নিজস্ব প্রতিবেদক: করনেট আরও বিস্তৃত করতে ভ্যাটের পরিধি ও ইনকাম ট্যাক্সে নজর দিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। দুই দিনব্যাপী রাজস্ব সম্মেলনের প্রথম দিন গতকাল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘জাতীয় উন্নয়নে ভ্যাটের ভূমিকা: বর্তমান ও ভবিষ্যৎ’-শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। বিশেষ অতিথি ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ আমিন উদ্দিন। ভ্যাটের ওপর পৃথক প্রবদ্ধ উপস্থাপন করেন কমিশনার শওকত আলী সাদী ও সৈয়দ মুসফিকুর রহমান।
সম্মেলনস্থলে ভ্যাট, কাস্টমস ও আয়কর খাতের বিভিন্ন সেবা জানান দিতে পৃথক তিনটি স্টল করা হয়েছে। এছাড়া আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমস খাতের দুর্লভ বস্তু, তথ্য নিয়ে রাজস্ব মিউজিয়াম করা
হয়েছে। অনুষ্ঠানস্থলে জানুয়ারির ইএফডিএমএস থেকে ইস্যু করা চালানের ভিত্তিতে লটারি অনুষ্ঠিত হয়।
রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে কিছু ব্যাপারে আমরা সমন্বয়ের কথা বলি। এটা ভালোর জন্যই। আপনাদের আমাদের মিলিত চেষ্টায় সেটা করতে চাই। ২০২৬ সালে কাস্টমস ডিউটির ওপর চাপ পড়বে। সমস্যা আসতে শুরু করবে। তখন টাকাটা তেমন আসবে না। আপনাদের ভ্যাটের পরিধি ও ইনকাম ট্যাক্সে নজর দিতে হবে। এর নেটটা বিস্তৃত করতে হবে। এখন আয়কর নিতে গেলেই মানুষের অপছন্দের কারণ হয়ে উঠবেন আপনারা। ট্যাক্স দিতে চায় না কেউ, সেখানেও আপনাদের পজিটিভ ভূমিকা নিতে হবে।
তিনি বলেন, অনেকে কিছুই দেখেন না। এই যে বাংলাদেশ এগিয়েছে। এত কিছু হচ্ছে চারদিকে দৃশ্যমান, যা আমরা দেখি সেটা তো সত্য। সেই জিনিসটা অনেকে স্বীকার করতে চায় না। দৃশ্যমান যে উন্নতি হয়েছে সেটা যদি না হতো, তাহলে ২০২৬ সালে আমরা গ্র্যাজুয়েশনের সুযোগটা পেতাম? সত্যটা হলো আমাদের অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। কিন্তু দেখেও যারা না দেখতে চান, তাদের তো কিছু দেখানো সম্ভব নয়।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নতুন ভবনের কথা তুলে ধরে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, সারাদেশেই আপনাদের নতুন অফিস করা দরকার। আপনারা তো অনেক টাকা বাঁচিয়েছেন। ৪৫১ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল সেখান থেকে ৪১২ কোটি টাকায় ভবন নির্মাণ করেছেন। প্রায় ৪০ কোটি টাকা বাঁচিয়েছেন। সাধারণত এটা দেখা যায় না। দেখা যায়, শেষের দিকে এসে খালি কাগজ আসে টাকা বাড়ানোর জন্য। এটা অনেক সুন্দর একটা দিক।
তিনি আরও বলেন, আমাদের স্মার্ট বাংলাদেশ দরকার। ডিজিটাল শেষ করে স্মার্টের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে আপনাদের কাজগুলো স্মার্ট হতে হবে। সেজন্য বিভিন্ন প্রক্রিয়ার কথা শুনলাম, বিভিন্ন রকমের অটোমেশনের কথা আসছে। আমি খুব আশাবাদী, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে আপনাদের কাজ আমাদের এগিয়ে নেবে।
অনুষ্ঠানে এফবিসিসিআই’র সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, জেলা, উপজেলা পর্যায়েও ভ্যাট-ট্যাক্সের অফিস করতে হবে। সেখানেও সক্ষম করদাতা রয়েছেন। কারণ যিনি ভ্যাট দিচ্ছেন, তার ওপর চাপ পড়ছে। ইএফডি মেশিন বসানোর কাজ একাধিক প্রতিষ্ঠানকে দেয়া উচিত, না হয় বৈষম্য তৈরি হয়। এনবিআর শক্তিশালী ও ডিজিটালাইজড করতে হবে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। এনবিআরের নীতি ও বাস্তবায়ন শাখা আলাদা হওয়া উচিত। এখনও অনেক প্রতিষ্ঠান ভ্যাট আওতার বাইরে রয়েছে। তাদের আওতায় আনা উচিত। দেশে ইউনিয়ন থেকে শুরু করে সিটি করপোরেশন পর্যন্ত ছয় কোটি হোল্ডিং নাম্বার রয়েছে। এনবিআরকে উদ্যোগ নিয়ে এসব হোল্ডিং নাম্বার ধরে ধরে আদমশুমারির মতো বাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে যেতে হবে। এতে করদাতা বাড়বে।
অনুষ্ঠানে ফরিন চেম্বারের সভাপতি নাসির এজাজ বিজয়, অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ এ এম আমিন উদ্দিন, এনবিআরের সাবেক সদস্য গোলাম কিবরিয়া বক্তব্য দেন।