প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

ঋণ বিতরণে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ হোক

ব্যয় সংকোচনে কৃচ্ছ্রসাধনের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে সরকার। যতই রাষ্ট্রীয় খরচ কমিয়ে আনা হোক, সাধারণ মানুষ মনে করে অন্য অনেকভাবে রাষ্ট্রের ব্যয় বাড়ছে, অর্থ লোপাট হচ্ছে। মতভেদ থাকলেও সর্বসম্মত অভিমত, রাজনৈতিক কারণেই খেলাপিরা ছাড় পেয়ে যান।

ঢালাওভাবে না বললেও অর্থনীতিবিদরাও মাঝেমধ্যে বলেন, খেলাপি ঋণ এখন রাজনৈতিক বিষয়। বেসরকারি সংগঠন সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অব ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) বার্ষিক অর্থনীতিবিদ সম্মেলনে আলোচনায় অংশ নিয়ে দেশের খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদরা একই কথার পুনরাবৃত্তি করেছেন। রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে দু’দিনের সম্মেলনের প্রথম দিন শনিবার দুই জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ বললেন, খেলাপি ঋণ একটি বড় সমস্যা। আইএমএফ শর্ত দিলেও রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া তা কমবে না। শুধু কাগজে সই করলেই কি খেলাপি ঋণ কমে যাবেÑএ প্রশ্নও তুলেছেন তারা। অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান বলেছেন, সাধারণ মানুষ ব্যাংকে যে আমানত রাখছেন, তার একটা অংশ নিয়ে যাচ্ছেন প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা। নিয়ে তা ফেরতও দিচ্ছেন না। আরেক অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া খেলাপি ঋণ কমবে না। এমনকি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বললেও কমবে না।

আইএমএফ যে ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দিচ্ছে, তাতে অন্য অনেক শর্তের মধ্যে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার শর্তও রয়েছে। উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাটি বলেছে, রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের নিচে এবং বেসরকারি ব্যাংকের ক্ষেত্রে তা রাখতে হবে ৫ শতাংশের নিচে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর খেলাপি ঋণ ৩৩ হাজার কোটি বেড়ে ১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকে খেলাপি ঋণের হার ২৩ শতাংশ। বেসরকারি ব্যাংকে ৬ শতাংশের কিছু বেশি। সার্বিকভাবে মোট ঋণের ৯ শতাংশের বেশি খেলাপি। অবশ্য ব্যাংকাররা বলছেন, প্রকৃত খেলাপি ঋণ আরও বেশি। কারণ, বারবার পুনঃতফসিল ও অবলোপন করে খেলাপি ঋণ গোপন করা হয়। আর অনেকে খেলাপি হয়ে পড়লেও তা হিসেবে দেখানো হয় না।

বড় বড় ঋণখেলাপিকে সুবিধা দিয়ে খেলাপির তালিকা থেকে নাম কাটানোর সুযোগ দেওয়ার বিষয় উল্লেখ করেÑঅধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক মাত্র ২ শতাংশ অর্থ জমা দিয়ে খেলাপি থেকে বের হয়ে যাওয়ার সুযোগ দিচ্ছে। এটা একটা অন্যায্য ব্যবস্থা।

খেলাপি ঋণ বিষয়ে সরকার বরাবরই উদার। যেমন শনিবারও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, খেলাপি ঋণ কমাতে সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা আছে। গত কয়েক বছর একটা দুর্যোগপূর্ণ সময় গেছে। ব্যবসায়ীদের এ কারণে একটু সুযোগ দিতে হয়েছে।’

খেলাপি ঋণ আদায়ে সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা নেই, তা আমরা জোর দিয়ে বলতে পারি না। কিন্তু খেলাপি ঋণ কমছে না, খেলাপি ঋণ কমিয়ে দেখাতে কৌশল নেয়া হচ্ছে, খেলাপিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে; এটিই বাস্তবতা। বলা যায় খেলাপি ঋণ আদায়ে সরকারের সদিচ্ছা থাকলেও তা দৃশ্যমান নয়। এতে প্রতীয়মান হয় ঋণ বিতরণ এমনকি আদায়েও রাজনৈতিক অবস্থান বিবেচ্য। খেলাপি ঋণ কমাতে এমন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সরে আসতে হবে।