মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ : পুঁজিবাজারের সার্বিক অবস্থা ভালো থাকায় ক্রমইে এখানে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ বাড়ছে। এর প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে সম্প্রতি বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) অ্যাকাউন্ট খোলার প্রবণতায়। এক মাসের ব্যবধানে বাজারে নতুন বিও খোলা হয়েছে প্রায় ২০ হাজার। এর আগের মাসে বিও অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছিল আট হাজারের কিছু বেশি।
ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে শেয়ার তথ্য সংরক্ষণকারী কোম্পানি সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) সূত্রে এ খবর জানা গেছে।
সিডিবিএলের তথ্যমতে, বর্তমানে মোট বিও রয়েছে ২৯ লাখ ৩৯ হাজার ৬৫১টি। এক মাস আগের যার সংখ্যা ছিল ২৯ লাখ ২০ হাজার ২৯টি। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে বিও বেড়েছে ১৯ হাজার ৬২২। বর্তমানে যে বিও রয়েছে এর মধ্যে পুরষ অ্যাকাউন্টধারীর সংখ্যা ২১ লাখ ৩৪ হাজার ২৯৫টি। অন্যদিকে বর্তমানে নারী বিও সংখ্যা রয়েছে সাত লাখ ৯৪ হাজার ৩৯৩টি। আর বর্তমানে কোম্পানির বিও সংখ্যা রয়েছে ১০ হাজার ৯৬৩টি।
এর আগে সময়মতো বিও ফি না দেওয়ায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে দুই লাখের বেশি বিও।
সংশ্লিষ্টদের মতে, প্রধানত দুই কারণে এবার অসংখ্য বিও বাতিল হয়েছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে দীর্ঘদিন থেকে বাজারের মন্দা পরিস্থিতি অন্যটি প্রাইমারি মার্কেট থেকে বিনিয়োগকারীদের সুবিধা না পাওয়া। যে কারণে বিনিয়োগকারীরা ৫০০ টাকা দিয়ে বিও নবায়ন করেননি। ফলে এসব অ্যাকাউন্ট বাতিল হয়ে গেছে।
সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) ডিপোজিটরি (ব্যবহারিক) প্রবিধানমালা, ২০০৩ এর তফসিল-৪ অনুযায়ী, বিও হিসাব পরিচালনার জন্য ডিপোজিটরি অংশগ্রহণকারী বা বিনিয়োগকারীকে নির্ধারিত হারে বার্ষিক হিসাবরক্ষণ ফি দিয়ে হিসাব নবায়ন করতে হয়। এর আগে পঞ্জিকাবর্ষ হিসেবে প্রতিবছর ডিসেম্বরে এ ফি জমা নেওয়া হতো। তবে ২০১০ সালের জুন মাসে বিএসইসি বিও হিসাব নবায়নের সময় পরিবর্তন করে বার্ষিক ফি প্রদানের সময় জুন মাস নির্ধারণ করে। এ সময়ে বিও নবায়ন ফি ৩০০ থেকে বাড়িয়ে ৫০০ টাকা করা হয়। এরপর বিএসইসির জারি করা ২০১১ সালের ১৮ এপ্রিল এক নির্দেশনায় ৩০ জুনের মধ্যে বিও হিসাব নবায়নের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়। তা না-হলে তা বাতিল করা হবে বলে ওই সার্কুলারে বলা হয়েছিল।
কিছুদিন আগেও বিও অ্যাকাউন্ট খোলার প্রবণতা একেবারেই থমকে ছিল। ২০১০ সালের পর থেকে মূলত বিনিয়োগকারী এবং সাধারণ জনগণের পুঁজিবজারের প্রতি অনাগ্রহ তৈরি হয়। ফলে বাজার ছাড়াতে শুরু করেন বিনিয়োগকারীরা। অন্যদিকে সাধারণ জনগণও পুঁজিবাজারমুখী হননি। যে কারণে একেবারে থমকে যায় বিও খোলা। কোনো কোনো হাউজে দিনে একটি বিও ওপেন হয়নি এমন নজিরও রয়েছে। এরপর ২০১২ সাল থেকে ধীরে ধীরে বিও বাড়তে থাকে। তবে বর্তমানে বাজার ভালো থাকায় আবারও নতুন অ্যাকাউন্ট খোলার পরিমাণ বাড়ছে।
এ প্রসঙ্গে মিডওয়ে সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ডিএসইর পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন ‘পুঁজিবাজার ভালো না হলে এখানে বিনিয়োগকারীরা আসবেন না। এটা খুবই স্বাভাবিক। এখন পুঁজিবাজারের সার্বিক অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, এটা পুঁজিবাজারের ভালো লক্ষণ। আর এটা দেখে পুরোনো বিনিয়োগকারীর পাশাপাশি সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও পুঁজিবাজারে ফিরে আসছেন।’
একই প্রসঙ্গে জয়তুন সিকিউরিটিজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বাজারের সার্বিক পরিস্থিতির সঙ্গে বিও অ্যাকাউন্ট খোলার বিষয়টি জড়িত। বাজারে ভালো থাকলেই অ্যাকাউন্ট সংখ্যা বাড়ে।’