মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: বিশ্ব জুড়ে চলছে কভিট-১৯ করোনাভাইরাসের তাণ্ডব। এখন পর্যন্ত পৃথিবীর প্রায় ২০০টি দেশে আঘাত হেনেছে এ প্রাণঘাতী ভাইরাস। ভাইরাসটির কবলে পড়েছে বাংলাদেশেও, যার কারণে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও চলছে লকডাউন। এর ফলে বন্ধ রয়েছে সব ধরনের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এরই ধারাবাহিকতায় বন্ধ রয়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো। এর বৈরী প্রভাবে লভ্যাংশ কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীসহ সংশ্লিষ্ট সবাই।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, অফিশিয়াল কার্যক্রম বন্ধ থাকায় সব প্রতিষ্ঠানেরই উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এ কারণে বছর শেষে এসব কোম্পানির আয় কমে যাওয়ার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। কারণ উৎপাদনের সঙ্গে ব্যবসা ও আয়-ব্যয়ের সম্পর্ক রয়েছে। আর আয় কমে গেলে স্বাভাবিকভাবেই এর প্রভাব পড়বে প্রতিষ্ঠানগুলোর লভ্যাংশ বিতরণে।
তাদের মতে, এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়বে রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানগুলো। কারণ করোনাভাইরাসের জন্য উৎপাদন বন্ধ থাকায় তারা পণ্য রপ্তানি করতে পারছে না। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়তে পারে পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো। কারণ এ খাত থেকেই বাংলাদেশ কমবেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে। বর্তমানে পুঁজিবাজারে বস্ত্র খাতের ৫৬টি প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্ত রয়েছে, যার সিংহভাগই রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান। রপ্তানি করতে না পারলে তাদের ব্যবসা থমকে যায়।
এদিকে বস্ত্র খাত ছাড়াও বিমান, পর্যটন, হোটেল ও সেবা খাতের কোম্পানিগুলোতে করোনাভাইরাসের বৈরী প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। চীনে করোনা শনাক্ত হওয়ার পর থেকেই এ ধরনের কোম্পানিগুলোতে প্রভাব পড়তে দেখা গেছে। ভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর ইংল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কাসহ সব দেশেরই এ ধরনের কোম্পানির শেয়ারদর কমে যেতে দেখা যায়।
বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে ডিএসইর পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, করোনাভাইরাসের কবলে পড়ে বিশ্বের প্রায় সব দেশই নাকাল। আমাদের দেশেও এর প্রভাব পড়েছে। এটা একটি প্রাকৃতিক বিপর্যয়। তাই এখানে কারও কিছু করার নেই। করোনা পরিস্থিতির কারণে যদি লকডাউন দীর্ঘমেয়াদি হয় তাহলে কোম্পানিগুলোর ব্যবসায় এর প্রভাব পড়বে। সেক্ষেত্রে লভ্যাংশ বিতরণে এর প্রভাব পড়তে পারে। তবে আমি মনে করছি, এ পরিস্থিতি শিগগির কেটে যাবে।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বলেন, দীর্ঘদিন থেকে পুঁজিবাজার পরিস্থিতি ভালো না থাকায় তাদের অবস্থা এমনিতেই নাজুক। পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে কারোনার কারণে পুঁজিবাজারে লেনদেন বন্ধ হয়ে যাওয়ায়। এরপর যদি লভ্যাংশ কমে যায়, তাহলে আমাদের পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে যোগাযোগ করা হলে সিনথিয়া ব্রোকারেজ হাউসের বিনিয়োগকারী মো. আবু বকর বলেন, পোর্টফোলিওতে থাকা শেয়ারগুলোয় এমনিতেই অনেক লোকসান রয়েছে। তার ওপর বাজার বন্ধ থাকায় আমরা আরও খারাপ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এরপর যদি লভ্যাংশ কমে যায়, তাহলে আমাদের পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।
গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার পর দেশজুড়ে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা হয়। এ সতর্কতার আওতায় বর্তমানে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো বন্ধ রয়েছে দেশের পুঁজিবাজার। এতে দুশ্চিন্তা বাড়ছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের।