প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

একাধিক চাকরি করতে বাধ্য হচ্ছেন যুক্তরাজ্যের শিক্ষকরা

শেয়ার বিজ ডেস্ক : যুক্তরাজ্যে দশ শিক্ষকের মধ্যে একজন দ্বিতীয় চাকরি করতে বাধ্য হচ্ছেন। শিক্ষকতার বাইরে তাদের ট্যাক্সি চালিয়ে, পানশালায় কাজ করে ও প্রাইভেট পড়িয়ে মাসিক খরচ ও খাদ্যের সংকুলান করতে হচ্ছে বলে সতর্ক করেছেন দেশটির প্রধান শিক্ষকবৃন্দ ও সংগঠনগুলো। খবর: দ্য গার্ডিয়ান।

দেশটির শিক্ষকদের সংগঠন এনএএসইউডব্লিউটি পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, দশজনে একজন শিক্ষক দ্বিতীয়, এমনকি তৃতীয় চাকরি করছেন। কারণ বেতন-ভাতা দিয়ে মাসের খরচ মেটাতে পারছেন না তারা। সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষকদের বেতন পাঁচ শতাংশ বাড়ানো হলেও স্কুলের ফুড ব্যাংকের ওপর তাদের নির্ভরশীলতা বাড়ছে।

গ্যালাক্সি ট্রাস্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা গেরি র‌্যাটক্লিফ কেন্টে ৯টি স্কুল পরিচালনা করেন। তিনি বলেন, আমার স্কুলের শিক্ষকদের মধ্যে যারা প্রাইভেট পড়ান, তাদের একজনকে সপ্তাহান্তে একটি গ্রিক রেস্তোরাঁয় নর্তকীর ভূমিকায় দেখেছি। আরেক শিক্ষককে একটি খামারে সহকারী হিসেবে কাজ করতে দেখেছি এবং আরও একজন স্কুল ছুটির পর পানশালায় কাজ করেন বলে শুনেছি।

র‌্যাটক্লিফ আরও বলেন, ছুটির দিনগুলোয় অতিরিক্ত আয়ের জন্য তারা কাজ করছেন না, বরং খাদ্যের জন্য তারা একাধিক চাকরি করছেন। তিনি আরও যোগ করেন, তার একটি স্কুলে শিক্ষার্থীদের পরিবারের জন্য ফুড ব্যাংক চালু করা হয়েছিল, পরে স্টাফদের জন্যও বিনা খরচে খাদ্য বিতরণ কর্মসূচি চালু করা হয়। তিনি বলেন, কোনো বাছবিচার ছাড়াই কর্মীদের খাবার বিতরণ করা হয় এবং তা নিয়মিত।

র‌্যাটক্লিফ ট্রাস্ট সম্প্রতি তাদের সব স্কুলে কর্মীদের মঙ্গলের জন্য একটি জরিপ পরিচালনা করে। এতে দেখা গেছে, জীবনযাপনের ব্যয়ভার বহন করতে অক্ষম কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তারা কাজে আনন্দ পান না।

র‌্যাটক্লিফ বলেন, শিক্ষকরা তাদের আর্থিক দুরবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন। অনেকে ব্যক্তিগত গাড়ির খরচ বহন করতে না পেরে গণপরিবহন ব্যবহার করছেন। মূলত বেঁচে থাকার জন্য তারা কাজ করছেন, উন্নতির জন্য নয়।

এনএএসইউডব্লিউটি’র মহাসচিব প্যাট্রিক রোচ বলেন, ‘অপ্রত্যাশিত কাজের চাপ’ সত্ত্বেও বেশিরভাগ শিক্ষক স্কুলের বাইরে অতিরিক্ত কাজ করছেন, খুচরা কাজ করছেন তারা। মূল্যস্ফীতির কারণে তাদের সামনে বিকল্প পথ খোলা নেই। আমাদের সদস্যরা বলছেন, অল্প পারিশ্রমিকের বিনিময়ে তারা কঠোর পরিশ্রম করছেন। তাদের অনেকে এভাবে কত দিন শিক্ষকতা পেশা চালিয়ে যেতে পারবেন, তা নিশ্চিত নয়।

শিক্ষকদের সুস্থতা নিয়ে দাতব্য সংস্থা এডুকেশন সাপোর্টের সহায়তায় পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, মানসিক চাপে রয়েছেন শিক্ষকরা এবং অর্ধেকের বেশি শিক্ষক চাকরি ছেড়ে দিতে চাইছেন। সংস্থার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সিনিয়াড ম্যাক ব্রিয়েটি জানিয়েছেন, চলতি বছর তার সংস্থা শিক্ষকদের জন্য অনুদানের হার বাড়িয়েছে। এবার মূলত খাবার কেনায় সহায়তায় জন্য অনুদান বাড়ানো হয়েছে। আমরা তাদের বাড়িভাড়া কিংবা মর্টগেজের বিলসহ অন্যান্য বিল ও যাতায়াতের জন্যও বরাদ্দ বাড়িয়েছি।

সাউথ লন্ডনের একটি কমিউনিটি স্কুলের পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক অলিভার টেইলর বলেন, বেতনের কারণে নিজেকে ছোট মনে হয়, অথচ আমি আসলেই একজন ভালো শিক্ষক এবং যে বিষয়টি পড়াই, তার জন্য পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই। তারপরও আমি ন্যায্য প্রাপ্যটুকু পাই না।

টেইলর ছোট একটি ফ্ল্যাটে একা থাকেন এবং এজন্য তার বেতনের অর্ধেক দিতে হয়। উচ্চমূল্যের কারণে সবকিছুর ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় তাকে স্কুলের বাইরে কাজ করতে হয়। তিনি বলেন, আমি একটি নামকরা স্কুলের শিক্ষক এবং এখানে আমি মর্যাদা নিয়ে কাজ করছি, কিন্ত নুন আনতে পান্তা ফুরোয় অবস্থা আমার।

শিক্ষা বিভাগের একজন মুখপাত্র বলেন, সরকার চলতি বছর শিক্ষকদের বেতন সর্বোচ্চ করার ঘোষণা দিয়েছে। নতুন শিক্ষকদের বেতন ৮ দশমিক ৯ শতাংশ বাড়ানো হবে। আমরা অনেক শিক্ষকের কাজের চাপ সম্পর্কে জানি, তবে সমাজের প্রায় সবাই এ মুহূর্তে উচ্চমূল্যস্ফীতির কারণে চ্যালেঞ্জে রয়েছেন।