শেয়ার বিজ ডেস্ক: ভঙ্গুর অর্থনীতি থেকে শ্রীলঙ্কাকে উদ্ধারের লক্ষ্যে ঋণ পুনর্গঠন নিয়ে আলোজন্য বৈঠকে বসেছেন কিশিদা-বিক্রমাসিংহ। গতকাল বৃহস্পতিবার টোকিওতে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার সঙ্গে বৈঠকে বসেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহ। খবর: রয়টার্স।
কিশিদার সঙ্গে বৈঠকের শুরুতে রনিল বলেন, অর্থনৈতিক সংকটে জর্জর শ্রীলঙ্কা সেপ্টেম্বর বা নভেম্বরের মধ্যে সদ্য চালু হওয়া ঋণ পুনর্গঠন আলোচনা শেষ করতে সক্ষম হবে।
রনিল বিক্রমাসিংহ বলেন, শ্রীলঙ্কা গত মার্চে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন বা ২৮০ কোটি ডলার আর্থিক পুনরুদ্ধারের (বেলআউট) অঙ্গীকার পায়। এ কর্মসূচির আওতায় অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে বলে আশাবাদী তার সরকার। কর্মসূচিটি এগিয়ে নেয়ার জন্য সেপ্টেম্বরের মধ্যে একটি ঋণ পুনর্গঠন কাঠামো নির্ধারণ করতে হবে। এছাড়া আমরা যতদূর সম্ভব ঋণ পুনর্গঠন আলোচনার উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছি। আমরা সেপ্টেম্বর বা নভেম্বরের মধ্যে এ কর্মসূচির আলোচনা শেষ করার চেষ্টা করছি।
প্রসঙ্গত প্রায় এক বছর ধরে আলোচনার পর আইএমএফের কাছ থেকে এ ঋণ পাওয়ার জন্য সমঝোতায় পৌঁছায় দেশটি। মার্চে শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলি সাবরি বলেন, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর পুনর্গঠন ও বিমান পরিবহন সংস্থার বেসরকারিকরণের মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহের পরিকল্পনা করছে সরকার। তবে বিশ্লেষকরা সতর্ক করে বলেছেন, এ সংকট উত্তরণে কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে শ্রীলঙ্কাকে।
জাপানি এক কর্মকর্তা বলেন, গত বছরের সেপ্টেম্বরের পর শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহের সঙ্গে এটি কিশিদার প্রথম বৈঠক। এই বৈঠকে নতুন উদ্যোগ তৈরি করার সম্ভাবনা নেই। তবে উভয় পক্ষ ঋণ পুনর্গঠন প্রচেষ্টার পর্যালোচনা করবে। গত মাসে শ্রীলঙ্কার ভঙ্গুর অর্থনীতিকে চীনা ঋণের ফাঁদ থেকে উদ্ধারের লক্ষ্যে ফ্রান্স, ভারত ও জাপান একজোট হয়। এ ব্যাপারে তারা একটি কমিটি গঠন করেছে। এ উদ্যোগে শরিক হওয়ার জন্য অন্যদেরও আমন্ত্রণ জানিয়েছে দেশ তিনটি। দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার বিভিন্ন সরকার চীন থেকে প্রচুর অর্থ ঋণ নিয়ে খরচ করে। এতে দেশটি ক্রমশ চীনা ঋণের ফাঁদে পড়ে যায়।
ফ্রান্স, ভারত ও জাপান সম্প্রতি শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে একটি কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এই কর্মসূচি ঘোষণার সময় ফ্রান্স ঋণদাতাদের শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ঋণ পুনর্গঠন-সংক্রান্ত আলোচনায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে। কারণ বিদেশি ঋণ নিয়ে শ্রীলঙ্কা শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় রয়েছে। এ জন্য দেশটিতে জ্বালানি, জরুরি খাদ্য ও ওষুধ আমদানি ব্যাহত হয়েছিল এবং রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছিল।
এর আগে শ্রীলঙ্কায় পর্যটকে ঠাসা থাকত। রাজধানী কলম্বো কিংবা পর্যটন নগরী গলের সড়কে পর্যটকদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। কভিড-১৯ মহামারি শুরু হওয়ার পর এতে ভাটা পড়ে। তাছাড়া ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ে দেশটি। এমন পরিস্থিতিতে বর্তমানে আলো জ্বালানোর মতো বিদ্যুৎ ছিল না দেশটিতে। ছিল না রান্না করার গ্যাস। অর্থ থাকলেও বাজারে পাওয়া যায়নি পণ্য। ধনীদেরও খাদ্যের অভাবে এক বেলা খেয়ে দিন কাটাতে হয়। এমন পরিস্থিতিতে গত বছর অর্থসহায়তার ঘোষণা দেয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত জুন-জুলাইয়ে কিছু কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থতার পর নিউইয়র্কভিত্তিক এস অ্যান্ড পি গ্লোবাল শ্রীলঙ্কার রেটিং ‘ডি’-তে নামিয়ে আনে। ঋণখেলাপিদের ক্ষেত্রে এস অ্যান্ড পি-র রেটিং ‘ডি’ দেয়া হয়।
আইএমএফ চলতি সপ্তাহে দেশের ঋণদাতাদের সঙ্গে সময়মতো পুনর্গঠন চুক্তির জন্য আহ্বান জানিয়েছে। বৈশ্বিক ঋণদাতা সংস্থাগুলো বলেছে, শ্রীলঙ্কার সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। যদিও এর আগে তারা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল চলতি বছর দেশটির অর্থনীতি সংকুচিত হবে।
উল্লেখ্য, শ্রীলঙ্কা সরকারও ঋণ পরিস্থিতি সহজ করতে ২০২৩ সালের শুরু থেকে আইএমএফ-এর আলোচনা চালিয়ে আসছে। তারা এ ব্যাপারে আগামী বছরের মে মাসের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরের আশা করছে। কারণ দেশটির কাছে দ্বিপক্ষীয় ঋণদাতাদের ৬৪০ কোটি ইউরো পাওনা রয়েছে। চীন হচ্ছে শ্রীলঙ্কার বৃহত্তম একক ঋণদাতা। দেশটির মোট বৈদেশিক ঋণের ১০ শতাংশ পাবে চীন।-