কভিড যাই-যাই করেও পুরোপুরি চলে যাচ্ছে না, বরং নিয়মিত রূপ বদল করে যেন থাকতে চাইছে। আমরা আগেই ভাইরাসের নতুন ধরন অমিক্রন দেখেছিলাম। এখন সেই অমিক্রনের উপশাখা হিসেবে চীনে গত বছরের অক্টোবরে দেখা দিয়েছে বিএফ.৭ নামের নতুন ভেরিয়েন্ট (উপধরন)। সার্সভাইরাসের থেকে এই নতুন ভেরিয়েন্টের ‘নিউট্রিলাইজেশন রেজিস্ট্যান্ট’ ক্ষমতা প্রায় সাড়ে চারগুণ বেশি। যুক্তরাষ্ট্রে পাঁচ শতাংশ এমন নতুন ধরনের খোঁজ মিলেছে।
কয়েক দিন আগে বাংলাদেশে একজন চীনা নাগরিকের শরীরে বিএফ.৭ উপধরন শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে সরকার সতর্ক অবস্থানে রয়েছে, যদিও দেশে পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক রয়েছে। তবে অনেক দেশ এরই মধ্যে নানা ধরনের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
আমাদের দেশে শীতের এই সময়ে জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্টের রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়ে যায়। হাঁপানি, সিওপিডি (ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ), নিউমোনিয়া ও ফ্লু-জাতীয় রোগের প্রকোপও বাড়ে। এসব রোগের উপসর্গ অনেক সময় করোনার সঙ্গে কিছুটা মিলে যেতে পারে। সেজন্য এ ধরনের উপসর্গ থাকলে এখন সতর্ক হতে হবে।
জ্বর, গলাব্যথা, কাশি বা শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ দেখা দিলে উচিত হবে কভিড পরীক্ষা করানো এবং নিজেকে অন্যদের কাছ থেকে আলাদা করে ফেলা। কারণ ধারণা করা হচ্ছে, বিএফ.৭ উপধরন আগের ধরনগুলোর চেয়ে অনেক বেশি সংক্রামক।
মাস্ক পরে বাইরে বেরোনো, হাত ধোয়া বা স্যানিটাইজ করা, ভিড় এড়িয়ে চলাÑএসব আমরা এত দিনে প্রায় ভুলে গেছি। কিন্তু মনে রাখবেন, এগুলো স্বাস্থ্যসম্মত অভ্যাস। এই অভ্যাস থাকলে শুধু করোনা নয়, যেকোনো ভাইরাসঘটিত রোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। বিশেষ করে বয়স্ক ও ক্রনিক রোগে যারা আক্রান্ত, তাদের আবার এসব স্বাস্থ্যবিধি মনে করিয়ে দেয়া দরকার।
শীত এলে আমাদের উৎসব, পার্বণ, অনুষ্ঠান বা নিমন্ত্রণ বেড়ে যায়। ভিড়ে যেতে সাবধান হতে হবে। কভিড সংক্রমণ রোধে দেশে এখন টিকার চতুর্থ ডোজ প্রয়োগ শুরু হয়েছে। চতুর্থ ডোজ টিকা দেয়ার ক্ষেত্রে প্রথম ধাপে সম্মুখ সারির যোদ্ধা, ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তি ও অন্তঃসত্ত্বা নারীদের দেয়া হচ্ছে। সুযোগ পেলে টিকা নেয়া উচিত হবে।
মনে রাখবেন, কভিড চলে যায়নি এবং নতুন নতুন উপধরনে প্রকাশিত হচ্ছে। এর প্রকাশভঙ্গি ও বিস্তার কেমন হবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তাই সতর্ক থাকার বিকল্প নেই।
অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আজিজুর রহমান
বক্ষব্যাধি ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ