প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

এক সুইসগেট পাল্টে দিতে পারে সীমান্তের পাঁচ গ্রামের মানুষের ভাগ্য

রফিক মজিদ, শেরপুর : ছোট্ট একটি খালের ওপর একটি সুইসগেট নির্মাণে পাল্টে যেতে পারে শেরপুর গারো পাহাড় এলাকার সীমান্তের ৫ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষের ভাগ্য। শেরপুরের গারো পাহাড়ে দীর্ঘদিন থেকেই পানি সংকটের কারণে আবাদ-ফসল থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন হাজার হাজার মানুষ। সম্প্রতি জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার কালাঘুষা খালের ওপর একটি সুইসগেট নির্মাণের পরিকল্পনার খবরে সরব হয়ে উঠে স্থানীয়রা। কিন্তু সেই সুইসগেট নির্মাণ নিয়ে স্থানীয় একটি চক্র বাধাগ্রস্ত করার প্রতিবাদে স্থানীয়রা বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে আসছেন।

জানা গেছে, সীমান্তবর্তী শেরপুর জেলার গারো পাহাড় এলাকা বিস্তৃর্ণ এলাকা কেবল সেচের কারণে অনাবাদি হয়ে পড়ে থাকে। ওইসব এলাকার অসংখ্য পাহাড়ি ছড়া ও খালে বর্ষাকালের পর থেকে শুকিয়ে যায়। ফলে ওইসব এলাকার মানুষ কেবল আমন আবাদ ছাড়া অন্য কোনো চাষাবাদ করতে পারে না। তাই জাইকার অর্থায়নে সম্প্রতি সরকার ওই এলাকার কাংশা ইউনিয়নের কালাঘুষা খালের ওপর ‘ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন’ উপপ্রকল্প গ্রহণ করেছে। ওই প্রকল্পের প্রাথমিক সম্ভাব্যতা যাচাই শেষ করে বন বিভাগের অনাপত্তি গ্রহণের অপেক্ষায় রয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি কতিপয় অবৈধভাবে বালি উত্তোলনকারী এলাকায় ভিন্ন মতাবলম্বন করে প্রকল্পটি যাতে না বাস্তবায়ন হয় সেজন্য নানা কৌশলে নেতিবাচক প্রচারণা চালাচ্ছেন। বিষয়টি ভুক্তভোগীরা জেনে ওই প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিতে সম্প্রতি বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচি গ্রহণ করে।
তারা জানায়, দীর্ঘদিন ধরে পাহাড়ি এলাকায় কেবল আমন আবাদ ছাড়া অন্য কোনো ফসল ও সবজি চাষ করতে না পারায় অর্থনৈতিকসহ নানা সংকটের মধ্যে রয়েছে। ফলে প্রকল্পটির দ্রুত বাস্তবায়ন চায় তারা।

স্থানীয় গ্রামবাসীর মধ্যে মো. দুলাল উদ্দিন মণ্ডল জানায়, সুইস গেটটি বাস্তবায়ন হলে কাংশা ইউনিয়নের গান্ধিগাঁও, হালচাটি, নওকুঁচি, বাকাকূড়া ও ডেফলাইয়ের একটি অংশসহ ৫ গ্রামের প্রায় ২ হাজার একর জমিতে রবি শস্যসহ বোরো আবাদ সেচের আওতায় আসবে। এছাড়া এসব গ্রামে হাতির অত্যাচারে ক্ষতিগ্রস্ত ও অতিষ্ঠ মানুষ আমনের পাশপাশি বোরো এবং অন্যান্য ফসলাদি করে তাদের ক্ষতির কিছুটা হলেও পোষাতে পারবে।

এদিকে ঝিনাইগাতী উপজেলার ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান নবেশ খকশি জানায়, এ সøুইসগেট চালু হলে স্থানীয় আদিবাসী-বাঙালি অধ্যুষিত মানুষের ভাগ্য বদল যাবে।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. আতাউর রহমান জানায়, প্রকল্পের দ্রুত বাস্তবায়ন চায় এবং একটি কুচক্রী মহল এতে বাধা দিয়েও কোনো কাজ হবে না। কারণ, এ সুইসগেট এলাকাবাসীর প্রাণের দাবি। এটি বাস্তবায়ন হলে সীমান্তের হাজার হাজার মানুষের সেচ সংকট কেটে যাওয়ার পাশাপাশি এলাকার জীবনমানের উন্নয়নও হবে।

এদিকে প্রকল্প গ্রহনকারী এলজিইডির নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানায়, এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে পাহাড়ি এলাকায় শুষ্ক মওসুমে যেখানে কেবল পানির অভাবে কৃষকরা কোন চাষাবাদ করতে পারে না, তারা সেই পানি পাবে এবং স্বল্প খরচে প্রায় দেড় হাজার একর জমিতে সেচ দিতে পারবে। স্থানীয় অবৈধ বালু উত্তোলনকারী একটি কুচক্রী মহল এ প্রকল্পের বিষয়ে স্থানীয়দের নানা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা শেষে বন বিভাগের অনাপত্তি পত্রের অপেক্ষায় রয়েছে। ওই চিঠি পেলেওই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক সভায় দেশবাসীকে এক ইঞ্চি জমি অনাবাদি না রেখে চাষাবাদের আওতায় আনার পরামর্শ দিয়েছেন। সেখানে পাহাড়ি অনাবাদি শত শত একর জমি এই সøুইসগেটের মাধ্যমে চাষাবাদের আওতায় আসুক এমনটিই প্রত্যাশা করছে স্থানীয় সচেতন মহল।