প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

ওশি ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদন: ২০১৬ সালে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় মৃত্যু ১২৪০ জনের

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে কর্মপরিবেশের ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে। ২০১৬ সালে বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় এক হাজার ২৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আগের বছর এ সংখ্যা ছিল ৯৫১। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে কর্মক্ষেত্রে মৃত্যুর সংখ্যা ২৪৯ জন বেড়েছে। আর গত পাঁচ বছরে কর্মস্থলে মৃত্যুর সংখ্যা চার হাজার ৬১৬। আহতের সংখ্যাও চার হাজার ৩৭৪।

গতকাল শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে বাংলাদেশ অক্যুপেশনাল সেইফটি, হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট (ওশি) এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদনে প্রকাশ করে। এ সময় নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য গৃহীত নীতিমালা বাস্তবায়নে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

সংস্থাটি ১০টি দৈনিক পত্রিকার প্রতিবেদন ও নিজস্ব তথ্য নিয়ে ২০১৬ সালের ঝুঁকিপূর্ণ কর্মপরিবেশের বিষয়ে এ সমীক্ষা প্রতিবেদন তৈরি করে। ওশির চেয়ারপারসন সাকি রিজওয়ানা প্রতিবেদন তুলে ধরেন। এ সময় ওশির ভাইস চেয়ারম্যান ড. এসএম মোর্শেদ, তাজরীন ফ্যাশনসের অগ্নিকাণ্ডে আহত শ্রমিক নাছিমা বেগম ও নির্মাণশিল্পে দুর্ঘটনায় আহত মো. আলতাফ মাহমুদ বক্তব্য রাখেন।

মূল বক্তব্যে সাকি রিজওয়ানা বলেন, ২০১৬ সালে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে মোট এক হাজার ২৪০ জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৫৪৪ জন। নিহত শ্রমিকদের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক খাতে ৩৫৯ জন এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে ৮৮১ জন। এছাড়া ট্যাম্পাকো দুর্ঘটনায় নিখোঁজ তিনজন শ্রমিকের এখনও কোনো সন্ধান মেলেনি।

খাত হিসেবে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে পরিহবন খাতে ৪৮৬ জনের। এছাড়া নির্মাণ খাতে ১৪৭ জন, পোশাকশিল্পে ৮৮। ৫৫ জনের বজ পাতে মৃত্যুসহ কৃষি খাতে ৮৭, দিনমজুর ৬৯, ট্যাম্পাকো দুর্ঘটনায় ৪৭, গৃহকর্মী ৩৪, জাহাজ ভাঙা শিল্প শ্রমিক ২৩ ও মৎস্যচাষি ৪৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া আমিনবাজার স্যানিটারি ল্যান্ডফিলে দুজন ভাঙারি সংগ্রাহকের মৃত্যু হয়েছে। অন্যান্য খাতে আরও ১২৩ জন মারা গেছে।

প্রতিবেদনে কর্মস্থলে হতাহতের কারণ হিসেবে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়া, অগিকাণ্ড, ভবন বা স্থাপনা থেকে পড়ে যাওয়া, বজ পাত, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ, সহিংসতা, গৃহশ্রমিকদের শারীরিক নির্যাতন, দেয়াল-ভবন ধস ও ভূমিধসের কথা বলা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে অনুষ্ঠানে বলা হয়, পোশাক খাতের অবস্থা কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে কোনো সচেতনতা নেই। এদিকে গৃহকর্মী হিসেবে নিহতদের মধ্যে অধিকাংশই নারী।

ওশির ভাইস চেয়ারম্যান ড. এসএম মোর্শেদ বলেন, ‘সারা বিশ্বেই কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বৈশ্বিক হিসাবমতে প্রতি ১৫ সেকেন্ডে একজন শ্রমিক মারা যান এবং প্রতি ১৫ সেকেন্ডে ১৫৩ জন শ্রমিক দুর্ঘটনার শিকার হয়। বিশ্বে দৈনিক মৃত্যু হয় ছয় হাজার ৩০০ শ্রমিকের। বার্ষিক নিহতের সংখ্যা ২০ লাখ ৩০ হাজার। শ্রমিক মৃত্যুর কারণে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি ৪ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’

এ সময় তাজরীন ফ্যাশনসের আহত শ্রমিক নাছিমা বেগম জানান, তিনি দুর্ঘটনাকবলিত ভবনের চারতলায় কাজ করতেন। সেখান থেকে তিনতলায় নেমে এসে জানালা ভেঙে লাফিয়ে পড়েন নিচে। এতে তার বুকে ও মাথায় আঘাত লাগে। হাত ভেঙে যায়। কিন্তু সরকারিভাবে তিনি কোনো আর্থিক সহায়তা পাননি বলে অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, মাত্র ১৯ জন শ্রমিকের নামে বিমা করা ছিল। বাকিরা আর্থিক সহায়তা পাননি।

ওশির পক্ষ থেকে বলা হয়, সরকার বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে হাসপাতাল স্থাপিত হয়েছে। শ্রম মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন স্থাপিত হয়েছে। সেখান থেকে কয়েকজনকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। তদন্ত শুরু হয়েছে। কিন্তু এসব উদ্যোগ যথেষ্ট নয়। ২০১৩ সালে যে কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার নীতিমালা গৃহীত হয়েছে, তা কেউ জানে না। চার বছরেও সরকার এটাকে পরিচিত করতে পারেনি। মালিকদের এ বিষয়ে সচেতন করা জরুরি।