প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ:সরকারি খাতে ব্যয় বাড়ছে ৫১ শতাংশ

 

ইসমাইল আলী: রাজধানীর যানজট কমাতে ২০১১ সালে নেওয়া হয় ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বে (পিপিপি) এটি নির্মাণে বিনিয়োগ করছে ইতালিয়ান-থাই ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি। আর জমি অধিগ্রহণ, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যয় নির্বাহ করছে সরকার। তবে রুট জটিলতায় এর নির্মাণকাজ বন্ধ ছিল সাড়ে প্রায় পাঁচ বছর। অবশেষে গত আগস্টে শুরু করা হয় এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ। এতে বাস্তবায়ন বিলম্বে সরকারি খাতের ব্যয় বাড়ছে ৫১ দশমিক ৩৮ শতাংশ।

ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাবনা পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) বৈঠকে উঠছে আজ। এ-সংক্রান্ত কার্যপত্রে বলা হয়েছে, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে চারটি খাতে সহায়তা করছে সরকার। এগুলো হলো: ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন, পরিষেবা সংযোগ লাইন স্থানান্তর, পরিবেশগত ও সামাজিক সমীক্ষা এবং পরামর্শক নিয়োগ। ২০১১ সালের জুলাইয়ে এজন্য সাপোর্ট টু ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।

২০১৪ সালের ডিসেম্বরে এর কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে মূল এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ বিলম্বে সাপোর্ট টু ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নও পিছিয়ে যায়। নতুন হিসেবে এর কাজ শেষ হবে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে। এদিকে সাপোর্ট টু এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পে ২০১১ সালে ব্যয় ধরা হয়েছিল তিন হাজার ২১৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে চার হাজার ৮৮৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা। অর্থাৎ বাস্তবায়ন বিলম্বে ব্যয় বাড়ছে এক হাজার ৬৬৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।

জানতে চাইলে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের পরিচালক কাজী মোহাম্মদ ফেরদৌস শেয়ার বিজকে বলেন, পিপিপির আওতায় এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণ করা হচ্ছে। শুরুর দিকে ভূমি অধিগ্রহণ, অ্যালাইনমেন্ট জটিলতার কারণে কিছু সমস্যা ছিল। বর্তমানে প্রকল্পের কাজ চলছে পুরোদমে। এ খাতে ব্যয় বাড়ছে না। তবে সাপোর্ট প্রকল্পের ব্যয় কিছুটা বেড়েছে।

সূত্র জানায়, প্রকল্পের রুট পরিবর্তনের কারণে জমি অধিগ্রহণের পরিমাণ কমেছে। তাই এ খাতে ব্যয় কমেছে ১০০ কোটি টাকা। এছাড়া পরিষেবা সংযোগ লাইন স্থানান্তরে ব্যয় কমেছে ১০০ কোটি টাকা। তবে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে আশুলিয়ায় জমি প্রদান ও ভবন নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে। এ খাতে ব্যয় বেড়েছে এক হাজার ৮২৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। এদিকে পরামর্শক খাতে ব্যয় বেড়েছে ২৪ কোটি ৬১ লাখ টাকা। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা খাতে ব্যয় বাড়ছে ১১ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। গাড়ি কেনায় তিন কোটি ৫৩ লাখ ও জ্বালানি বাবদ দেড় কোটি টাকা ব্যয় বাড়ছে। তবে ভ্যাট, ট্যাক্স, প্যানেল অব এক্সপার্ট ও অন্যান্য ব্যয় কমেছে প্রায় ১৯৫ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে ব্যয় বাড়ছে ৫১ দশমিক ৩৮ শতাংশ।

তথ্যমতে, ২০১১ সালের ৩০ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এরপর রুট জটিলতা ও অর্থায়ন নিশ্চিত না হওয়ায় প্রকল্পের কাজ আর শুরু হয়নি। পরবর্তী সময়ে ২০১৩ সালে এক্সপ্রেসওয়ের রুট সংশোধন করা হয়। এর ভিত্তিতে সংশোধন করা হয় এক্সপ্রেসওয়ের নকশা। পরে প্রকল্পটি সংশোধন করা হয়। তখন মূল এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় আট হাজার ৭০৩ কোটি ১১ লাখ টাকা। এর মধ্যে পিপিপিতে বিনিয়োগ করা হবে ছয় হাজার ৪৪৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা। আর ভায়াবিলিটি গ্যাপ ফান্ড হিসেবে সরকার দেবে দুই হাজার ২৫৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা।

রুট সংশোধনের পর শুরু করা হয় এক্সপ্রেসওয়ের জমি অধিগ্রহণ। এরপর পুনর্বাসনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে সরকারি নতুন পে-স্কেলের কারণে বেতন-ভাতা খাতেও ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। সব মিলিয়ে সাপোর্ট প্রকল্পের ব্যয়ও বেড়ে গেছে।

সম্প্রতি সরেজমিনে প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কুড়িল ও জোয়ারসাহারা এলাকায় এক্সপ্রেসওয়ের পাইলিংয়ের কাজ চলছে। এরই মধ্যে কয়েকটি পিলারও নির্মাণ করা হয়েছে। তবে নির্মাণকাজের গতি তুলনামূলক কম।

উল্লেখ্য, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে ২০১১ সালের ১৯ জানুয়ারি ইতালিয়ান-থাই ডেভেলপমেন্ট কোম্পানির (বিনিয়োগকারী) সঙ্গে চুক্তি করে সরকার। আর সংশোধনের পর ২০১৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর আবার চুক্তি সই করা হয়। এদিকে প্রাথমিকভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ১৩০ একর জমি অধিগ্রহণের প্রাক্কলন করা হয়েছিল। সংশোধিত অ্যালাইনমেন্টে তা কমে দাঁড়ায় ২৬ একরে। তবে নতুন হিসাবে সরকারি জমি লাগবে ১৯৪ একর। কারণ, এক্সপ্রেসওয়ের বেশিরভাগ অংশই রেললাইনের ওপর দিয়ে যাবে।

তিন ধাপে এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণ করা হবে। প্রথম ধাপে নির্মাণ করা হবে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বনানী রেলস্টেশন পর্যন্ত ৭ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার, দ্বিতীয় ধাপে বনানী থেকে মগবাজার পর্যন্ত ৫ দশমিক ৮৫ কিলোমিটার ও তৃতীয় ধাপে মগবাজার থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত ৬ দশমিক ৪৩ কিলোমিটার।