নিজস্ব প্রতিবেদক: নতুন মুদ্রানীতি অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এবারও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণই বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তাই নতুন মুদ্রানীতিতে মূল্যস্ফীতি ঠেকানো মূল লক্ষ্য ঠিক করা হয়। নতুন মুদ্রানীতি আনুষ্ঠানিকভাবে তা প্রকাশ করা হবে আগামী রোববার। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্ষদ সভায় এটি অনুমোদন দেয়া হয়। গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সভাপতিত্বে সভায় পরিচালক ও ডেপুটি গভর্নররা উপস্থিত ছিলেন।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, বরাবরের মতো এবারও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণই বড় চ্যালেঞ্জ। সে লক্ষ্যে বিভিন্ন সূচক নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ নতুন মুদ্রানীতি পাস করেছে। রোববার ঘোষণা করা হবে।
জানা গেছে, একদিকে বাজারে তারল্য সংকট, অন্যদিকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এ দুই চ্যালেঞ্জ নিয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের (জানুয়ারি-জুন) নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, আগামী ১৫ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে ‘মনিটারি পলিসি স্টেটমেন্ট (এমপিএস)’ প্রকাশ করবেন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর এটা তার প্রথম মুদ্রানীতি ঘোষণা। অনুষ্ঠানে ডেপুটি গভর্নরসহ বিএফআইইউয়ের প্রধান কর্মকর্তা, চিফ ইকোনমিস্ট, গবেষণা বিভাগের নির্বাহী পরিচালক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও সহকারী মুখপাত্র উপস্থিত থাকবেন।
আগে সাধারণত সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মুদ্রানীতি ঘোষণা করতেন। কিন্তু করোনার কারণে গত দুই বছর আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া শুধু ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক আগে প্রতি ছয় মাসের আগাম মুদ্রানীতি ঘোষণা করলেও গত দুই অর্থবছর তা এক বছরের জন্য করা হয়। তবে ২০২২-২৩ অর্থবছরের মুদ্রানীতি অনলাইনের পরিবর্তে সরাসরি ঘোষণা করেন বিদায়ী গভর্নর ফজলে কবির। নতুন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার দায়িত্ব নেয়ার পর সিদ্ধান্ত হয় আগের মতো আবারও প্রতি ছয় মাস পরপর মুদ্রানীতি ঘোষণা হবে। অবশ্য বছরে দুটি মুদ্রানীতি দেয়ার বিষয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত রয়েছে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও কাক্সিক্ষত প্রবৃদ্ধি অর্জনের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে মুদ্রানীতি প্রণয়ন ও প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় মুদ্রানীতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ ঋণ, মুদ্রা সরবরাহ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ, বৈদেশিক সম্পদ কতটুকু বাড়বে বা কমবে এর একটি পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়।
নতুন মুদ্রানীতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মো. হাবিবুর রহমান বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও তারল্য সরবরাহ ঠিক রাখা মুদ্রানীতির মূল কাজ। সেভাবেই সব সূচক নির্ধারণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, ডলারের সংকট চলছে। আবার ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করায় প্রচুর টাকা চলে এসেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। কমেছে টাকার সরবরাহ। ফলে তারল্য সংকটে পড়েছে বেশ কিছু ব্যাংক। এ অবস্থায় বাজারে টাকার প্রবাহ স্বাভাবিক রাখা জরুরি হয়ে পড়েছে। তবে মূল্যস্ফীতি মোকাবিলা করাও বড় চ্যালেঞ্জ। এ দুটির সমন্বয় করে কিছুটা সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির দিকে জোর দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিনিয়োগের পাশাপাশি উৎপাদনশীল খাত বিশেষ করে কৃষি খাতে ঋণ সরবরাহ বাড়াতে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে নতুন নীতিতে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতিকে ৫ দশমিক ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। কিন্তু সবশেষ নভেম্বর মাস শেষে মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক আগামী জুন পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করেছে ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ। আগের মুদ্রানীতিতে যা ১৪ দশমিক ৮০ শতাংশ ছিল। মূলত সাম্প্রতিক সময়ে ঋণ বৃদ্ধির প্রবণতা বিশ্লেষণ করে মুদ্রানীতিতে প্রাক্কলন কিছুটা কমানো হয়েছিল।