নাজমুল ইসলাম ফারুক ও নাজমুল হুসাইন: বেশ সুনামের সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিল সমতা লেদার। কিন্তু এমন একটি কোম্পানি দীর্ঘদিন ধরে লোকসান গুনছে। শেষ পর্যন্ত উৎপাদনও বন্ধ হয়ে গেছে কোম্পানিটির। এ অবস্থায় ভাড়া দিয়ে চলছে সমতা লেদার কমপ্লেক্স। তবে চলতি মূলধন জোগাড় করতে পারলে আবারও এটি দাঁড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে বলে দাবি করছেন কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
এদিকে লোকসানি প্রতিষ্ঠান হলেও সরকারের নির্দেশে পুরান ঢাকার হাজারীবাগ থেকে সাভার শিল্পনগরীতে কারখানা স্থানান্তর করেছে সমতা লেদার।
সরেজমিন গত সোমবার সাভার চামড়া শিল্পনগরীতে সমতা লেদারের কারখানা ঘুরে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটির কারখানার শুধু নিচতলার অবকাঠামোগত উন্নয়নের কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। নির্মাণকাজ চলছে ভবনের তিনতলা পর্যন্ত। নীচতলায় কয়েকটি মেশিন বসানো হয়েছে। শ্রমিকরা কাজ করছে। সেখানে কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়ারকণ, কাটিং ও হ্যাঙ্গিংয়ের সুবিধা চালু আছে।
কর্মরত কর্মকর্তারা জানান, চলমান চামড়া প্রক্রিয়াকরণ কার্যক্রম সমতা লেদারের নয়। সেখানে কাজ চলছে ‘এমএস ট্যানারি’ নামের ভিন্ন এক প্রতিষ্ঠানের। অর্থাৎ সমতার নিজস্ব কোনো উৎপাদন নেই। যেসব পণ্য উৎপাদন হচ্ছে সেগুলো ভাড়া কোম্পানির। সমতা লেদারের কারখানা ভাড়া নিয়ে এমএস ট্যানারি তাদের রফতানির চামড়া প্রক্রিয়াকরণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এ প্রতিষ্ঠানটিরও নিজস্ব কোনো কারখানা নেই।
জানতে চাইলে এমএস ট্যানারির কার্যক্রম পরিচালনাকারী মনির হোসেন বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই সমতা লেদারে নিজস্ব উৎপাদন বন্ধ। এমএস ট্যানারি ছাড়া কয়েকটি কোম্পানি সমতা লেদারে এখন নিয়মিত ভাড়ায় কাজ করায়। এদের মধ্যে আরএসকে লেদার, অঙ্গন লেদার ও শামিম লেদারের কাজ হয় সবচেয়ে বেশি। এতে নিজস্ব উৎপাদন না থাকলেও ভাড়ায় বিভিন্ন কোম্পানির কাজ করার মাধ্যমেই চলছে সমতা লেদার।’
তবে কারখানায় সমতা লেদারের নিজস্ব কর্মকর্তা- কর্মচারীরাই মেশিনগুলো পরিচালনা করছেন। ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তার দেখা না মিললেও কারখানায় রয়েছে কয়েক ইঞ্জিনিয়ার।
জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভাড়ার বিষয়টি স্বীকার করে একজন ইঞ্জিনিয়ার বলেন, প্রায় দেড় বছর আমাদের নিজস্ব উৎপাদন নেই বললেই চলে। এতে অন্য কোম্পানির ভাড়ার টাকায় কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন ভাতা পরিশোধ করে সমতা কর্তৃপক্ষ। কতজন কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে সমতা লেদারের প্রায় ৫৫ জনের অধিক নিজস্ব কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন।
কর্মকর্তারা জানান, রমজানের কয়েক দিন আগে থেকে সাভার শিল্পনগরীতে কার্যক্রম শুরু করেছে সমতা লেদার। এর আগেই গ্যাস ও বিদ্যুতের সংযোগ পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে নতুন কারখানায় নেই কোনো নিজস্ব কার্যক্রম। ভাড়ার কাজ না থাকলে কার্যক্রম বন্ধ থাকে প্রতিষ্ঠানটির। আর কোম্পানিটির হাজারীবাগে অফিসিয়াল কার্যক্রম চলে বলে জানান তারা।
জানতে চাইলে সমতা লেদারের নির্বাহী পরিচালক মো. মিজানুর রহমান জানান, ‘চলতি মূলধন সংকটে ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না সমতা লেদার। তবুও সরকারের নির্দেশনায় হাজারীবাগ থেকে সাভার চামড়া কারখানাটি স্থানান্তর করেছি। সেখানে উৎপাদন চলছে। কিন্তু অন্য কোম্পানির মালামাল তৈরি করা হয় কারখানাটিতে।’ তা ছাড়া নিজেদের পণ্য মাঝে-মধ্যে উৎপাদন করা হয় বলে জানান তিনি। সর্বশেষ ছয় মাস আগে নিজেরা কিছু পণ্য উৎপাদন করেছে বলে জানান তিনি। তারপর আর নিজস্ব কোনো পণ্য উৎপাদন হয়নি।
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে ভাড়া দিয়েই চলছে প্রতিষ্ঠানটি। আর্থিক পজিশন শক্তিশালী না হওয়ায় কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারদের কোনো ধরনের লভ্যাংশ দিতে পারছি না। এ কারণে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে কোম্পানিটি। তবে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল পেলে ভবিষ্যতে ঘুরে দাঁড়ানোর পরিকল্পনা আছে বলে জানান তিনি।
এদিকে, নিজস্ব উৎপাদন বন্ধ থাকলেও গত এক মাসে বেশিরভাগ সময় কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়েছে। কোম্পানির শেয়ার গতকাল বুধবার সর্বশেষ ৩০ টাকা ২০ পয়সায় বেচাকেনা হয়েছে। গত এক বছরে কোম্পানির শেয়ার সর্বনি¤œ ২৩ টাকা ৫০ পয়সা এবং সর্বোচ্চ ৩৭ টাকা ২০ পয়সায় বেচাকেনা হয়েছে।
লভ্যাংশের ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত পাঁচ বছরে শেয়ার হোল্ডারদের জন্য কোনো ধরনের লভ্যাংশ দেয়ার ইতিহাস নেই। অর্থাৎ আলোচিত সময় কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিতে ব্যর্থ হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
পুঁজিবাজারে ১৯৯৮ সালে তালিকাভুক্ত হওয়া কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ৫০ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ১০ কোটি ৩২ লাখ টাকা। কোম্পানির শেয়ারসংখ্যা এক কোটি তিন লাখ ২০ হাজার। এর মধ্যে পরিচালকদের কাছে ৫০ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ১৭ দশমিক ৭৯ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ৩২ দশমিক ২১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।