দেশের প্রথম কাচ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান উসমানিয়া গ্লাস শিট ফ্যাক্টরি লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে না পারায় বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে আছে। অথচ প্রতিষ্ঠানটির ছয় দশকের গৌরবের ইতিহাস রয়েছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনায় নীতিনির্ধারকদের উদাসীনতা, অদক্ষ ব্যবস্থাপনা, সমস্যা ও সংকট নিয়ে তিন পর্বের আয়োজনে আজ প্রকাশিত হলো শেষ পর্ব
সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত উসমানিয়া গ্লাস শিট ফ্যাক্টরি লিমিটেড। দেশে কাচশিল্পের প্রথম প্রতিষ্ঠান। লোকসান কাটাতে বছর দুয়েক আগে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির কনটেইনার গ্লাস প্ল্যান্ট, অর্থাৎ আধুনিক একটি ইউনিটের পরিকল্পনা হাতে নেয়। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে মন্ত্রণালয় উসমানিয়ার নতুন প্রকল্পতে সাড়া দিচ্ছে না। ফলে প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখবে না, এমন আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।
উসমানিয়া গ্লাস শিট ফ্যাক্টরি লিমিটেড সূত্রে জানা যায়, ১৯৫৯ সাল বাণিজ্যিকভাবে যাত্রা শুরু করা প্রতিষ্ঠানটি এখন পুরোনো প্রযুক্তিপূর্ণ জরাজীর্ণ প্রতিষ্ঠান। এসব পুরোনো যন্ত্রপাতি দ্বারা শুধু সাদা রঙের গ্লাস শিট উৎপাদন করে উসমানিয়া।
লোকসান কাটাতে বছর দুয়েক আগে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির কনটেইনার গ্লাস প্ল্যান্ট অর্থাৎ আধুনিক একটি ইউনিটের স্থাপনের পরিকল্পনা হাতে নেয়। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানও নিয়োগ করা হয়। আর পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘মার্কেট স্টাডি এবং ইকোনমিক ফিজিবিলিটি স্টাডি’ শীর্ষক খসড়া প্রতিবেদন জমা দেয়। কোম্পানিটির যাচাই-বাছাই কমিটি মূল্যায়ন করে বোর্ড সভায় উপস্থাপন করে। আর বোর্ড মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের জন্য পাঠায়। কিন্তু মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে অনাগ্রহ দেখাচ্ছে। চলমান আর্থিক সংকটের কারণে মন্ত্রণালয় উসমানিয়ার নতুন প্রকল্পতে সাড়া দিচ্ছে না। ফলে প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখবে নাÑএমন আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।
একজন কর্মকর্তা বলেন, দেশে বার্ষিক কাচের চাহিদা ২৫ কোটি বর্গফুট। আর সব গ্লাস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা রয়েছে ৩২ কোটি বর্গফুট। যদিও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর আধুনিক মেশিনগুলোয় খরচ কম, উৎপাদন বেশি, তাই তারা লাভে থাকে। উসমানিয়া গ্লাস শিটের মেশিনগুলো অতিরিক্ত পুরোনো হয়ে পড়েছে। জরাজীর্ণ যন্ত্রপাতি দ্বারা গ্লাস শিট উৎপাদন, বাজারের অসম প্রতিযোগিতা, কাঁচামাল ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধি, বিক্রয় কমিশন বৃদ্ধি এবং গ্লাসের চাহিদা কমে যাওয়ায় উসমানিয়া লোকসানে আছে। এখন সরকার নগদ অর্থ এবং নতুন ও উন্নত প্রযুক্তির মেশিনারিজ ইনস্টল (স্থাপন) না করলে কোম্পানিটির পক্ষে ঘুরে দাঁড়ানো অসম্ভব হয়ে পড়বে। কিন্তু তারল্য সংকট কাটাতে না পারলে নতুন ও উন্নত প্রযুক্তির মেশিনারিজ ইনস্টল অসম্ভব। এতে কোম্পানির ভবিষ্যতে ব্যবসা পরিচালনা করার সক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ আছে।
উসমানিয়ার কোম্পানি সচিব আবদুল মজিদ বলেন, কনটেইনার গ্লাস প্ল্যান্ট স্থাপনের পরিকল্পনা বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এখন এটা বাস্তবায়ন করার মতো পরিস্থিতি নেই।
অপরদিকে উসমানিয়া গ্লাস শিট ফ্যাক্টরি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুল ইসলাম বলেন, বছরে কয়েক আগে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির কনটেইনার গ্লাস প্ল্যান্ট অর্থাৎ আধুনিক একটি ইউনিটের স্থাপনের পরিকল্পনা নেয়া হয়। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানও নিয়োগ করা হয়। আর পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘মার্কেট স্টাডি এবং ইকোনমিক ফিজিবিলিটি স্টাডি’ শীর্ষক খসড়া প্রতিবেদন জমা দেয় এবং যাচাই-বাছাই কমিটি মূল্যায়ন করে বোর্ড সভায় উপস্থাপন করে, যা পরে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় মন্ত্রণালয় আগ্রহ দেখাচ্ছে না। এছাড়া দেশে চলমান সংকটের এ অবস্থায় নতুন প্রকল্প নিয়ে চিন্তা করার সুযোগও নেই।