাটল ও ভেঙে যাওয়া হাড় প্রভৃতি শনাক্তকরণে, মুখমণ্ডলীর অভ্যন্তরের যেমন দাঁতের গোড়ায় ঘা এবং ক্ষয় নির্ণয়, পাকস্থলীর অন্ত্রের প্রতিবন্ধকতা শনাক্ত করতে যায়, পিত্তথলি ও কিডনির পাথর শনাক্তকরণ ও অপসারণ, ফুসফুসের রোগ যেমন যক্ষ্মা, নিউমোনিয়া, ফুসফুসের ক্যানসার প্রভৃতি নির্ণয় করা যায় এবং চিকিৎসার কাজেও এক্স-রে ব্যবহার করা যায়। এক্স-রে ক্যানসার কোষকেও মেরে ফেলতে পারে। বিশেষ ধরনের এক্স-রের মাধ্যমে (রেডিও থেরাপি) ক্যানসারের চিকিৎসা করা যায়। এতে প্রতীয়মান হয়, চিকিৎসায় এক্স-রের ভূমিকা কতখানি।

গতকাল শেয়ার বিজে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন চিকিৎসাসেবায় আমাদের সীমাবদ্ধতার বিষয় উঠে এসেছে। দেশসেরা চিকিৎসাসেবা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিসেবে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয়ের  (বিএসএমএমইউ) জুড়ি নেই। সোমবার বিএসএমএমইউতে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ প্রতিষ্ঠানের পাবলিক হেলথ ও ইনফরমেটিকস বিভাগের এক দল গবেষকের গবেষণা প্রতিবেদন। প্রতিবেদনের ভাষ্য: দেশের ৫৯ শতাংশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীদের এক্স-রে করা হয় না।  কারণ সেখানে হয় এক্স-রে যন্ত্র নেই, অথবা যন্ত্র থাকলেও তা নষ্ট। ৪১ শতাংশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রক্ত পরিসঞ্চালন করা হয় না। পাশাপাশি ৬৩ শতাংশ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা নেই। গবেষকরা ৯টি জেলা হাসপাতাল ও ১৭টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ওপর গবেষণা করেছেন।

১৯৭৮ সালে আলমা-আটা ঘোষণায় সই করা দেশগুলোর মধ্যে ছিল বাংলাদেশ। বর্তমানে প্রতিটি উপজেলায় উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র আছে। এগুলো ৩১ থেকে ১০০ শয্যার হাসপাতাল। এসব হাসপাতালে জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগ ও অন্তর্বিভাগ আছে। এছাড়া আছে পৃথক মা ও নবজাতক বিভাগ। বিশেষায়িত ছাড়া এ হাসপাতালে সব ধরনের চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে। কাগজে-কলমে বলা হলেও এসব প্রতিষ্ঠানে সেবা দেয়ার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি না থাকায় চিকিৎসকরা সেবা দিতে পারেন না। প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্যসেবার জন্য জেলা ও উপজেলা হাসপাতালের ওপর নির্ভরশীল। বিএসএমএমইউ’র জরিপে উঠে এসেছে, ৭৩ শতাংশ উপজেলা হাসপাতালে ইসিজি হয় না। একটি জেলা হাসপাতালেও চিকিৎসকদের আবাসন-উপযোগী ডরমিটরি বা কোয়ার্টার নেই। অপরিচ্ছন্ন শৌচাগারের পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানির অভাব। রাজনৈতিক নেতাদের অনাকাক্সিক্ষত চাপ ও প্রভাব এবং স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি ও কিছু গণমাধ্যমকর্মীর অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপ চিকিৎসকদের সেবাদানে বাধা সৃষ্টি করে।

চিকিৎসাসেবার জন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যাওয়া সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। অথচ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যন্ত্রপাতি না থাকায় এক্স-রে, ইসিজি প্রভৃতি বাইরে করতে হয় এবং বেশি অর্থ খরচ হয়। নানাবিধ সমস্যা ও অব্যবস্থাপনায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর পক্ষে ন্যূনতম চিকিৎসা সেবা দেয়া কঠিন হয়ে পড়ে। বিএসএমএমইউ’র গবেষণা আমলে নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো ঢেলে সাজাতে হবে। সিভিল সার্জনরা উদ্যোগী হয়ে ব্যবস্থা নিলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে এলাকার জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব।