শেয়ার বিজ ডেস্ক : মার্কিন কংগ্রেসের নি¤œকক্ষ হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভস বা প্রতিনিধি পরিষদ বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা প্রবর্তিত বহুল আলোচিত স্বাস্থ্যনীতি ওবামাকেয়ার বাতিলে প্রথম পদক্ষেপ নিয়েছে। খবর রয়টার্স, বিবিসি।
অ্যাফোরড্যাবল হেলথ কেয়ার অ্যাক্ট-২০১০ (যা ওবামাকেয়ার নামে পরিচিত) বাতিলের জন্য ২৭ জানুয়ারির মধ্যে খসড়া আইন প্রণয়নে চারটি নির্দেশনা কমিটি গঠনের প্রস্তাব গত শুক্রবার প্রতিনিধি পরিষদে ২২৭-১৯৮ ভোটে পাস হয়।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার মার্কিন সিনেটও একই প্রস্তাব অনুমোদন করে।
প্রতিনিধি পরিষদের কোনো ডেমোক্র্যাট সদস্য নির্দেশনা কমিটি গঠনের প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়নি। ৯ রিপাবলিকান সদস্যও এর বিপক্ষে ভোট দেন।
এই প্রস্তাব পাসের মাধ্যমে ওবামাকেয়ার বিলুপ্ত করতে নিজেদের দেওয়ার প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন শুরু করলো রিপাবলিকানরা। যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট রিপাবলিকান দলীয় ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলোর মধ্যেও এটি বাতিলের কথা ছিল।
ডোনাল্ড ট্রাম্প এক টুইট বার্তায় বলেন, সাধ্যাতীত এই ওবামাকেয়ার শিগগিরই ইতিহাসে চলে যাবে।
ওবামাকেয়ার বাতিলের প্রস্তুতি গ্রহণ করা শুরু হলেও এর বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় কংগ্রেসের রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট, উভয় দলীয় সদস্য উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
ওবামাকেয়ারের আওতায় যুক্তরাষ্ট্রের দুই কোটিরও বেশি নাগরিক চিকিৎসাসেবার আওতায় এসেছিল। এখন রাজনৈতিক শক্তি প্রদর্শনের খেলায় তা বাতিল হলে এদের কী হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ক্ষমতা ছাড়ার সপ্তাহখানেক আগে গ্রহণ করা পদক্ষেপটি ওবামার জন্য একটি বিপর্যয়; কিন্তু এই বিপর্যয় সামাল দেওয়ার সময় আর নেই তার। ২০ জানুয়ারি ক্ষমতার পালাবদলে ট্রাম্পের হাতে ক্ষমতা তুলে দিয়ে বিদায় নেবেন ওবামা।
প্রতিনিধি পরিষদের ভোটাভুটির পর দেওয়া এক বিবৃতিতে পরিষদের স্পিকার রিপাকলিকান পল রায়ান বলেন, ওবামাকেয়ার বাতিলে পদক্ষেপ নেওয়ার মাধ্যমে এই নীতির ফলে মার্কিন জনগণকে যেসব সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে, তা থেকে মুক্তি দেওয়ার পথে আমরা আরও অগ্রসর হলাম।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই পদক্ষেপ এক এক করে সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিজের হাতে তুলে নেওয়ার নিয়ন্ত্রণ তুলে ধরবে।’
চাকরির সুযোগ-সুবিধার মধ্যে চিকিৎসাসেবার সুযোগ নেইÑযুক্তরাষ্ট্রের এমন লাখ লাখ মানুষ ওবামাকেয়ারের মাধ্যমে হ্রাসকৃত মূল্যে স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ পেয়েছিল। এটি অসুস্থ ও বয়স্কদের চিকিৎসা বাবদ খরচের রাশ টেনে ধরেছিল এবং ইতোমধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়া লোকদের ইন্স্যুরেন্সের আওতায় নেওয়ার জন্য কোম্পানিগুলোকে বাধ্য করেছিল। কিন্তু বাড়তে থাকা প্রিমিয়াম, বাড়তি ফি’র কারণে কিছু সমস্যাও তৈরি করেছিল।
ওবামার স্বাস্থ্যনীতি বাতিল হলেও রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট উভয় দলের সদস্যই ওবামাকেয়ার-এর পরিবর্তে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নতুন আইনের প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়েছেন। এ আইন নিয়ে মার্কিন রাজনীতিতে টানাপড়েনে দুই কোটি মার্কিনির স্বাস্থ্যসেবাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।
গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি ওবামাকেয়ার বাতিল না করার অনুরোধ জানিয়ে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, ‘স্বল্প ব্যয়ে এত বেশিসংখ্যক মানুষকে স্বাস্থ্যসেবার আওতায় নিয়ে আসাটা অন্য কোনো নীতির মাধ্যমে সম্ভব নয়। আমার প্রশাসনের হলেও ওবামাকেয়ার নামটি আমি দেইনি। রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে না দেখে মানুষের কল্যাণের কথা চিন্তা করে আইনটি যেন বাতিল করা না হয়।’
ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারের সময়ই ঘোষণা দিয়েছিলেন, প্রেসিডেন্ট হয়ে ক্ষমতায় এলে তিনি ওবামাকেয়ার বাতিল করবেন। ট্রাম্প প্রশাসনের প্রথম কাজই হবে ওবামাকেয়ার বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু করা। তবে ওবামাকেয়ার বাতিলের পুরো প্রক্রিয়াটি সমাপ্ত করতে অন্তত ১০ বছর লেগে যেতে পারে।