প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

এবার জাহাজ ভাঙা ব্যবসায় বসুন্ধরা গ্রুপ

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: দেশের অন্যতম বড় শিল্পগ্রুপ বসুন্ধরা। সমুদ্র ও নৌপথে পণ্য পরিবহনে এ গ্রুপের একাধিক জাহাজ আছে। জাহাজ নির্মাণ খাতেও প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এবার জাহাজ ভাঙার ব্যবসায় এলো বসুন্ধরা। গ্রুপটির সহযোগী প্রতিষ্ঠান টগি শিপ রিসাইকেল বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইক্লার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএসবিআরএ) থেকে সদস্যপদ নিয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে ইয়ার্ডও ভাড়া নিয়েছে। 

বিএসবিআরএ’র তথ্যমতে, ষাটের দশকে সীতাকুণ্ড উপজেলার ফৌজদারহাট সমুদ্র উপকূলে ঝড়ে আটকে যাওয়া জাহাজ কুইন আল পাইন ভেঙে স্থানীয় কয়েকজন পুঁজিপতি এখানে জাহাজ ভাঙা শিল্পের সূচনা করেন। আশির দশকের মধ্যে ফৌজদারহাট থেকে বার আউলিয়া পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে জাহাজ ভাঙা শিল্প। একে একে গড়ে ওঠে ১৫৪টি জাহাজ ভাঙা প্রতিষ্ঠান। কয়েক বছর ধরে মন্দা ও লোকসানের কারণে অধিকাংশ জাহাজ ভাঙার প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়।

পুরোনো জাহাজ আমদানির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরে জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত বিভিন্ন ইয়ার্ডে পুরোনো জাহাজ ভেঙে আট লাখ ৭৫ হাজার ৫৬০ টন স্ক্র্যাপ পাওয়া যায়। এর মধ্যে প্রথম ছয় মাসে চার লাখ ৩২ হাজার ১৯৩ টন স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি হয়েছে, আর গত ২০২১-২২ অর্থবছরে হয়েছে ১১ লাখ ৪৫ হাজার ৩২৪ টন। অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় প্রায় ১১ হাজার ১৭৪ টন বেশি। এছাড়া অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে চট্টগ্রামের বিভিন্ন শিপইয়ার্ডে স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি হয়েছিল ৬৬টি। গত এক দশকের মধ্যে সর্বনি¤œ স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি হয়েছে ২০২২ সালে। এ বছরের জানুয়ারি-এপ্রিল পর্যন্ত স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি হয়েছে ৬৬টি। কিন্তু নতুন পরিবেশ আইনে এ শিল্পটিকে আবারও লাল শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে। ফলে কয়েক ধরনের ছাড়পত্র পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম অফিসের অনুমোদন দেয়ার ক্ষমতা নেই। এর অনুমোদন ঢাকা থেকে আনতে দু-এক মাস লাগছে।

বিএসবিআরএ বলছে, বর্তমানে ৩৮টি আমদানিকৃত পুরোনো জাহাজ ভাঙার অনুমোদনের অপেক্ষায়। এসব জাহাজের প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ আছে। কিন্তু কাটার অনুমতি পেতে দেরি হওয়ায় প্রতিদিন জাহাজপ্রতি গড়ে পাঁচ লাখ টাকা ব্যাংক সুদ গুনতে হচ্ছে। নতুন করে এলসি দেয়া ও সীমিত পরিসরে ডলার সরবরাহের কারণে বছরের প্রথম চার মাসে আমদানি কিছুটা বেড়েছে। বর্তমানে স্ক্র্যাপ জাহাজের বাজার কিছুটা স্থিতিশীল। 

বিএসবিআরএ নেতারা বলছেন, শুনেছি বসুন্ধরা ইস্পাত কারখানা স্থাপন করছে। হয়তো তাদের কাঁচামাল সরবরাহের জন্য শিপব্রেকিং ইয়ার্ড করেছে। আমরা তাদের স্বাগতম জানাই। জাহাজ ভাঙা শিল্পে বড় প্রতিষ্ঠানের আসা উচিত, যদিও জাহাজ ভাঙা ব্যবসায় মন্দা চলছে। বড় বিনিয়োগের কারণে আবার চাঙ্গা হবে।

উল্লেখ্য, পুরোনো জাহাজ ভাঙার ইয়ার্ড থেকে বছরে প্রায় প্রায় ২০ লাখ টন স্ক্র্যাপ পাওয়া যেত। কভিড সংক্রমণ, ডলার সংকট ও রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে জাহাজ আমদানি কমেছে ৭০ শতাংশের বেশি। ফলে এখন বছরে ছয় বা সাত লাখ টনে নেমেছে। এর প্রভাব পড়ে ইস্পাতের দামে।