কোনো ব্যক্তি কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের আগে ওই প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিষয় ভেবে থাকেন। এর অন্যতম হলো কর্মপরিবেশ। মনের মতো পরিবেশ না হলে কাজে মনোযোগ আসে না। পরিবেশবান্ধব কর্মপরিবেশ তৈরি না করে ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে উপযুক্ত ফল আশা করা সমীচীনও নয়।
গতকাল সোমবার শেয়ার বিজে ‘কর্মপরিবেশ উন্নত করতে উদ্যোক্তাদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়। প্রধানমন্ত্রী শ্রমিক কল্যাণ ও কর্মক্ষেত্রে উন্নত পরিবেশ নিশ্চিত করতে দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, উন্নয়ন সহযোগীরা অতীতের মতো ভবিষ্যতেও দক্ষতা উন্নয়ন, নিয়োগযোগ্যতা বৃদ্ধি, উন্নত কর্মপরিবেশ সৃষ্টিতে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবেন।
অভিযোগ রয়েছে, দেশের সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানের কর্মপরিবেশ সহায়ক নয়। কর্মক্ষেত্র শ্রমিকবান্ধব করার জন্য বিভিন্ন মহল থেকে প্রায়ই দাবি ওঠে। বাংলাদেশে তৈরি পোশাক খাতে শ্রম তুলনামূলক সস্তা। দেশে বেকারের সংখ্যা বেশি হওয়ায় সহজে কম বেতনের শ্রমিক পাওয়া যায়। অথচ সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয় তৈরি পোশাক রফতানি করে। এ খাতে দেশের বৃহৎ একটি জনগোষ্ঠী কাজ করে। তার মধ্যে নারী শ্রমিকই বেশি। এদের সিংহভাগ আবার আসে গ্রাম থেকে।
রানা প্লাজা ধসের পর কর্মপরিবেশ নিয়ে বেশ সমালোচনা হয়। দেখা যায়, বেশিরভাগ কারখানায় স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নেই। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে নেই অগ্নিনিরোধক যন্ত্র, তা ব্যবহারের
প্রশিক্ষণ, কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য স্বাস্থ্যকর আবাসন, নেই নিজস্ব পরিবহনব্যবস্থা, উন্নত মানের চিকিৎসাসেবাও। অভিযোগ, অনেক কারখানায় ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশুশ্রমিক নিয়োগ করা হয় এখনও। যেসব দেশ বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি
করে, তারা কর্মপরিবেশ মানসম্মত করার জন্য সরকারের
ওপর চাপ দেন। বিশেষ করে, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর সংগঠন কর্মপরিবেশ মানসম্পন্ন করার দাবি জানান। এজন্য সরকারও বেশকিছু পদক্ষেপ নেয়।
উল্লেখ্য, শ্রমবাজারে প্রতিবছর যে বিপুলসংখ্যক মানুষ প্রবেশ করছে, তাদের কর্মসংস্থানের জন্য প্রয়োজন নতুন শিল্পকারখানা ও সেবা খাতের প্রসার। বর্তমানে জিডিপির প্রায় ৫৪ শতাংশ আসে সেবা খাত থেকে। তাই এ খাত উন্নয়নেরও কোনো বিকল্প নেই।
শিল্পপতিদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের কর্মপরিবেশ উন্নত করতে হবে। শ্রম অধিকার নিশ্চিতকরণ, অধিকসংখ্যক নারী ও প্রতিবন্ধী নিয়োগের পাশাপাশি তাদের কর্মসহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করাও উদ্যোক্তার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।
কোনো দেশের উন্নয়নের জন্য দক্ষ মানবসম্পদের বিকল্প নেই। দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। আর সম্পর্ক উন্নয়ন করতে হবে শ্রমিক-মালিকের। বহুজাতিক করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মপরিবেশ উন্নত হয়ে থাকে। ওই ধরনের প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে তাই আগ্রহী অনেকে। ওইসব প্রতিষ্ঠান বেশ মুনাফাও করছে বলে জানা যায়। শুধু বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের কর্মপরিবেশ উন্নত হলেই হবে না, সব প্রতিষ্ঠানের কর্মপরিবেশ উন্নয়ন করবেন উদ্যোক্তারা এটাই কাম্য।