প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

ঋণপত্র খোলা কমলেও বেড়েছে নিষ্পত্তি

রোহান রাজিব: রপ্তানির তুলনায় আমদানি বেশি হওয়ায় গত অর্থবছর বড় বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছিল বাংলাদেশ। এর ফলে ডলারের সংকট তৈরি হয়। ডলার সংকট কাটাতে দেশের আমদানিতে লাগাম টানায় উদ্যোগী হয় সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক। এজন্য নতুন ঋণপত্র (এলসি) খোলায় কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছিল, যার ফলে চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে ধারাবাহিকভাবে কমতে শুরু করেছে ঋণপত্র (এলসি) খোলার হার।

চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে নতুন এলসি খোলা হয়েছে দুই হাজার ৮২৮ কোটি ডলার বা ২৮ দশমিক ২৮ বিলিয়ন ডলার, যেখানে গত অর্থবছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল তিন হাজার ৩৭১ কোটি (৩৩ দশমিক ৭১ বিলিয়ন) ডলার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে ঋণপত্র খোলা কমেছে ৫৪৩ কোটি ডলার বা ১৬ দশমিক ১০ শতাংশ।

তবে নতুন এলসি খোলা কমলেও চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত এলসি নিষ্পত্তি বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে তিন হাজার ৩৫৪ কোটি ডলার বা ৩৩ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার এলসি নিষ্পত্তি করা হয়। গত অর্থবছরের একই সময় দুই হাজার ৭১৫ কোটি ডলার বা ২৭ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার এলসি নিষ্পত্তি হয়েছিল। সে হিসাবে এলসি নিষ্পত্তি বেড়েছে ২৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ।

সংশ্লিষ্টরা জানান, আমদানি নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে নতুন এলসি কমছে। যদিও বাকি বা দেরিতে পরিশোধের শর্তে আগে খোলা এলসির দায় পরিশোধ বেড়েছে, যে কারণে বৈদেশিক মুদ্রার খরচ কমেনি। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে এলসি খোলা ১৬ দশমিক ১০ শতাংশ কমলেও আমদানির দায় পরিশোধ বেড়েছে ২৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ। এর কারণ এলসি খোলার সঙ্গে সঙ্গে কোনো পণ্য আমদানি হয় না। বেশিরভাগ এলসির দেনা পরিশোধ হয় পণ্য দেশে আসার পর। অবশ্য সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বেশিরভাগ আমদানি হচ্ছে বায়ার্স ক্রেডিট বা ডেফার্ড পেমেন্টের মাধ্যমে। এ উপায়ে পণ্য পাওয়ার পর নির্ধারিত সময় শেষে এলসির দায় পরিশোধ করতে হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই মাসে এলসি খোলা হয়েছিল ৬৩৯, আগস্টে ৬৬১, সেপ্টেম্বরে ৬৫১, অক্টোবরে ৪৭৪ এবং নভেম্বরে ৪০২ কোটি ডলার। এ হিসাবে আগের মাসের তুলনায় নভেম্বরে নতুন এলসি কমেছে ২৭ দশমিক ১৮ শতাংশ। আর গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ কমেছে।

অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের জুলাই মাসে এলসি নিষ্পত্তি হয়েছিল ৭৪০, আগস্টে ৭৪০, সেপ্টেম্বরে ৬৭২, অক্টোবরে ৬৪১ এবং নভেম্বরে ৫৬০ কোটি ডলার। এ হিসাবে আগের মাসের তুলনায় নভেম্বরে নিষ্পত্তি কমেছে ১২ দশমিক ৬৩ শতাংশ। আর গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৯ দশমিক ৪২ শতাংশ কমেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলছেন, নানা শর্তের কারণে ঋণপত্র খোলা কমেছে। এটা আমাদের জন্য বড় একটা সাফল্য। কারণ আগে ব্যাংকগুলো অপ্রয়োজনীয় এলসি খুলত। এখন কড়াকড়ির কারণে যাচাই-বাছাই করেই খোলা হচ্ছে। আশা করছি এ সিদ্ধান্তের ফলে বৈদেশিক বাণিজ্যে ভারসাম্যহীনতা কমে আসবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমদানির নতুন এলসি খোলার পরিমাণ কমিয়ে আনতে পারলেও দেশের বাণিজ্য ও চলতি হিসাবের ঘাটতি কমাতে পারেনি। বরং চলতি অর্থবছরে ঘাটতির পরিমাণ আরও বেশি হয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে বাণিজ্য ঘাটতি পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৫৮ কোটি ডলার। গত বছরে একই সময়ে এ ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৯১৬ কোটি ডলার। সে হিসাবে ঘাটতি বেড়েছে ৪২ কোটি ডলার।

অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ঘাটতি ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছরের একই সময় এ ঘাটতি ছিল ৩ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের আগে আমদানির ওপর শর্ত আরোপ করা উচিত ছিল। গত অর্থবছরে আমাদের বাণিজ্য ঘাটতি সবচেয়ে বেশি ছিল। ওই সময়ে অনেক অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, গত বছরে আমদানি প্রায় ৩৫ শতাংশ বেড়েছে, কিন্তু এর ফলে শিল্প উৎপাদন বৃদ্ধির কোনো লক্ষণ নেই। এসব আমদানির মাধ্যমে প্রচুর অর্থ বিদেশে পাচার হয়েছে। উৎপাদন বাড়াতে হলে দেশে উৎপাদনশীল খাতসংশ্লিষ্ট আমদানি বাড়াতে হবে। তা না হলে মূল্যস্ফীতি বাড়বে।